ফাইল চিত্র।
আমি জানি না, এর আগে কোনও টেস্ট ম্যাচ দু’দিনে মীমাংসিত হয়েছে কি না। তবে, অন্য একটি টেস্ট ম্যাচের কথা আমার মনে পড়ছে, যা দু’টো দিনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। ১৯৫৪ সালে ১০ জুন লর্ডসের সেই টেস্ট ম্যাচ হওয়ার কথা ছিল পাকিস্তান বনাম ইংল্যান্ডের। কিন্তু প্রথম তিন দিন বৃষ্টিতে ভেসে গেল। খেলা হল না। চতুর্থ দিন ছিল রেস্ট ডে। পঞ্চম দিন অর্থাৎ ১৪ জুন শুরু হতে পারল টেস্ট ম্যাচ। টসে জিতে ইংল্যান্ড ওই ভয়ঙ্কর পিচে ব্যাট করতে পাঠাল পাকিস্তানকে। কিন্তু প্রথম দিনও পুরো খেলা হতে পারল না। পাকিস্তান যখন তিন উইকেটে ৫০, তখন আবার বৃষ্টিতে বন্ধ হয়ে গেল সেদিনের খেলা। পর দিন পাকিস্তানের বাকি সাতটি উইকেট পড়ে গেল ৩৭ রানে। ছ’টি উইকেট নিলেন স্পিনাররা। অর্থাৎ, পাকিস্তান অলআউট ৮৭। কত ওভারে? ৮৩.৫ ওভারে। অর্থাৎ, প্রায় ৮৪ ওভার খেলে ৮৭ রান তুলল পাকিস্তান। সর্বোচ্চ স্কোরার হানিফ মহম্মদ। তিনি করেছেন ২০। ১৯৫ মিনিট উইকেটে থেকে খেলেছেন ২২৩টি বল। হিসেব করলে দেখা যায়, হানিফ একাই প্রায় ৬৪ ওভার উইকেটে ছিলেন। হানিফের আউটের সঙ্গে সঙ্গে ষষ্ঠ উইকেটের পতন। রান তখন ৬৭। দশ নম্বর ব্যাটসম্যান জুলফিকর আমেদ পাগলের মতো ব্যাট চালিয়ে ১১ রান করলেন। পাকিস্তানের সাত জন ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কের রানে পৌঁছতে পারলেন না।
ইংল্যান্ড ব্যাট করতে নামল। ৯ উইকেটে তুলল ১১৭। তার মধ্যে লেন হাটন শূন্য। হাটন সারা জীবনে ৭৯টি টেস্টের মধ্যে মাত্র পাঁচ বার শূন্য করেছেন। হানিফ মহম্মদও পাঁচ বার, ৫৫টি টেস্টে। হাটনের সহ-খেলোয়াড় ট্রেভর বেলি লিখেছিলেন হাটনের মানসিকতা সম্পর্কে: এনিথিং লেস দ্যান সেঞ্চুরি হি কনসিডারড অ্যাজ আ ফেলিওর। সেই হাটন শূন্য! রেগ সিমসন নামে এক ভুলে যাওয়া ব্যাটসম্যান করলেন ৪০। পিটার মে ২৭। গডফ্রে ইভানস্ ২৫। ৯ উইকেটে ডিক্লেয়ার করল ইংল্যান্ড, যদি জিততে পারে। ফজল মামুদ নিলেন চারটি উইকেট। আর পাঁচটি নিলেন খান মহম্মদ। দু’জনেই মিডিয়ম পেসার। দ্বিতীয় ইনিংসে পাকিস্তান ব্যাট করতে নামল। আরও এক ভুলে যাওয়া ক্রিকেটার ওয়াকার হাসান করলেন সেই টেস্টের একমাত্র অর্ধশতক। ৫৩ রান। অন্য দিকে, আবার পাঁচিল তুললেন হানিফ। এ বার ১৪৫ বলে ৩৯। তিন উইকেটে পাকিস্তান ১২১ রানে পৌঁছতে খেলা শেষ হল। ফল ড্র। এটাও দু’দিনের টেস্ট।
তবে, ভারত ও ইংল্যান্ডের এই গোলাপি বলের দিনরাত্রির টেস্ট খেলায় কোনও বৃষ্টি ছিল না। তবু খেলা অভাবিত ভাবে দু’দিনেই শেষ হল।
শেষ হল জয়-পরাজয়ের স্পষ্ট মীমাংসা নিয়ে। এ-খেলা নিশ্চয় ইতিহাস হয়ে থাকবে। ক্রিকেট যে বার বার অপ্রত্যাশিতকে উপহার দিতে পারে, তারই এক দৃষ্টান্ত রূপে।