একাগ্র: ডার্বির প্রস্তুতিতে মগ্ন লাল-হলুদের ফক্স। ফাইল চিত্র।
লাল-হলুদ রক্ষণের প্রধান ভরসা তিনি। ১৯ ফেব্রুয়ারির ফিরতি ডার্বিতে তাঁর উপরেই সবুজ-মেরুনের ‘গোল মেশিন’ রয় কৃষ্ণকে নিষ্ক্রিয় করার মূল দায়িত্ব থাকবে। কতটা তৈরি এসসি ইস্টবেঙ্গলের অধিনায়ক? বুধবার দুপুরে গোয়ার টিম হোটেল থেকে ফোনে আনন্দবাজার-কে সাক্ষাৎকার দিলেন ইপিএলে বার্নলি, সাউদাম্পটনের হয়ে খেলাড্যানিয়েল ফক্স।
ফিরতি মহারণের প্রস্তুতি: এই ম্যাচের গুরুত্ব সম্পর্কে আমরা সকলেই ওয়াকিবহাল। তাই আমাদের প্রস্তুতি তুঙ্গে। এটিকে-মোহনবাগানের বিরুদ্ধে প্রথম পর্বের ডার্বির আগে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিতে পারিনি। পুরো দলটাই নতুন ছিল। তার উপরে করোনার কারণে তিন সপ্তাহ আমরা কার্যত অনুশীলন না করে টিম হোটেলে নিভৃতবাসে ছিলাম। এই পরিস্থিতিতে ডার্বি দিয়েই আইএসএলে যাত্রা শুরু করেছিলাম। তবুও আমরা দারুণ লড়াই করেছিলাম। সব ঠিক থাকলে ০-২ হারতাম না। হয়তো জিততাম। এখন পরিস্থিতি অনেক বদলে গিয়েছে। জামশেদপুর এফসি-কে হারিয়েছি। হায়দরাবাদ এফসি-র বিরুদ্ধে জিততে না পারাটা দুর্ভাগ্যজনক। এই পারফরম্যান্স আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে। তবে দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে খেলা অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক। আশা করছি, ওঁরা টিভিতে খেলা দেখবেন, আমাদের জন্য গলা ফাটাবেন।
কৃষ্ণ বনাম ফক্স: আইএসএলে এই মরসুমে অন্যতম সেরা ফুটবলার যে রয় কৃষ্ণ, তা নিয়ে কারও কোনও সন্দেহ নেই। তবে স্কটল্যান্ড ও ইংল্যান্ডের লিগে আমি এর আগে অনেক ভয়ঙ্কর স্ট্রাইকারদের বিরুদ্ধে খেলেছি। কৃষ্ণ দুর্দান্ত ফর্মে থাকলেও চিন্তিত নই। চ্যালেঞ্জ নিতে আমি তৈরি। আশা করছি, কৃষ্ণও একই ভাবে প্রস্তুত হচ্ছে। আমি নিজে কী করলাম তা গুরুত্বপূর্ণ নয়। ডার্বি জেতাটাই আসল। আমরা যদি পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলতে পারি, কৃষ্ণকে আটকাতে সমস্যা হবে না।
আতঙ্ক সবুজ-মেরুন শিবিরেই: ভুলে যাবেন না আমাদের দলের আক্রমণভাগ দুর্দান্ত। অ্যান্টনি পিলকিংটন, ব্রাইট এনোবাখারে, জা মাগোমা, মাঠি স্টেনম্যানের মতো ফুটবলার রয়েছে। ডার্বিতে ওরাই বরং আমাদের নিয়ে আতঙ্কে থাকবে।
রেফারিং নিয়ে উদ্বেগ: রেফারিদের নিয়ন্ত্রণ করা তো আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে রেফারিদের অনেক ভুল সিদ্ধান্তের মূল্য আমাদের দিতে হয়েছে। প্লে-অফে যোগ্যতা অর্জনের সম্ভাবনাও শেষ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু কিছু করার নেই। ম্যাচের মধ্যে রেফারির সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হবেই।
প্রধান কোচের না থাকা: নির্বাসিত থাকায় রবি ফাওলারকে ছাড়াই আমরা প্রথম পর্বে বেঙ্গালুরু এফসি-কে হারিয়েছিলাম। জিতেছি জামশেদপুর এফসি-র বিরুদ্ধেও। ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি, সব ঠিক থাকলে হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে জয় অধরা থাকত না। তবে ম্যাচের সময় রিজার্ভ বেঞ্চে বসতে না পারলেও গ্যালারি থেকেই ফাওলার আমাদের সর্বক্ষণ উজ্জীবিত করে যান। ডার্বি জিতে কোচকেই উৎসর্গ করতে চাই।
আইএসএলে খেলার সিদ্ধান্ত: এভার্টন অ্যাকাডেমি থেকে আমার উত্থান। ২০০৪ সালে সিনিয়র দলে সই করলেও খেলার সুযোগ না পেয়ে চলে গিয়েছিলাম স্কটল্যান্ডের লিগে খেলতে। ছ’মাসের মধ্যেই ইপিএলে খেলার সুযোগ পাই বার্নলির হয়ে। তার পরে যোগ দিই সাউদাম্পটনে। আইএসএলে খেলার সিদ্ধান্ত নিই ফাওলারের ডাকে। লাল-হলুদ সমর্থকদের আবেগ দেখে আমি অভিভূত। ওদের জন্যই যে কোনও মূল্যেজিততে চাই।
প্রিয় ফুটবলার: শৈশবে রবি ফাওলার ছিলেন আমার আদর্শ। এই মুহূর্তে রিয়াল মাদ্রিদের অধিনায়ক সের্খিয়ো র্যামোস আমার প্রিয় ফুটবলার।
অনুপ্রেরণা পরিবার: নিজেকে চাপমুক্ত রাখছি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে। ওরাই আমাকে ভাল খেলার জন্য অনুপ্রাণিত করে। ওদের জন্যই আমি ফুটবলার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছি।
অঙ্ক বদলে দেওয়ার বার্তা: আইএসএলে প্লে-অফ যোগ্যতা অর্জনের সম্ভাবনা আমাদের শেষ হয়ে গিয়েছে। ডার্বিতে তাই চাপমুক্ত হয়ে খেলতে পারব। তবে পয়েন্ট টেবলে শীর্ষ স্থানে শেষ পর্যন্ত কারা থাকবে তা আমাদের উপরে অনেকটাই নির্ভর করবে। আমরা ডার্বি জিতলে কিন্তু ফের মুম্বই সিটি এফসি পয়েন্ট টেবলে এক নম্বর হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবে।