Paris Olympics 2024

একশো বছরে সাঁতার কাটেনি কেউ, অলিম্পিক্সের উদ্বোধনে ইতিহাসের স্যেন এখন অগ্নিপরীক্ষার মুখে

স্যেন নদীর জল গত দু’মাসে যত বার পরীক্ষা করা হয়েছে, তত প্রতিযোগী বোধ হয় আসছেন না গেমসে। সপ্তাহে অন্তত দু’তিন বার ধরে ব্যাক্টেরিয়া স্তর দেখা হচ্ছে।

Advertisement

সুমিত ঘোষ

প্যারিস শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৪ ০৮:১৪
Share:

প্রস্তুতি: উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আগে স্যেন নদীতে তুঙ্গে মহড়া। বৃহস্পতিবার প্যারিসে। ছবি: রয়টার্স।

উদ্বোধনের লগ্নেও স্যেন নদী ঘিরে চর্চা ও বিতর্ক অব্যাহত। প্যারিসের মেয়র অ্যানি ইদালগো যতই নদীতে সাঁতার কেটে বোঝানোর চেষ্টা করুন, নদীর জল একদম ঠিক আছে, তাঁর কথা চোখ বুজে মেনে নিচ্ছে কে? একাধিক দেশের প্রতিযোগীদের মনে আতঙ্ক কাটছে না। তাঁরা গজগজ করছেন, একশো বছর ধরে যে নদীতে কেউ সাঁতার কাটেনি, মেয়র ঝাঁপ দিলেই তার জল কী করে দূষণমুক্ত হয়ে যাবে?

Advertisement

স্যেন নদীর জল গত দু’মাসে যত বার পরীক্ষা করা হয়েছে, তত প্রতিযোগী বোধ হয় আসছেন না গেমসে। সপ্তাহে অন্তত দু’তিন বার ধরে ব্যাক্টেরিয়া স্তর দেখা হচ্ছে। হাতে গোনা দু’একটি ক্ষেত্রে ছাড়া গ্রহণযোগ্য ফলাফল পাওয়া যায়নি। যেটা সব চেয়ে আতঙ্কের, তা হচ্ছে, গত ৩ জুন থেকে যে ক’বার নদীর জল পরীক্ষা করা হয়েছে, কোনও বারই নিঃসংশয় হওয়া যায়নি যে, স্যেন নদীর জল সম্পূর্ণ দূষণমুক্ত। ইদালগো নিজে সাঁতার কেটে দেখানোর পরেও কোনও কোনও প্রতিযোগী তাঁদের দেশের সংবাদমাধ্যমে প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘মুখ বন্ধ করে কী ভাবে সাঁতার কাটা যায়? নাকি মাস্ক করে নামব?’’ এঁদের বক্তব্য, সাঁতার কাটতে গিয়ে মুখে জল যেতেই পারে। তখন কে দেখবে?

নদীর জলে ব্যক্টেরিয়ার স্তর বিপদসীমার নীচে নামেনি। কে এই ঝুঁকি নেবে? ট্রায়াথলনের সাঁতার এবং ম্যারাথন সাঁতার নদীতে হবে বলে ঠিক আছে। গেমসের উদ্বোধন এসে গেল, নদীর জল নিরাপদ কি না সেই আতঙ্ক দূর করা গেল না। ইংরেজ সাঁতারুরা জানিয়েছেন, তাঁরা টাইফয়েড ও হেপাটাইটিস ‘এ’-র টিকা নিয়ে আসছেন। মেয়র সাঁতার কাটলেন সারা বিশ্ব দেখল। পাশাপাশি, গোপন থাকছে না এই তথ্য যে, দু’বার মেয়র নিজেই নদীতে নামার এই অভিযান বাতিল করেছেন। জলে দূষণ মাত্রা কমেনি বলে। রিপোর্ট বলছে, গত ১৮ জুনেই ব্যাক্টেরিয়া স্তর প্রয়োজনের তুলনায় দশ গুণ বেশি ছিল। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান নিয়ে একরকম মাথাব্যথা। সেটা মূলত নিরাপত্তা কেন্দ্রিক। অন্যটা হচ্ছে, স্যেন নদীর জলে শেষ পর্যন্ত প্রতিযোগিতার আয়োজন করা সম্ভব হবে কি না। এখনও পর্যন্ত সংগঠকেরা জোরালো ভাবে দাবি করে যাচ্ছেন, স্যেন পরীক্ষায় পাশ করবে। কিন্তু সময়ও যে কমে আসছে। ট্রায়াথলনের সাঁতার হওয়ার কথা ৩০ ও ৩১ জুলাই। হাতে আর পাঁচ দিনও নেই। ম্যারাথন যদিও হবে পরে, ৮ ও ৯ অগস্ট। গত একশো বছর ধরে স্যেন নদীতে যে কেউ সাঁতার কাটেনি, তার কারণও রয়েছে প্রচুর। অলিম্পিক্সের প্রস্তুতি হিসেবে নদী পরিষ্কার করার অভিযান চালানো হয়। তখন ঐতিহাসিক নদীর গর্ভ থেকে মোটরসাইকেল থেকে শুরু করে কী না উদ্ধার হয়েছে! ১.৪ বিলিয়ন ইউরো খরচ করা হয় নদী পরিষ্কার করার জন্য। একটি বিশাল স্টোরেজ বেসিন বসানো হয়েছে, যেখানে দূষিত জল পাম্প করে ফেলা হচ্ছে। অলিম্পিক্সের জন্য সাধারণত যে রকম সাইজের সুইমিং পুল ব্যবহৃত হয়, তার কুড়িটি এই বেসিনে ঢুকে যেতে পারে বলে জানানো হয়েছে। এর পরেও সংগঠকেরা প্রার্থনা করে চলেছেন, প্রকৃতি যেন সঙ্গে থাকে। বৃষ্টি হওয়া মানেই নদীর জলে ব্যাক্টেরিয়া স্তর বেড়ে যাওয়া। প্রতিযোগিতার আগে যদি পরীক্ষার ফল খারাপ হয়, তা হলে আর রক্ষে নেই। বলা হচ্ছে, প্যারিস অলিম্পিক্সে নিরাপত্তা ও স্যেন সাফ করার জন্য যা খরচ করা হচ্ছে, তা দিয়ে দু’টো গেমস হয়ে যায়। এই খরচা নিয়েও নানা মানবিক সংগঠন সোচ্চার হয়েছে।

Advertisement

মেয়র খুব সাহসিক ভঙ্গিতে ঘোষণা করেছেন, প্যারিসে ২০১৫ জঙ্গি হানার অভিশপ্ত ঘটনা তাঁদের গেমস আয়োজনের ব্যাপারে আরও প্রত্যয়ী করে তুলেছিল। সেই কারণেই তাঁরা এত মরিয়া ভাবে ‘বিড’ করেছিলেন। যদিও কেউ কেউ পাল্টা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, অতীতে চেষ্টা করেও আন্তর্জাতিক অলিম্পিক সংস্থার মন জিততে পারেনি প্যারিস। লন্ডনের কাছেই যেমন হেরে গিয়েছিল গেমস আয়োজনের দায়িত্ব পাওয়ার প্রতিযোগিতায়। উদ্বোধনের আগের দিন স্যেন নদীর তিরে গিয়ে অন্য তথ্যও জানা গেল। নদীর তিরে প্রচুর অর্থ দিয়ে হাউজ়বোটে কিনে আছেন অনেক ধনকুবের। বোটের মালিকদের হাতেও জল সাফ করার নানা নির্দেশ তুলে দেওয়া হয়েছে। কোনও ভাবেই যেন হাউজ়বোট থেকে দূষণ না ছড়ায় নদীর জলে।

শোনা যায়, নেপোলিয়ন নাকি স্যেন নদীকে বলতেন ‘প্যারিসের প্রধান রাজপথ’। এই নদীবক্ষ ধরেই একটা সময়ে সারা বিশ্বের সঙ্গে বাণিজ্যিক আদানপ্রদান চলত। তাঁর নাকি শেষ ইচ্ছাও ছিল, স্যেন নদী দিয়ে অন্তত একবার যেন নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। সম্রাট যদি জানতেন, একশো বছর পরে প্যারিসে হওয়া অলিম্পিক্সে প্রিয়তম প্রেমের নদীই এমন নির্মম ভাবে আক্রান্ত হবে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement