কোহালির পরিকল্পনায় কাঁটা হয়ে দাঁড়ালেন যোদ্ধা কেশব

শনিবার গাহুঞ্জে স্টেডিয়ামে সেই কেশবই যে ভারতীয় বোলারদের কপালে ভাঁজ ফেলে দেবেন, তা কে-ই বা কল্পনা করেছিলেন! ভার্নন ফিল্যান্ডারের সঙ্গে ১৬৪ মিনিট ক্রিজ কামড়ে পড়ে থেকে বিরাট কোহালির দলের পরিকল্পনার কাঁটা হয়ে দাঁড়ান মহারাজ।

Advertisement

ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত

পুণে শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৯ ০৪:১৩
Share:

শূন্যে শরীর ছুড়ে দিয়ে কোহালি তালুবন্দি করছেন নর্ৎজের ক্যাচ। টুইটার, পিটিআই

নীচের সারির ব্যাটসম্যানদের বিরুদ্ধে ভারতীয় বোলিংয়ের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স অবাক করার মতো। এমনও কয়েকটি ম্যাচের উ‌দাহরণ দেওয়া যায়, যেখানে টেলএন্ডারেরা ভারতের হাত থেকে ম্যাচ প্রায় করে নিয়ে গিয়েছেন।

Advertisement

গত বছর বার্মিংহামে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৮৭ রানের মধ্যে বিপক্ষের সাত উইকেট ফেলে দিয়েছিল ভারত। সেই পরিস্থিতি থেকে ৬৫ বলে ৬৩ রান করে তাঁর দলকে ৯০ রান যোগ করতে সাহায্য করেন স্যাম কারেন। ভারত হারে ৩১ রানে।

২০১৮ জানুয়ারিতে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসেও একই ছবি। ২০২ রানে টপ অর্ডারকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন যশপ্রীত বুমরা, মহম্মদ শামিরা। সেখান থেকে টেলএন্ডারেরা যোগ করেন ৮৪ রান। সেটাই ভারতকে ঠেলে দেয় হারের দিকে। দক্ষিণ আফ্রিকা জিতেছিল ৭২ রানে। ৪৭ বলে ৩৫ রান করে জয়ের অন্যতম কাণ্ডারি ছিলেন কেশব মহারাজ।

Advertisement

শনিবার গাহুঞ্জে স্টেডিয়ামে সেই কেশবই যে ভারতীয় বোলারদের কপালে ভাঁজ ফেলে দেবেন, তা কে-ই বা কল্পনা করেছিলেন! ভার্নন ফিল্যান্ডারের সঙ্গে ১৬৪ মিনিট ক্রিজ কামড়ে পড়ে থেকে বিরাট কোহালির দলের পরিকল্পনার কাঁটা হয়ে দাঁড়ান মহারাজ। লাঞ্চের এক ঘণ্টা পরে যখন আর অশ্বিনের আর্মার ফ্যাফ ডুপ্লেসির (১১৭ বলে ৬৪) ব্যাট স্পর্শ করে রাহানের তালুবন্দি হল, উপস্থিত ১৩ হাজার দর্শক ভেবেছিলেন, সব লড়াই শেষ। আট উইকেট হারিয়ে ১৬২ রান তুলে ধুঁকছে দক্ষিণ আফ্রিকা। কাঁধে চোট নিয়ে ফিল্যান্ডারের সঙ্গে নবম জুটিতে সেখানে আরও ১৬৪ রান যোগ করেন মহারাজ। ১৩২ বলে তাঁর ৭২ রানের ইনিংস যেন অক্সিজেন জোগাল দক্ষিণ আফ্রিকা শিবিরে। দিনের শেষে ২৭৫ রানে অলআউট দক্ষিণ আফ্রিকা।

শুক্রবার ১৯৬ রান দিয়ে কাঁধে চোট নিয়ে মাঠ ছেড়েছেন বাঁ-হাতি স্পিনার। এ দিন তিনি মাঠে নামতে পারবেন কি না, তা নিয়েই প্রশ্ন ছিল। কিন্তু তিনি যে এ ভাবে কোহালিদের সামনে প্রতিরোধের প্রাচীর গড়ে তুলবেন, তা আশাও করেনি দক্ষিণ আফ্রিকা শিবির। টেম্বা বাভুমা তো বলেই গেলেন, ‘‘কেশবের এই ইনিংস হারানো আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে দিয়েছে।’’

