জয়জিৎ বসু। গোলাপি বলে খেলা ভারতের প্রথম ব্যাটসম্যান। ছবি— জয়জিতের ফেসবুক পেজ থেকে।
ভারতে গোলাপি বলে খেলা প্রথম টেস্ট ম্যাচ বসছে কলকাতার সাধের ইডেন গার্ডেন্সে। তিন বছর আগে ভারতে প্রথম বার গোলাপি বলে খেলাটাও হয়েছিল এই ইডেনেই। সিএবি-র সুপার লিগের ফাইনালে সে বার মুখোমুখি হয়েছিল মোহনবাগান এবং ভবানীপুর। খেলেছিলেন ঋদ্ধিমান সাহা, মহম্মদ শামিরা। টস হেরে প্রথমে ব্যাট করেছিল মোহনবাগান। আর প্রথম বলটা ফেস করেছিলেন মোহনবাগানের ঘরের ছেলে জয়জিৎ বসু। কেমন ছিল গোলাপি বলে খেলার সেই অভিজ্ঞতা? লাল বা সাদা বলে খেলার থেকে এটা কতটাই বা আলাদা? আনন্দবাজার ডিজিটালকে জানালেন জয়জিৎ।
গোলাপি বল খেলা দেশের প্রথম ব্যাটসম্যান। এমন একটা রেকর্ড যা কোনওদিন ভাঙবে না, কেমন ছিল সেই অভিজ্ঞতা?
একেবারে আলাদা একটা অভিজ্ঞতা। এই রঙের বল খেলতে আপনি অভ্যস্ত নন। তাই গোটা ব্যাপারটাই নতুন রকমের। প্রথম বার যখন প্র্যাক্টিসে বলটা খেললাম, তখন বলটা বেশ তাড়াতাড়ি এল। মানে খেলতে গেলে একটু পিছতে হবে। বলটা কিন্তু গতিতেও বিট করতে পারে।
আপনার সতীর্থদের কাছে গোলাপি বলে খেলার ব্যাপারটা কতটা আকর্ষণীয় ছিল?
সেই ম্যাচে ঋদ্ধি, শামিরা সবাই খেলেছিল। সবাই দারুণ উত্তেজিত ছিল। আমাদের কাছে এটা ছিল একটা নতুন চ্যালেঞ্জ আর আমরা মুখিয়ে ছিলাম।
গোলাপি বলে খেলতে কি আলাদা কোনও প্রস্তুতি দরকার?
এই বল প্রথম দিকে লাল বলের থেকে অনেক বেশি সুইং করে। বলের পালিশ চট করে উঠে যায় না। লাল বলের ক্ষেত্রে বোলারকে সব সময় পালিশ ধরে রাখার চেষ্টা করে যেতে হবে। এ ক্ষেত্রে তেমনটা নয়। তবে এই বলে খেলতে গেলে বলটার সঙ্গে অভ্যস্ত হতেই হবে।
আরও পড়ুন: টিম তুলে নেওয়া থেকে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি, বার বার বিতর্কে জড়িয়েছেন শাকিব
এই ‘অভ্যস্ত’ হতে কত দিন সময় লাগে?
সপ্তাহ খানেক বা দশ দিন তো লাগবেই। লাল অথবা সাদা— ছোটবেলা থেকে আমরা এই দুটো রঙের বলেই খেলে অভ্যস্ত। কোনও পেস বোলারের হাত থেকে বল ব্যাটে আসতে ০.৪ থেকে ০.৫ সেকেন্ড রিঅ্যাকশন টাইম পাওয়া যায়। ফলে পেসারদের খেলাটা মোটেও সহজ কাজ নয়। এর পর যেহেতু এ ক্ষেত্রে বলের রংটাও পাল্টে যাচ্ছে, তাই গোলাপি বলের সঙ্গে অ্যাডজাস্ট করতে বা চোখ সেট করতে কিছুটা সময় তো লাগবেই।
গোলাপি বল খেলার ক্ষেত্রে পিচ কি কোনও ফ্যাক্টর?
হ্যাঁ অবশ্যই। নির্ভর করছে আপনি কোন পিচে খেলছেন। যদি আপনি গ্রিন টপে খেলেন, তা হলে অনেক ক্ষণ পালিশ থাকবে। বল দারুণ মুভ করবে, রান করাটাই মুশকিল হয়ে যাবে। আবার যদি টিপিক্যাল ভারতীয় উইকেটে খেলা হয়, যেখানে ঘাস কম, সেখানে বলটা খুব তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে রিভার্স সুইং বা স্পিন করাতে সুবিধা হয়। বলটা হঠাৎ হঠাৎ স্পিন করে। উইকেট শুকনো থাকলে কিন্তু ব্যাট করাটা বেশ কঠিন হয়ে যাবে। তাই গোটাটাই নির্ভর করবে পিচ কেমন থাকবে, তার উপর।
প্রথম বার গোলাপি বলে টেস্ট ম্যাচ হবে ইডেনে।
সেই ম্যাচে উইকেট কেমন ছিল?
প্রথমে উইকেটে ঘাস ছিল। উইকেট একটু ভিজেও ছিল। আর তাতেই দারুণ সিম মুভমেন্ট হচ্ছিল। তবে টেস্ট ক্রিকেটে তো প্রতি দিন উইকেটের ঘাস ছাঁটা হয়, তখন ব্যাট করাটা সহজ হয়ে যায়।
ক্রিকেটমহলে ফিসফাস, ইনিংসের পরের দিকে না কি এই বল বোলারদের বেশ সমস্যায় ফেলে?
এটা আসলে একটা সাদা কুকাবুরা, যার উপর গোলাপি রং করা। সাদা কুকাবুরা প্রথম ১০-১৫ ওভার সুইং করে। তারপর গোটাটাই ব্যাটসম্যানস গেম, বলটা নরম হয়ে যায়। গোলাপি বলের ক্ষেত্রেও ঠিক তাই। ব্যাটসম্যান সহায়ক উইকেট হলে, এই বল হয়তো প্রথম ২০-২৫ ওভার সুইং করবে। তারপর সোজা সোজা বল আসবে। দিন যত গড়ায়, ব্যাটিং করাটা সহজ হয়ে যায়।
দিনের কোন সময় এই বল খেলা সবচেয়ে কঠিন?
রোদ থাকলে।
কেন?
রোদ থাকলে এই বল এতটাই চকচক করে যে, বলটা পড়তে অসুবিধা হয়। বলটা খুব চোখে লাগে। বরং যত অন্ধকার হয়, খেলা সহজ হয়ে যায়।
প্রথম বার গোলাপি বলে খেলা ঘরোয়া ম্যাচ হলেও, আপনাদের সেই খেলা নিয়ে বেশ হাইপ তৈরি হয়েছিল। আর এ বার ডে-নাইট টেস্ট। এটাই কি টেস্ট ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ?
আজকাল তো সকলেই খুব ব্যস্ত। টানা পাঁচদিন খেলা দেখতে যাওয়া সম্ভব হয় না। কিন্তু বিকেলে খেলা বলেই লোকে যদি তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করে মাঠমুখো হয় তা হলে তো ভালই।
আরও পড়ুন: মুখ খুললেন শাকিব, পাশে থাকার বার্তা দিলেন শেখ হাসিনা, বিসিবি