অদম্য: লালরেমের দৃঢ়তায় মুগ্ধ মিজোরামের মানুষ। ছবি: টুইটার
ভারতীয় মহিলা হকি দল তখন এফআইএইচ হকি সিরিজ প্রতিযোগিতার সেমিফাইনালের চ্যালেঞ্জের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে জাপানের হিরোশিমায়। প্রতিপক্ষ চিলি। হঠাৎ আসে চরম দুঃখের খবরটা। তাঁর বাবা মারা গিয়েছেন। কিন্তু বাবার মৃত্যুসংবাদ পেয়েও জাপান থেকে দেশে ফিরে আসেননি। দলের সঙ্গে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়ে হৃদয় জয় করে নিয়েছিলেন ভারতের মহিলা হকি দলের খেলোয়াড় লালরেমসিয়ামি।
ভারতের অলিম্পিক্সে যোগ্যতা অর্জন করার আশা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় তাই তাঁর এই সিদ্ধান্ত। মিজোরামের ১৯ বছর বয়সি খেলোয়াড়ের মানসিক দৃঢ়তার প্রশংসা করেছিলেন সবাই। শেষ পর্যন্ত ভারত সেমিফাইনালে চিলিকে ৪-২ চূর্ণ করে ফাইনালে জাপানকে ৩-১ হারিয়ে সেই প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়। দেশের জার্সিতে কর্তব্য শেষ করে মঙ্গলবার মিজোরামের কোলাসিব জেলায় নিজের বাড়িতে ফিরলেন লালরেমসিয়ামি।
তাঁকে দেখেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁর মা। লালরেমকে দেখতে তখন প্রচুর লোকও জমা হয়েছে। লালরেম মা-কে সামলাতে সামলাতে উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানান তাঁর পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। পাশাপাশি তিনি সংক্ষিপ্ত বার্তায় সবাইকে শোকবার্তা এবং দলের উপর তাঁর দায়বদ্ধতার প্রশংসা করার জন্য ধন্যবাদ জানান। মিজোরাম হকি সংস্থার তরফে ব্যবস্থা করা হয়েছিল বিমানবন্দর থেকে তাঁকে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার। কোলাসিব জেলায় এখন লালরেমকে নিয়ে উচ্ছ্বাস সর্বত্র। তাঁকে জমি দেওয়ার চেষ্টা চলছে।
লালরেমের এই সিদ্ধান্ত রবিবার টুইটারে জানিয়েছিলেন ক্রীড়ামন্ত্রী কিরেন রিজিজু। লালরেম কোচকে বলেছিলেন, ‘‘আমি বাবাকে গর্বিত করতে চাই। আমি দলের সঙ্গে থাকতে চাই। ম্যাচটায় খেলব এবং নিশ্চিত করব ভারতীয় দল যাতে যোগত্যা অর্জন করে।’’ মঙ্গলবার ক্রীড়ামন্ত্রী ভারতীয় দলের সঙ্গে দেখা করেন এবং অলিম্পিক্সের জন্য প্রস্তুতিতে সাহায্যের কথাও বলেন। তিনি টুইট করেন, ‘‘আমাদের মেয়েদের জাতীয় হকি দল বিশ্বে এখন নয় নম্বরে। টোকিয়ো অলিম্পিক্সে যোগ্যতা অর্জন করার খুব ভাল সুযোগ রয়েছে আমাদের সামনে।’’
ভারতীয় মহিলা হকি দলের পারফরম্যান্সে খুব খুশি কোচ সোর্দ মারিনও। মারিন বলেছেন, সব মিলিয়ে ভারতের মেয়েরা যে ভাবে খেলেছে তাতে তিনি সন্তুষ্ট। তবে নভেম্বরে অলিম্পিক্সের যোগ্যতা অর্জন পর্বে এই পারফরম্যান্সই ধরে রাখতে অনুশীলনে জোর দেওয়ার কথা বলছেন তিনি। ‘‘র্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা দল হিসেবে যোগ্যতা অর্জন পর্বে নামতে হলে, দল জানে জেতা উচিত। আমি খুব খুশি ওদের খেলায়। জানি, গ্রুপ পর্বে কয়েকটা দুর্বল দল ছিল। তবে সেমিফাইনাল এবং ফাইনালে কিন্তু আমাদের যথেষ্ট চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে,’’ বলেন মারিন। সঙ্গে তিনি যোগ করেন, ‘‘প্র্যাক্টিসে ডুবে থাকতে হবে এবং ক্রমশ নিজেকে উন্নত করে তুলতে হবে। মানসিক দৃঢ়তা আরও বাড়ানোর প্র্যাক্টিসও করতে হবে। এখন আমাদের দলের কঠিন দলের বিরুদ্ধে লড়াই করে জেতার অভিজ্ঞতা হয়ে গিয়েছে। এতে দলের আত্মবিশ্বাস আরও বাড়বে।’’
চিলির বিরুদ্ধে ম্যাচের প্রথম দিকে কয়েকটা গোলের সুযোগ নষ্ট করেছিলেন ভারতের মেয়েরা। ‘‘আমরা ছন্দে ছিলাম না। তা ছাড়া আমাদের তিন দিন বিশ্রামও ছিল। তা সত্ত্বেও দারুণ খেলেছে দল। চিলির বিরুদ্ধে প্রথম দিকে ভাল খেলতে পারিনি। তার কারণ আমাদের ম্যাচটার গতির সঙ্গে পাল্লা দিতে হয়েছে। তবে কিছুক্ষণ পরে আমরা সব সামলে নিতে পেরেছি,’’ বলেছেন মেয়েদের কোচ।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।