দু’জনের আলাপ এক বন্ধুর মাধ্যমে। ১ বছর বন্ধুত্বের পরে প্রোপোজ লোকাল ট্রেনে। তাঁর দুর্দান্ত সব স্পেলের মতোই চমকপ্রদ রোমির সঙ্গে কপিল দেবের ঝোড়ো প্রেমপর্বও।
রোমির সঙ্গে কপিলের আলাপ করিয়ে দিয়েছিলেন সুনীল ভাটিয়া নামে এক কমন বন্ধু। সেটা সাতের দশকের শেষ দিক। প্রথম দেখাতেই রোমির সপ্রতিভ রূপে মুগ্ধ হন কপিল।
রোমিকে ইম্প্রেস করার জন্য ক্রিকেটকেই বেছে নেন কপিল দেব নিখাঞ্জ। তিনি রোমিকে আমন্ত্রণ জানান দিল্লিতে ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ টেস্ট ম্যাচ দেখতে আসার জন্য।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের ভারত সফরের টেস্ট সিরিজের ওই পঞ্চম ম্যাচ শেষ অবধি অমীমাংসিত থেকে যায়। তবে কপিলের কাছে এই ম্যাচ নানা কারণে স্মরণীয়। গ্যালারিতে প্রেমিকার সামনে তিনি প্রথম টেস্ট শতরান পেয়েছিলেন এই ম্যাচে।
১২৪ বলে ১২৬ রানের ঝোড়ো ইনিংসে তিনি ৯৪ থেকে ১০০-এ পৌঁছেছিলেন নরবার্ট ফিলিপের বলে ওভার বাউন্ডারি হাঁকিয়ে।
১৯৭৮ সালে জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার পরে রোমিকে প্রোপোজ করেছিলেন কপিল। তবে তখনও তারকা হওয়ার বেশ কিছুটা পথ বাকি।
কপিল পরে এক সাক্ষাৎকারে জানান, রোমিকে প্রোপোজ পর্বও ছিল নাটকীয়। আলাপ হওয়ার পরে বেশ কিছু দিন কেটে গেলেও দু’জনে মনের ভাব প্রকাশ করতে পারছিলেন না।
কপিল এবং রোমি দু’জনেই স্বীকার করেছেন তখন তাঁরা কেউই ততটা সপ্রতিভ ছিলেন না। শেষে এক দিন প্রোপোজ করেই ফেলেন কপিল। দু’জনে তখন একসঙ্গে ট্রেনে যাচ্ছিলেন।
রোমিকে সে সময় কপিল জিজ্ঞাসা করেছিলেন সেই সময়কার ট্রেনের জানালার বাইরের দৃশ্য তিনি ক্যামেরাবন্দি করে রাখতে চান কি না। যাতে পরে সেই ছবি তাঁদের সন্তানদের দেখানো যায়।
কিছু সূত্র বলে, সে সময় ট্রেনের জানালা দিয়ে বাইরে একটি বিজ্ঞাপনের হোর্ডিংয়ের দিকে নির্দেশ করেছিলেন কপিল। সেই বিজ্ঞাপনের মুখ ছিলেন তিনি নিজেই। মজা করে সেই ছবিটাই রোমিকে ক্যামেরাবন্দি করতে বলেছিলেন কপিল।
কপিলের ইঙ্গিত বুঝে রোমি লজ্জায় লাল হয়ে যান। তবে প্রেমের প্রস্তাবে রাজি হতেও সময় নেননি তিনি। ১৯৮০ সালে ২০ বছর বয়সি রোমিকে বিয়ে করেন ২১ বছরের কপিল।
তবে প্রেমের কথা প্রকাশ্যে আসতেই সমস্যা দেখা দেয় নিখাঞ্জ এবং ভাটিয়া পরিবারে। এত কম বয়সে দু’জনের বিয়েতে সম্মতি ছিল না কোনও পরিবারেই।
কপিল এবং রোমি দু’জনেই ঠিক করেন পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে তাঁরা বিয়ে করবেন না। বরং অপেক্ষা করবেন। কিন্তু দুই পরিবারে পরিস্থিতি এতটাই বন্ধুর হয়, কপিল-রোমির যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যেতে বসে।
জানা যায়, দু’জনের দীর্ঘ ফোনালাপে বেড়ে যাচ্ছিল টেলিফোন বিল। শেষে রোমির পরিবারে এসটিডি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। একই ছবি কপিলের পরিবারেও। দু’জনের বাড়িতেই ল্যান্ডলাইন ছিল। কিন্তু সেখান থেকে আউটগোয়িং এসটিডি কল করা যেত না। তবে ইনকামিং এসটিডি ফোনে অসুবিধে হত না। সে সময় কপিল থাকতেন হরিয়ানায় এবং রোমি দিল্লিবাসী। দু’জনের বাড়িতেই এসটিডি সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় কপিল-রোমির রোজকার প্রেমালাপে ছেদ পড়ে।
শেষে কপিল সমস্যার সামাধান বার করেন ক্রিকেট দিয়েই। কোনও ম্যাচ খেলতে যাওয়ার শহরে বিমানে পৌঁছনর হলে নাকি নির্ধারিত সময়ের আগে বেশ কিছুটা সময় হাতে নিয়ে তিনি বিমানবন্দরে পৌঁছতেন। তার পর বিমানবন্দরের ফোনবুথ থেকে গল্প করতেন প্রেমিকা রোমির সঙ্গে। জানিয়েছিলেন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে।
শেষ অবধি দু’জনের জেদের কাছে হার মানতে বাধ্য হয় দুই পরিবার। বেশ তরুণ বসেই সাতপাকে বাঁধা পড়েন কপিল-রোমি।
বিয়ের পরে কপিলের কেরিয়ারের উত্তরণ হয় উল্কাবেগে। ১৯৮২-৮৩ মরসুমে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে সিরিজে জাতীয় দলের অধিনায়কত্বে অভিষেক। ১৯৮৩ সালে ভারত প্রথম বার বিশ্বকাপ পায় তাঁর অধিনায়কত্বে। টুর্নামেন্টে তাঁর পারফরম্যান্স ছিল দুরন্ত।
প্রেমিকাকে মুগ্ধ করার জন্য ক্রিকেট ম্যাচ দেখার আমন্ত্রণ জানালেও পরে একান্ত আলাপ থেকে ক্রিকেটকে দূরেই রাখতেন কপিল। পরে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন রোমি।
মাঠ এবং মাঠের বাইরে জীবনের সব ওঠাপড়ায় কপিলের পাশে থেকেছেন রোমি। কেরিয়ারের শেষ দিকে বার বার প্রশ্ন উঠেছে জাতীয় দলে বিশ্বকাপজয়ী প্রাক্তন অধিনায়কের উপযোগিতা নিয়েও। জীবনের অমসৃণ সেই মুহূর্তগুলিতে কপিলের মানসিক শক্তির উৎস ছিলেন স্ত্রী রোমিই।
তবে শুধু ‘তারকার স্ত্রী’ পরিচয়ে সন্তুষ্ট হতে চাননি রোমি। তাঁদের পারিবারিক হোটেল ব্যবসার দেখভাল করেন তিনি। দাম্পত্যের ১৪ বছর পেরিয়ে ১৯৯৪ সালে কপিল-রোমির সংসারে আসে তাঁদের একমাত্র সন্তান, আমেয়া।
১৯৯৪ সালেই ক্রিকেট থেকে অবসর নেন কপিল। তখন তাঁর নামের পাশে ১৩১ টেস্টে ৫২৪৮ রান এবং ৪৩৪ উইকেটের পরিসংখ্যান। সর্বোচ্চ ১৬৩। ২২৫টি ওয়ান ডে ম্যাচে কপিলের মোট রান ৩৭৮৩। সর্বোচ্চ অপরাজিত ১৭৫। উইকেট নিয়েছেন ২৫৩টি।
অবসরের পরে কপিলের সময় এখন আবর্তিত হয় স্ত্রী এবং মেয়েকে ঘিরেই। হোটেলের ব্যবসার ফাঁকে তাঁর সময় কাটে গল্ফের মাঠেও।
চলতি বছরের অক্টোবর মাসে হৃদরোগে আক্রান্ত হন কপিল। দিল্লির এক হাসপাতালে অ্যাঞ্জিয়োপ্লাস্টির পরে সুস্থ হয়ে ওঠেন ‘হরিয়ানা হারিকেন’।