কলকাতা সফরে আসা পেলের জার্সি নম্বর এ বার ৩৮

আটত্রিশ বছর আগে শেষ যখন এসেছিলেন তখনও কসমসের ফুটবলার। অবসর নেননি। তাঁর সঙ্গে এসেছিলেন টিমের পুষ্টিবিদ বা ডায়েটেশিয়ান ১৯৭৭-র সেই সেপ্টেম্বরে ফুটবলসম্রাটের পেশাদার জীবন প্রায় অস্তাচলে। তবু তাঁর জন্য ছিল হরেক রকম সতর্কতা। খাদ্যাভাসে ছিল বাঁধন।

Advertisement

গৌতম ভট্টাচার্য ও রতন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০১৫ ০৪:৩৮
Share:

হোটেলে স্বাগত জানালেন চুনী গোস্বামী। ছবি: উৎপল সরকার

আটত্রিশ বছর আগে শেষ যখন এসেছিলেন তখনও কসমসের ফুটবলার। অবসর নেননি। তাঁর সঙ্গে এসেছিলেন টিমের পুষ্টিবিদ বা ডায়েটেশিয়ান।

Advertisement

১৯৭৭-র সেই সেপ্টেম্বরে ফুটবলসম্রাটের পেশাদার জীবন প্রায় অস্তাচলে। তবু তাঁর জন্য ছিল হরেক রকম সতর্কতা। খাদ্যাভাসে ছিল বাঁধন।

কিন্তু এখন তো তিনি দিকশূন্যপুরে হারিয়ে যাওয়া পঁচাত্তর। তিন-তিনটে অস্ত্রোপচার হয়েছে। শেষটা মাত্র কয়েক মাস আগে। স্বাভাবিক কারণেই সংগঠকেরা তাঁর সঙ্গে আসা দেহরক্ষীর সঙ্গে কথা বলে দক্ষিণ কলকাতার যে হোটেলের তিনি বাসিন্দা তাঁর শেফ-কে বলে রেখেছিলেন, সহজপাচ্য কিছু খাবারের কথা। পর্তুগিজ বা স্প্যানিশ অতিথিরা যেমন খাবার পছন্দ করেন মশলা কম, গ্রিলড বেশি। কিন্তু তর্কযোগ্য ভাবে বিশ্বের সর্বকালের সেরা ফুটবলার ডিনারে চাইলেন স্থানীয় সবচেয়ে বিখ্যাত মাছ। ইলিশ মাছের নাম তাঁকে বলা হল। বলা হল এর আকর্ষণ আর বিকর্ষণ দুটোর কথাই। বলা হল ইলিশের রান্না বেশি মশলাদার হয়ে যেতে পারে। তার চেয়ে চিংড়ি ভাল। কিন্তু তিনি পেলে, দুটোই চেখে দেখতে চান।

Advertisement

অগত্যা মঙ্গলবার সল্টলেক স্টেডিয়ামে এটিকে-কেরল ম্যাচের সময় পেলে কোথায় বসবেন তা রেকি করতে গিয়ে সংগঠকরা আবিষ্কার করলেন, নিরাপত্তার চেয়েও কঠিন সমস্যা এখন ইলিশ। কোথায় পাওয়া যাবে ভাল বোনলেস ইলিশ!

সাও পাওলো থেকে দুবাই হয়ে কলকাতা। দু’দফায় কুড়ি ঘণ্টারও বেশি বিমানে থাকা। ভাবা হয়েছিল তীব্র জেটল্যাগ এবং এত লম্বা ফ্লাইটের অবসন্নতা জীবনের প্ল্যাটিনাম জয়ন্তী বছরে অবশ্যই আক্রমণ করবে পেলেকে।

কিন্তু কলকাতায় পা দেওয়ামাত্র তাঁকে এক ঝলক দেখে মনে হল হাতে একটা ওয়াকিং স্টিক আছে ঠিকই। কিন্তু মনের ফূর্তি আর মানুষের সঙ্গে মেশার ইচ্ছে দীর্ঘ ফ্লাইটেও আক্রান্ত হয়নি।

পেলের প্রধান দেহরক্ষী ঘানাজাত বেন বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে আনন্দবাজারকে বলছিলেন, ‘‘উনি জনতার সঙ্গে আগের মতোই মিশতে চান। কাছে যেতে চান। কিন্তু মানুষকেও মাথায় রাখতে হবে ওঁর বয়স এখন পঁচাত্তর।’’

ফুটবলসম্রাটকে দেখার জন্য অভিবাসন দফতরে ভিড় উপচে পড়বে। ইমিগ্রেশন অফিসারের ঘাড়ের ওপর দিয়ে সিআইএসএফের কর্মীরা কাউন্টারের উপরে উঠে যাবেন। সেলফি আর স্মার্ট ফোনের ঝলমলে আলো ভাসিয়ে দেবে বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ এলাকা— স্বাভাবিক। কিন্তু পেলে যখন ভিআইপি লাউঞ্জ পৌঁছনোর জন্য গলফ কার্টে উঠে পড়লেন তখন মনে হল সময় কী ভয়ঙ্কর জিনিস যা সুপার ফিটনেসকেও এক দিন নির্মম ভাবে পিষে ফেলে!