সকালের এক ঘণ্টা যেন পেসারদের স্বর্গ হয়ে ওঠে পুণের এই পিচ। শনিবারও যার ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে। মহম্মদ শামি, উমেশ যাদবের বল প্রায় বুকের উ‌চ্চতায় তালুবন্দি করতে হচ্ছিল ঋদ্ধিমান সাহাকে। পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোচ্ছিল ভারত। নাইটওয়াচম্যান অ্যানরিখ নর্ৎজেকে ফিরিয়ে ডুপ্লেসির বিরুদ্ধে পিচের আর্দ্রতা কাজে লাগাতে চেয়েছিলেন বিরাট কোহালি। দিনের তৃতীয় ওভারেই বিরাটের অভিজ্ঞ সৈনিক মহম্মদ শামি সেই দায়িত্বটি পালন করেন। অতিরিক্ত বাউন্সের ফলে সামলাতে পারেননি নর্ৎজে। তৃতীয় স্লিপে ডান প্রান্তে ঝাঁপিয়ে এক হাতে তালুবন্দি করেন বিরাট। তাঁর নড়াচড়া দেখে বোঝার উপায় নেই, দ্বিতীয় দিন প্রায় ৭০ ওভার ক্রিজে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে।

অধিনায়কই যখন দলের অন্যতম সেরা ফিল্ডার, বাকিদেরও তো সেই ছন্দ বজায় রাখতে হয়। সেই কাজটিই করে দেখালেন ঋদ্ধিমান সাহা। উমেশ যাদবের আউটসুইংয়ের ফাঁদে পড়ে কভার ড্রাইভ করতে যান থেউনিস দে ব্রুইন। বলটি তাঁর ব্যাট স্পর্শ করে উড়ে যাচ্ছিল প্রথম স্লিপে চেতেশ্বর পুজারার দিকে। কিন্তু ঋদ্ধি অপেক্ষা করেননি। শূন্যে ডানদিকে উড়ে গিয়ে ক্যাচটি ধরেন ঋদ্ধি। এমসিএ স্টেডিয়ামের ১৩ হাজার দর্শক জয়ধ্বনি দিয়ে উঠল, ‘‘ঋদ্ধিইই...ঋদ্ধিইই।’’ মনে হল যেন মহারাষ্ট্রে নয়, ম্যাচ হচ্ছে বাংলার কোনও স্টেডিয়ামে।

বিশাখাপত্তনমে প্রথম ম্যাচের মতো এ দিনও উইকেটে থিতু হয়ে গিয়েছিলেন কুইন্টন ডি কক। অধিনায়ক ডুপ্লেসির সঙ্গে দ্রুত রান যোগ করার কাজ করছিলেন। এক দিক থেকে ডুপ্লেসি পেসারদের সুইং ভোঁতা করার দায়িত্ব নেন। অন্য দিক থেকে ডি কক প্রায় ষাটের উপর স্ট্রাইক রেট বজায় রেখে তাঁকে সঙ্গ দিচ্ছিলেন। তাঁকে থামিয়ে দিল অশ্বিনের স্বপ্নের ডেলিভারি। ৩৮তম ওভারের শেষ বলটি ডি ককের অফ-মিডল অঞ্চলে পড়ে অফস্টাম্পের বেল ছুঁয়ে চলে যায়। ডি কক বিশ্বাসও করতে পারেননি, তিনি বোল্ড। ভেবেছিলেন ঋদ্ধির হাতে লেগে হয়তো বেল পড়ে গিয়েছে। আউট হওযার পরে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকেন আম্পায়ারের দিকে। জায়ান্ট স্ক্রিনে রিপ্লে দেখে তাঁর সংবিত ফেরে। ২৮.৪ ওভারে ৬৯ রানে চার উইকেট নিয়ে শেষ করেন অশ্বিন। প্রত্যাবর্তনের ম্যাচে তিন উইকেট উমেশ যাদবের।

এখনও ৩২৬ রানে পিছিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। এই পরিস্থিতি থেকে বিরাট ফলো-অন করান কি না, সেটাই দেখার। যদি ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন, তা হলে সকালের এক ঘণ্টায় এলগারদের পরীক্ষার মুখে ফেলা সম্ভব হবে না। সে ক্ষেত্রে বিপক্ষকে অলআউট করার বাড়তি দায়িত্ব অশ্বিন-জাডেজা জুটিরই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement