চার উইকেট নিয়ে সফলতম বোলার শামি। ছবি: এপি।
তিন দিনেই প্রথম টেস্ট জিতল ভারত। শনিবার বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ইনদওরে জয় এল ইনিংস ও ১৩০ রানে। দুই দিন বাকি থাকতেই সিরিজে ১-০ এগিয়ে গেল বিরাট কোহালির দল। পরের টেস্ট ইডেনে ২২ নভেম্বর থেকে। যা গোলাপি বলে হবে। দিন-রাতের সেই টেস্টের দিকেই এখন নজর ক্রিকেটমহলের।
এদিন বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসে একাই লড়ছিলেন মুশফিকুর রহিম (৬৪)। দলকে দু’শো পার করিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। অন্যদিকে উইকেট পড়তে থাকলেও একাই টানছিলেন দলকে। ইনিংসের নবম উইকেট হিসেবে তাঁকে ফেরালেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। মুশফিকুরের ক্যাচ দারুণ ভাবে নিলেন চেতেশ্বর পূজারা। অশ্বিনকে পরের ওভারেই মারতে গিয়ে এবাদত হোসেনও বল তুললেন আকাশে। ক্যাচ ধরলেন উমেশ যাদব। ৬৯.২ ওভারে ২১৩ রানে দাঁড়ি পড়ল বাংলাদেশের ইনিংসে। ৪২ রানে তিন উইকেট নিলেন অশ্বিন। বাংলাদেশের শেষ দুই উইকেটই তাঁর। তবে ভারতের সফলতম বোলার হলেন মহম্মদ শামি। ৩১ রানে চার উইকেট নিয়েছেন তিনি।
চায়ের বিরতির সময় ছয় উইকেটে ১৯১ ছিল বাংলাদেশের স্কোর। তৃতীয় সেশনের শুরুতে মেহেদি হাসান মিরাজকে (৩৮) বোল্ড করেছিলেন উমেশ। তার আগে সপ্তম উইকেটে মুশফিকুর-মেহেদি যোগ করেছিলেন ৫৯ রান।মেহেদির পর ফিরেছিলেন তাইজুল ইসলাম (৬)। এই ইনিংসে মহম্মদ শামির চতুর্থ শিকার হয়েছিলেন তিনি। তাইজুলের ক্যাচ ধরেছিলেন উইকেটরক্ষক ঋদ্ধিমান সাহা।
শনিবার লাঞ্চের সময় ৬০ রানে চার উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল বাংলাদেশ। এদিনের দ্বিতীয় সেশনে মাহমুদুল্লাহকে (১৫) ফিরিয়েছিলেন মহম্মদ শামি। দ্বিতীয় স্লিপে তাঁর ক্যাচ ধরেছিলেন রোহিত শর্মা। ৭২ রানে পাঁচ উইকেট পড়ার পর ষষ্ঠ উইকেটে মুশফিকুর-লিটন যোগ করেছিলেন ৬৩ রান। লিটনকে এর পর নিজের বলেই ক্যাচ ধরে ফিরিয়েছিলেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন।৩৯ বলে ৩৫ রানের আক্রমণাত্মক ইনিংস খেলেছিলেন লিটন। ১৩৫ রানে ষষ্ঠ উইকেট পড়েছিল বাংলাদেশের।
আরও পড়ুন: দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ডিডিসিএ প্রেসিডেন্টের পদ ছাড়লেন রজত শর্মা
আরও পড়ুন: ইনদওর টেস্টের ফাঁকেই ফ্লাডলাইটে গোলাপি বলে প্র্যাকটিস রোহিতদের
প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও শুরুতে বাংলাদেশের ইনিংসকে চাপে ফেলেছিলেন ভারতীয় পেসাররা। ১৬ রানের মধ্যেই দুই ওপেনারকে হারিয়েছিল তারা। প্রথমে ইমরুল কায়েসকে (৬) অসাধারণ ডেলিভারিতে বোল্ড করেছিলেন উমেশ যাদব। তার পর শাদমান ইসলামকে (৬) বোল্ড করেছিলেন ইশান্ত শর্মা। এর পর অধিনায়ক মোমিনুল হককে (৭) এলবিডব্লিউ করেছিলেন মহম্মদ শামি। রিভিউ নিয়েছিল ভারত। তাতেই দেখা যায় বল উইকেটে লাগছে। ৩৭ রানে তিন উইকেট হারিয়েছিল বাংলাদেশ। চতুর্থ উইকেট পড়ল ৪৪ রানে। শামির বাউন্সারে মারতে গিয়ে মহম্মদ মিঠুন (১৮) সহজ ক্যাচ দিয়েছিলেন মিড-উইকেটে দাঁড়ানো ময়াঙ্ক আগরওয়ালকে। অবিচ্ছিন্ন চতুর্থ উইকেটে এখনও পর্যন্ত ১৬ রান যোগ করেছেন মুশফিকুর-মাহমুদুল্লাহ। তবে ভারতীয় পেসারদের সামনে একেবারেই স্বচ্ছন্দ দেখাচ্ছে না তাঁদের। শামির বলে দ্বিতীয় স্লিপে মুশফিকুরের সহজ ক্যাচ রোহিত শর্মা না ফেললে বাংলাদেশের অবস্থা আরও করুণ দেখাত।
৩৪৩ রানের লিড নিয়ে ইনিংসে সমাপ্তি ঘোষণা করেছিল ভারত। শুক্রবার দ্বিতীয় দিনের শেষে ছয় উইকেটে ৪৯৩ তুলেছিল টিম ইন্ডিয়া। সেই রানেই ডিক্লেয়ার করে দিয়েছিলেন অধিনায়ক বিরাট কোহালি। ফলে, শনিবার সকালে কন্ডিশন কাজে লাগিয়ে নতুন বলে আক্রমণ শুরু করেছিলেন ইশান্ত শর্মা, উমেশ যাদব। আর দুই পেসারই সমস্যায় ফেললেন বিপক্ষ ব্যাটসম্যানকে। বার বার বিব্রত করতে থাকলেন গতি, সুইং, বাউন্সে।
বাংলাদেশের সামনে এখন টেস্ট বাঁচানোর কঠিন লড়াই। বিরাট কোহালি চাইলে শনিবার আরও খানিকক্ষণ ব্যাট করে লিড বাড়িয়ে নিতে পারতেন। কিন্তু সেই রাস্তায় হাঁটেনি ভারত। বরং প্রথম দুই দিন ম্যাচে দাপট দেখানোর পর টেস্ট দ্রুত শেষ করার বার্তা দিতে চেয়েছে টিম ইন্ডিয়া। প্রথম ইনিংসে ১৫০ রানে শেষ হয়েছিলেন মোমিনুল হকরা। দ্বিতীয় ইনিংসে তাঁরা কতটা লড়তে পারেন, সেই দিকে নজর থাকছে ক্রিকেটপ্রেমীদের। সকালের প্রথম ঘণ্টাতেই অবশ্য দুই উইকেট পড়ে গিয়েছে সফরকারী দলের।
এই টেস্ট ফের দেখাল ভারতীয় ব্যাটিং কত শক্তিশালী। বিরাট কোহালি, রোহিত শর্মা রান পাননি। চেতেশ্বর পূজারা, অজিঙ্ক রাহানে অর্ধশতরানের বেশি এগোননি। কিন্তু তারপরও প্রায় পাঁচশো তুলেছিল ভারত। যার নেপথ্যে ময়াঙ্ক আগরওয়ালের ২৪৩ রান। শেষ পাঁচ ইনিংসে এটা তাঁর দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরি। আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে ক্রিকেটমহলকে মুগ্ধ করেছেন ডানহাতি ওপেনার। শুক্রবার পরের দিকে রবীন্দ্র জাডেডা, উমেশ যাদবও দ্রুত রান তুলেছিলেন। শুক্রবার শেষ সেশনে উঠেছিল ১৯০ রান। সারা দিনে উঠেছিল ৪০৭ রান। এই দাপটের সামনে বাংলাদেশকে অসহায় দেখিয়েছে ইনদওর টেস্টে।