শহরে অভ্যর্থনার প্রথম মুখ হিসেবে এরোব্রিজের ঠিক মুখে দাঁড়িয়ে রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। কিন্তু উত্তেজনায় অভ্যর্থনার প্রাক্কালে ফিরহাদ হঠাৎ আবিষ্কার করলেন— পেলের জন্য উত্তরীয়টাই আনা হয়নি। বিমানবন্দরের ভিতরে এখন ফুল আনা নিষিদ্ধ। ফলে কথোপকথনেই এগোল অভ্যর্থনার আবেগ। ‘‘আপনি যখন আটত্রিশ বছর আগে ইডেনে খেলেছিলেন তখন আমি কলেজের ছাত্র। ম্যাচটা দেখতে গিয়েছিলাম।’’ পেলে শুনে হাসলেন, তার পর বললেন, ‘‘ইয়েস ৩৮।’’

৩৮ সংখ্যাটা পেলের মুখে এতবার এল যে, ফুটবলের কলকাতা এখনও যেমন তাঁর পুরনো স্মৃতির রোমন্থনে নস্ট্যালজিক তেমনই মনে হল তিনিও সাতাত্তরের স্মৃতিমেদুরতায় আচ্ছন্ন। না হলে তাঁকে নিয়ে সাতগাড়ির কনভয় যখন যুবভারতীর পাশ দিয়ে যাচ্ছে তখন ইডেনের কথা কেন তুলবেন পেলে? তাঁর সফরের মুখ্য সংগঠক শতদ্রু দত্ত গাড়িতে বসা পেলেকে সল্টলেক স্টেডিয়াম দেখিয়ে বলছিলেন, ‘‘পরশু এখানেই আপনি ম্যাচ দেখতে আসবেন।’’ পেলে পাল্টা জানতে চাইলেন, ‘‘এখানেই কি আমি খেলেছিলাম?’’ ‘না, সেটা ইডেন’, শুনে ফুটবল-জাদুকর বললেন, ‘‘আমি ইডেন দেখতে চাই।’’ যুবভারতী নিয়ে তাঁর বিশেষ আগ্রহ দেখা গেল না। তখন আবার মনে হল তাঁর জার্সি নম্বর এ বার ১০ নয়। ৩৮।

গাড়িতে দেহরক্ষী বেন, ম্যানেজার পেপিতো, প্রচারসচিব থেরেজা—টিম পেলের সবাই। বিশ্বের যেখানেই যান তিনি সেখানেই থাকে এই টিম। শুধু আসেননি টিম পেলের এক সদস্য— ম্যানেজার আরোথিবা। বেন বলছিলেন, ‘‘সাত বছর আমি ওঁর সঙ্গে আছি। বিশ্বের একশোটা দেশে গিয়েছি। এখনও ওঁকে ঘিরে সর্বত্র যে কী রকম মাদকতা ভাবা যায় না।’’

পেলের কনভয় এগোচ্ছে। পরমা আইল্যান্ডের শেষে এসে হঠাৎ-ই সেখানে ঢুকে পড়ল একটা লাল মারুতি ওমনি। গাড়ির সামনে আর পিছনে বড় করে কাগজ দিয়ে ঠাসা পেলের সরকারি ফটোগ্রাফার। গাড়ি থেকে ছবি তোলাও শুরু হয়ে গেল। নিরাপত্তারক্ষীরা চিৎকার করে উঠলেন, ‘‘পাপারাৎজি, পাপারাৎজি’’। পেলে গুরুত্ব দিলেন না। নিজে খেলার সময় ব্রাজিল টিমকে শক্ত প্রতিপক্ষের মুখে দাঁড়িয়েও যেমন আশ্বস্ত করতেন সেই রকম নির্লিপ্ত ভঙিতে শুধু বললেন, ‘‘রিল্যাক্স। টানেলটা ঠিক করে পেরোন। অ্যাক্সিডেন্ট না হয়।’’ অথচ রিল্যাক্সড ভাব দ্রুত আক্রান্ত হল যখন এক আরোহী বললেন, ‘‘হোয়াইট পেলে জিকো ভারতে আছেন জানেন তো। উনি এখন গোয়ায় কোচিং করাচ্ছেন।’’ মুহূর্তে পেলে যেন চল্লিশ গজের শট নিলেন, ‘‘হোয়াইট পেলে বলে কিছু হয় না। পেলে এক জনই। আর সে ব্ল্যাক।’’

এ বারে কলকাতা সফরে পেলে বোধহয় চান আরও বেশি মানুষের সান্নিধ্য। বারবার জানতে চাইছিলেন রাস্তার দু’ধারে লোক নেই কেন? বলা হল, আপনার নিরাপত্তার কারণে রাস্তা ফাঁকা রাখা হয়েছে। যা শুনে পেলে বললেন, ‘‘না ওদের আমার কাছে আসতে দিও।’’

তখন এক কিলোমিটার দূরের তাজবেঙ্গলে অনেক আগেই সাজ-সাজ রব। হোটেলের তরফে পেলেকে অভ্যর্থনা জানাবেন বলে উপস্থিত ভারতীয় ফুটবলের কিংবদন্তি চুনী গোস্বামী। ফুলের মালা আর চন্দন নিয়ে দাঁড়িয়ে দুই ললনা। আর প্রাক্তন ফুটবলার দীপেন্দু বিশ্বাস।

আটত্রিশ বছর আগে প্রয়াত মোহনবাগান সচিব ধীরেন দে-র নির্দেশে পেলেকে এসকর্ট করে মাঠে নিয়ে গিয়েছিলেন চুনী। সেই মোহনবাগান-কসমস ম্যাচে। ম্যাচ শেষে গ্র্যান্ড হোটেলেও দু’জন দু’জনকে জড়িয়ে ধরেছিলেন। এত বছর পর পেলের মনে থাকার কথা নয়। ছিলও না। চুনীকে নতুন করে আলাপ করিয়ে দেওয়া হল ‘ভারতের পেলে’ হিসেবে। কেউ এক জন ভিড়ের মধ্যে বললেন, ‘‘না না, উনি ওনার সময় এশিয়ার পেলে।’’

দু’বছরের অনুজ পেলের হাতে ফুল দিতেই সেই বিখ্যাত হাসিমুখ নিয়ে তিনি তাকালেন চুনীর দিকে। চুনী বললেন, ‘‘আপনাকে আমাদের শহরে স্বাগত।’’ প্রচণ্ড নিরাপত্তার মধ্যেও পেলে-চুনীর আশেপাশে জনা পঞ্চাশেকের ভিড় জুটে গেল। এক ভদ্রলোক সেই ভিড় থেকে বলতে থাকলেন, ‘‘ওব্রিগার্দো ওব্রিগার্দো’’। পর্তুগিজ ভাষায় যার অর্থ ধন্যবাদ। পেলে ভাবলেন কোনও স্বদেশীয়র দেখা পেয়েছেন। তিনি ও দিকে মন দেওয়ার ফাঁকেই অবশ্য চুনী মনের মধ্যে চেপে রাখা দু’টো প্রশ্ন করে ফেললেন। আচ্ছা, মেসিকে আপনি কোথায় রাখবেন? ‘‘মেসি আর মারাদোনা আমার খুব কাছে থাকবে,’’ উত্তর দিলেন পেলে।

আচ্ছা, আপনার ব্রাজিল টিম সাত গোল খাচ্ছে? কী হল টিমটার? পেলে দাঁড়িয়ে গেলেন। ‘‘ভাল ফুটবলার দরকার। নিড গুড প্লেয়ার্স।’’ মানুষ ততক্ষণে আরও ঘিরে ধরেছে। নিরাপত্তারক্ষীরা তাড়াতাড়ি হোটেলের ঘরে পাঠাতে চাইছেন। কিন্তু ন্যুব্জ পেলে তো পা টেনে টেনে হাঁটছেন। মুখে বড়বড় বয়সের বলিরেখা ভিড় করেছে। কোটরে ঢোকা চোখ দু’টো লাল। ভিড়ের মাঝে কালো কোট পরা শরীরটা দেখে মনে হচ্ছিল সত্তরের সেই বিশ্ব দাপানো মহাতারকা পঁয়তাল্লিশ বছর পর প্রকৃতির ধর্মে সত্যিই বার্ধক্যে উপনীত। হাসিটা কিন্তু অমলিন। আজও কোনও বদল আসেনি।

