প্যারিসে পদক জেতার পরে আমন শেরাওয়াত। ছবি: রয়টার্স।
প্যারিসে ভারতের ছয় কুস্তিগিরের মধ্যে একমাত্র পুরুষ তিনি। ২০২১ টোকিয়ো অলিম্পিক্সে রুপোজয়ী রবি দাহিয়াকে হারিয়ে ভারতীয় দলে সুযোগ পেয়েছেন। কুস্তি সংস্থা ভরসা দেখিয়েছে ২১ বছরের আমন শেরাওয়াতের উপর। সেই ভরসার দাম দিলেন আমন। প্যারিস থেকে পদক আনলেন তিনি। সোনা বা রুপো না হলেও ব্রোঞ্জ এল আমনের হাত ধরে। প্যারিস থেকে কুস্তিতে প্রথম পদক এনে দিলেন আমন।
ব্রোঞ্জ পদকের ম্যাচে পুয়ের্তো রিকোর দারিয়ান তোই ক্রুজ়ের বিরুদ্ধে খেলা ছিল আমনের। সেই ম্যাচে দাপট দেখান আমন। এক বারের জন্যও মনে হয়নি, রক্ষণাত্মক খেলছেন। আমন আক্রমণাত্মক খেলতে পছন্দ করেন। সেটাই করলেন। ১৩-৫ পয়েন্টে প্রতিপক্ষকে হারিয়ে ব্রোঞ্জ জিতলেন আমন।
হরিয়ানার বিরোহার গ্রামের ছেলে আমন ছোটবেলায় কুস্তি লড়তেন আখড়াতে। ম্যাটে খেলার অভ্যাস ছিল না তাঁর। ২০১২ সালে সুশীল কুমারকে লন্ডন অলিম্পিক্সে পদক জিততে দেখে প্রথম বার ম্যাটে নামার ইচ্ছা হয় আমনের। সুশীলকেই নিজের গুরু মনে করেন তিনি। ১০ বছর বয়সে ভর্তি হয়ে যান দিল্লিক ছত্রসল স্টেডিয়ামে। এখান থেকে বহু কুস্তিগির পেয়েছে ভারত। সুশীলও এখানেই অনুশীলন করতেন। সেই কারণেই ছত্রসলের ছাত্র হয়ে যান আমন।
আমন যখন কুস্তিগির হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তখনই তাঁর জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। কয়েক মাসের ব্যবধানে বাবা ও মাকে হারান তিনি। আমনের বয়স তখন মাত্র ১১ বছর। বাধ্য হয়ে ঠাকুরদার কাছে চলে যান আমন। ঠাকুরদা বড় করেন তাঁকে।
ব্যক্তিগত জীবনে পাওয়া ধাক্কায় ভেঙে পড়েননি আমন। বরং কুস্তিকে আরও বেশি আঁকড়ে ধরেছিলেন তিনি। সেই কারণে অনেক অল্প বয়স থেকেই কুস্তিতে একের পর এক সাফল্য পান। শুরুটা হয়েছিল ২০২১ সালে। ললিত কুমারের অধীনে অনুশীলন করে প্রথম বার জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ জেতেন তিনি। সেই শুরু।
পরে ২০২২ সালে অনূর্ধ্ব-২৩ এশীয় চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা জেতেন তিনি। আমনই একমাত্র ভারতীয়, যিনি এই কীর্তি করেছেন। ২০২৩ সালে এশীয় কুস্তি চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা জেতেন আমন। চলতি বছরে জাগ্রেভ ওপেন কুস্তি চ্যাম্পিয়নশিপেও সোনা জেতেন ভারতীয় কুস্তিগির।
এই বছর ইস্তানবুলে বিশ্ব কুস্তি অলিম্পিক্সের যোগ্যতা অর্জন প্রতিযোগিতায় ভারতের জন্য একটি কোটা নিশ্চিত করেন আমন। অলিম্পিক্সের সেমিফাইনালেও ওঠেন। কিন্তু সেখানে হেরে যান। পরে ব্রোঞ্জ পদকের ম্যাচ জেতেন তিনি। ব্রোঞ্জ নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হল ভারতীয় কুস্তিগিরকে।