উইম্বলডনের ফাইনালে ওঠার পরে হাসি মুখে মার্কেটা ভন্দ্রোসোভা। ছবি: রয়টার্স
তিনি যে উইম্বলডনের ফাইনালে উঠবেন তা হয়তো স্বপ্নেও কেউ ভাবেননি। বিশেষ করে কোয়ার্টার ফাইনালে শীর্ষ বাছাই ইগা শিয়নটেকের বিরুদ্ধে এলিনা সোয়াইতোলিনা যে টেনিস খেলেছিলেন তাতে তাঁকেই ট্রফি জেতার দাবিদার মনে করেছিলেন অনেকে। কিন্তু সেমিফাইনালে সব হিসাব বদলে দিলেন মার্কেটা ভন্দ্রোসোভা। ইউক্রেনের সোয়াইতোলিনাকে স্ট্রেট সেটে হারিয়ে ফাইনালে উঠলেন চেক প্রজাতন্ত্রের মেয়ে। নজির গড়েছেন ভন্দ্রোসোভা। টেনিসের ওপেন এরা (১৯৬৭ সালের পর থেকে টেনিসের ওপেন এরা ধরা হয়)-তে তিনিই প্রথম অবাছাই মহিলা খেলোয়াড় যিনি উইম্বলডনের ফাইনালে উঠলেন।
২৪ বছরের ভন্দ্রোসোভা ছোট থেকেই খেলার পরিবেশে বড় হয়েছেন। তাঁর দাদু জাতীয় স্তরে পেন্টাথলন চ্যাম্পিয়ন। মা পেশাদার ভলিবল খেলোয়াড়। ছোট থেকেই টেনিসে দাপট দেখাতে থাকেন ভন্দ্রোসোভা। জুনিয়র স্তরে বিশ্বের সেরা খেলোয়াড় হয়েছিলেন। সিনিয়র স্তরে এসে শুরুতেই চমক দিয়েছিলেন এই বাঁ হাতি খেলোয়াড়। ২০১৯ সালে ফরাসি ওপেনের ফাইনালে উঠেছিলেন। সেখানে অস্ট্রেলিয়ার অ্যাশলি বার্টির কাছে পরাজিত হয়েছিলেন।
তার পরে চোটে দীর্ঘ দিন ভুগতে হয় ভন্দ্রোসোভাকে। ২০১৯ সালে ক্রমতালিকায় সব থেকে উন্নতি (১৪) করেছিলেন তিনি। কিন্তু চোটের কারণে ক্রমাগত পিছিয়ে পড়তে থাকেন। গত বছরও চোটের কারণে ছ’মাস কোর্টের বাইরে কাটাতে হয়েছিল তাঁকে। ফলে ক্রমতালিকায় পিছিয়ে ৪৩ নম্বরে নেমে যান। সেই ভন্দ্রোসোভা এ বারের উইম্বলডনে সবাইকে অবাক করে দিয়েছেন। ভেরোনিকা কুদেরমেতোভা (১২), ডোনা ভেকিচ (২০), মারিয়া বৌজ়কোভার (৩২) মতো বাছাই খেলোয়াড়দের হারিয়েছেন। কোয়ার্টার ফাইনালে হারের মুখ থেকে ফিরে চতুর্থ বাছাই জেসিকা পেগুলাকে হারিয়েছেন। সব শেষে সেমিফাইনালে হারালেন সোয়াইতোলিনাকে।
লাল সুরকির কোর্টে ভাল খেলেন ভন্দ্রোসোভা। উইম্বলডনের ঘাসের কোর্টে এ বারের আগে মাত্র একটি ম্যাচই জিতেছিলেন তিনি। তা হলে কী ভাবে এ বার বদলে গেল তাঁর খেলা? ভন্দ্রোসোভা বিপক্ষকে মাত করছেন তাঁর শক্তিশালী সার্ভিস ও ফোরহ্যান্ডের দৌলতে। এ বারের প্রতিযোগিতায় দেখা যাচ্ছে, সার্ভিস যাঁদের ভাল তাঁরা বাড়তি সুবিধা পাচ্ছেন। সেটা দেখা গিয়েছে ভন্দ্রোসোভার খেলায়। সেমিফাইনালে ভন্দ্রোসোভার সার্ভিস ও ফোরহ্যান্ডের কাছেই হারতে হয়েছে সোয়াইতোলিনাকে।
ভন্দ্রোসোভার দু’হাত ভর্তি ট্যাটু। কিন্তু অন্য সবার ট্যাটুর থেকে তা খানিকটা আলাদা। এক ঝলকে দেখলে মনে হয়, হাতে আঁকিবুকি কাটা হয়েছে। ১৬ বছর বয়সে প্রথম বার ট্যাটু করিয়েছিলেন। তার পরে তার প্রেমে পড়ে যান। যখনই সময় পান, নতুন কিছু আঁকিয়ে ফেলেন হাতে। আরও ট্যাটু আঁকাতে চান ভন্দ্রোসোভা। ঠিক যেমন ভাবে চান উইম্বলডন জিততে। এরিনা সাবালেঙ্কা এবং ওন্স জাবেউরের মধ্যে তাঁর সামনে ফাইনালে যিনিই খেলুন না কেন, লড়াইটা সহজ হবে না। অন্তত তেমনটাই জানিয়েছেন ভন্দ্রোসোভা। ফাইনালে উঠে বলেছেন, ‘‘শনিবার নিজের সেরাটা দেব। লড়াই করব। এ বারের প্রতিযোগিতায় প্রতিটা ম্যাচ উপভোগ করছি। ফাইনালেও সেটাই করতে চাই। প্রতিপক্ষ আমাকে সহজে হারাতে পারবে না।’’