দেবীপক্ষের সূচনা এবং দ্বিতীয় দিনে পেলের ঠাসা কর্মসূচি। সৌরভের সঙ্গে টক শো থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়া। সাংবাদিক সম্মেলন থেকে চেতলার পুজো উদ্বোধন। স্পনসরদের অনুষ্ঠান। যুবভারতীতে ম্যাচ দেখা থেকে ডিনারে স্মারক বিক্রি। এর পরে তো আবার দিল্লিতে তিন দিন ধরে নানা ফুটবলীয় অনুষ্ঠান রয়েছে। পেলে পারবেন তো এই শরীরে সব সামাল দিতে? এ দিন কলকাতায় তাঁকে দেখে অনেকের মনে এই প্রশ্ন জাগল। পরক্ষণে মনে হল পেলে মানেই তো জাদুকরী।

পেলে যখন শেষ বার শহরে এসেছিলেন তখন বাম জমানা সবে শুরু হয়েছে। ইন্দিরা গাঁধী জীবিত। বার্লিন প্রাচীর অক্ষত। গর্বাচেভ বলে কাউকে পৃথিবী চেনে না। তবু তাঁকে নিয়ে যা উন্মাদনা ছিল, তার অনেকটাই এখনও বহাল। মঙ্গলবার বল পায়ে মাঠে নামবেন না। তবু তাঁকে দেখার টানে ১৩ অক্টোবর যুবভারতীর আইএসএল ম্যাচের সব টিকিট প্রায় শেষ।

ফুটবলপ্রেমীদের চাহিদা থাকলেও ফুটবল কর্তাদের তাঁর কাছ থেকে কিছু পাওয়ার কোনও চাহিদা নেই। তাঁর পরামর্শ নিতে যাওয়া দূরে থাক আইএফএ সচিব উৎপল গঙ্গোপাধ্যায় বললেন, ‘‘আমাদের সঙ্গে পেলের অনুষ্ঠানের কোনও সম্পর্ক নেই। যাওয়ার প্রশ্নই নেই।’’ দিল্লির ফেডারেশন কর্তাদের মনোভাবও তাই।

অথচ আর এগারো দিন পর পেলের পঁচাত্তরতম জন্মদিন। ২৩ অক্টোবর তাঁকে দিয়ে কেক কাটিয়ে সংবর্ধনা দিতে চান ইংল্যান্ডের রানি থেকে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট। তবে টিম পেলে জানাচ্ছে, ব্রাজিলেই তিনি থাকবেন। হয় নিজের পুরনো পাড়া স্যান্টোস। নয়তো দু’ঘন্টা দূরের সাও পাওলো। অস্ট্রেলিয়ায় যেমন ব্র্যাডম্যানের নব্বইতম জন্মদিন ঘিরে তাঁকে নিয়ে নতুন করে গবেষণা শুরু হয়েছিল পেলের পঁচাত্তরতম তাই। তাঁকে নিয়ে আবার নতুন গবেষণা এবং আলোচনা শুরু হয়েছে। এ রকম সময় ফুটবলে সম্পূর্ণ অজ্ঞাতকুলশীল ভারতে হঠাত্ পা রাখতে রাজি হলেন কেন পেলে?

বিমানবন্দর থেকে আসার পথে কলকাতার সঙ্গে তিনি বারবার তুলনা করছিলেন আমাজনের ধারে ব্রাজিলের বৃহত্তম শহর মানাউসের। যেখানে ইংল্যান্ড গত বিশ্বকাপে তাদের ঘাটি গেড়েছিল। কারও কারও শুনে মনে হচ্ছিল, মানাউস না লাগোস কার সঙ্গে কলকাতার বেশি মিল।

পেলে মানাউস আর লাগোসের মধ্যে গুলিয়েছেন কি না সেটা ধর্তব্যের মধ্যে পড়ছে না। একটা কথা বেশ বোঝা গেল, আটত্রিশ বছর আগে সেপ্টেম্বরের ইডেন-বিকেল কলকাতাকে যেমন চিরস্থায়ী নাড়া দিয়েছিল, ফুটবলসম্রাটকেও সম্ভবত তাই। এখনও তিনি অবলীলায় মনে করতে পারেন অদ্ভুত ফতুয়া পরে প্রভাবশালী মন্ত্রী তাঁদের সঙ্গে করমর্দন করেছিলেন। খুব সম্ভবত ওটা ফতুয়া নয়, ধুতি। পরেছিলেন তখনকার সদ্য মুখ্যমন্ত্রী হওয়া জ্যোতি বসু।

আসলে দেবীর এ বারের বাহন যেমন দোলা তেমন পেলেরও এ বার কলকাতার বাহন নস্ট্যালজিয়া। আটত্রিশ বছরের পুরনো মুহূর্তকে তিনি আবার ফিরে ফিরে দেখতে চান। তাই বিশ্ববিখ্যাত ১০ নম্বর জার্সির বদলে তাঁর পিছনে এ বার অদৃশ্য ৩৮!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement