অভিনব: ব্যালকনি থেকে সঙ্কেত ইংল্যান্ডের বিশ্লেষক লিমনের। টুইটার
সাঙ্কেতিক শব্দের মাধ্যমে কথা চালাচালি এত দিন বোধ হয় গুপ্তচরদের দুনিয়াতেই সীমাবদ্ধ ছিল। এ বার তা এসে পড়ল ক্রিকেটেও। আর এর পিছনে রয়েছে এক জন গণিত বিশারদের মস্তিষ্ক!
গত মঙ্গলবার কেপটাউনে তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিংয়ের সময় ইংল্যান্ডের ড্রেসিংরুমের বাইরে একটি বোর্ডে কয়েকটি অক্ষর এবং সংখ্যা লিখে ঝুলিয়ে রাখা হচ্ছিল। যেমন, ‘৪ ই’। পরে জানা যায়, এ ভাবেই নাকি ড্রেসিংরুমের থেকে বিশেষ বার্তা পাঠানো হচ্ছে ইংল্যান্ড অধিনায়ক অইন মর্গ্যানকে। সেই বার্তা পেয়ে মাঠে নিজের কৌশল তৈরি করছেন মর্গ্যান।
ইংল্যান্ড প্রচারমাধ্যমের ধারণা ছিল, তৃতীয় ম্যাচেই শুধু এই বার্তা আদানপ্রদান ঘটেছে। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা যাচ্ছে, তা নয়। সিরিজের প্রথম ম্যাচ থেকেই চলছে সাঙ্কেতিক বার্তার আদানপ্রদান। যা প্রকাশ্যে আসে তৃতীয় ম্যাচে।
আরও পড়ুন: টি-টোয়েন্টি সিরিজে নতুন চ্যালেঞ্জের অপেক্ষায় নটরাজন
কার মাথা থেকে বেরিয়েছে এই কৌশল? এর আগে কি ইংল্যান্ডের কাউন্টি ক্রিকেটে এই ধরনের সাঙ্কেতিক বাক্যের আদানপ্রদান ঘটেছে? নেপথ্য কাহিনি জানার জন্য যোগাযোগ করা হয়েছিল ইংল্যান্ডের মিডিয়া ম্যানেজার ড্যানি রুবেনের সঙ্গে। রুবেনের সঙ্গে কথোপকথনে একটা নাম সামনে চলে আসছে— ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের সঙ্গে যুক্ত বিশ্লেষক নেথান লিমন। যিনি আবার অঙ্ক বিশারদও। লিমন বা অন্য কেউ কি এই পদ্ধতি এর আগে কাউন্টি ক্রিকেটে প্রয়োগ করেছে? রুবেন বললেন, ‘‘আমি তো সে রকম কিছু শুনিনি।’’
আরও খবর: জিতেও চোট সমস্যা নিয়ে চিন্তায় হাবাস
তা হলে কোথায় জন্ম এই অভিনবত্বের? জানা গেল, পাকিস্তান সুপার লিগে মুলতান সুলতান দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন লিমন। সেখানেই এই পদ্ধতি চালু করেন তিনি। ইংল্যান্ডে কি তা হলে এটা একেবারেই নতুন? রুবেনের জবাব, ‘‘আমি তো শুনিনি ইংল্যান্ডে এ রকম কিছু এর আগে হয়েছে বলে। তবে দলের অনুশীলনে এ ভাবে বার্তা আদানপ্রদান করা হয়েছে।’’ এ দিনই আবার দক্ষিণ আফ্রিকায় ভিডিয়ো কনফারেন্সে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মর্গ্যান বলেছেন, ‘‘আগেও নানা ভাবে ড্রেসিংরুম থেকে বার্তা পাঠানো হত। এটা একটা অন্য পদ্ধতি।’’ এটা কি ক্রিকেটীয় স্পিরিট মেনেই হচ্ছে? ‘‘অবশ্যই,’’ বলছেন ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক, ‘‘একশো শতাংশ ক্রিকেটীয় স্পিরিট মেনেই এটা হচ্ছে। এর মধ্যে তো অনৈতিক কিছু নেই। বিশ্লেষকরা যে তথ্য পেয়েছেন, সেটাই আমাদের জানাচ্ছেন।’’ ম্যাচ রেফারির কাছ থেকে অনুমতি নিয়েই এই অভিনবত্ব চালু করেছে ইংল্যান্ড, এমনও শোনা গেল।
এর আগে এ রকমই বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রয়াত কোচ বব উলমার। প্রয়াত হ্যান্সি ক্রোনিয়ের সঙ্গে বার্তা আদানপ্রদানের জন্য অধিনায়কের কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে দিয়েছিলেন তিনি।
সাঙ্কেতিক চিহ্নের মাধ্যমে মর্গ্যানদের কী বার্তা দিচ্ছেন ইংল্যান্ডের গণিত বিশারদ? যতটুকু জানা যাচ্ছে, তা এ রকম: যে ব্যাটসম্যান খেলছেন, তাঁর খেলার ধাঁচ দ্রুত কাঁটাছেড়া হল ড্রেসিংরুমে। তার পরে কোচ এবং বিশ্লেষক মনে করলেন, এই ব্যাটসম্যানের জন্য এই বিশেষ বোলারকে আনলে কাজ হতে পারে। অক্ষরের মাধ্যমে ব্যাটসম্যানের নাম বোঝানো হল, সংখ্যার মাধ্যমে বোলারের। যেমন, ‘৪ ই’। এই গুপ্তবার্তা চলে গেল অধিনায়কের কাছে। বিপক্ষ বুঝতেও পারল না। এতে কি কোনও কাজ হচ্ছে? মর্গ্যান বলেছেন, ‘‘সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কয়েকটা ব্যাপারে অবশ্যই সাহায্য পেয়েছি।’’ ইংল্যান্ড ঠিক করে ফেলেছে, এই ‘সাঙ্কেতিক পদ্ধতি’ তারা চালিয়ে যাবে। এখন দেখার, এক অঙ্ক বিশারদের হাত ধরে ক্রিকেটে কোনও বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসে কি না।