২৭ তারিখ বাংলা ভাগ হয়ে যাওয়ার সেই ম্যাচ। ইস্টবেঙ্গল বনাম মোহনবাগান। মাঠে দুই প্রধানের সাক্ষাৎ মানে উত্তেজনার পারদ আকাশছোঁয়া। গ্যালারিতে তৈরি হয় শব্দব্রহ্ম। ৯০ মিনিটের লড়াই চায়ের পেয়ালায় তুফান তোলে। শুক্রবারের মহা ম্যাচে শব্দব্রহ্ম তৈরি হওয়ার অবশ্য কোনও সম্ভাবনা নেই। দর্শকশূন্য মাঠে খেলা হলেও লড়াইটা থাকবে একই। সেই ম্যাচের আগে এক বার ফিরে দেখা দুই দলের সেরা কিছু মুহূর্ত, কিছু অঘটন, কিছু বিতর্ক।
৮ অগস্ট, ১৯২১। ইতিহাসের প্রথম মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল ম্যাচ। কোচবিহার কাপের সেই ম্যাচ গোলশূন্যই থেকে যায়। ১০ অগস্ট রিপ্লে খেলা হলে ৩-০ গোলে যেতে সবুজ-মেরুন।
২৮ মে, ১৯২৫ সালে কলকাতা লিগে প্রথম বার মুখোমুখি হয় দুই প্রধান। নেপাল চক্রবর্তীর গোলে সেই ম্যাচ জিতে নেয় ইস্টবেঙ্গল।
দেশের স্বাধীনতার আগে শেষ ডার্বি জেতে মোহনবাগান। ১৯৪৭ সালের শিল্ড ফাইনালে ইস্টবেঙ্গলকে ১-০ গোলে হারিয়ে শিল্ড জেতে মোহনবাগান। ১৯১১ সালের পরে দ্বিতীয় বার আইএফএ শিল্ড জেতে শিবদাস ভাদুড়ির অনুজরা।
২৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৫। লাল-হলুদ ভক্তদের কাছে স্মরণীয় দিন। আইএফএ শিল্ড ফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীকে ৫-০ গোলে বিধ্বস্ত করে ইস্টবেঙ্গল। সুরজিত সেনগুপ্ত প্রথম গোল করেন। শ্যাম থাপা জোড়া গোল করেন। রঞ্জিত মুখোপাধ্যায়, শুভঙ্কর সান্যালও মোহনবাগানের জালে বল জড়ান। সেই জয় নিয়ে আজও গর্ব করতে শোনা যায় ইস্টবেঙ্গল ফ্যানদের। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর কাছে ৫ গোলে হারের শোক সহ্য করতে না পেরে আত্মঘাতী হয়েছিলেন মোহনবাগান অন্ত প্রাণ উমাকান্ত পালধি। তার সুইসাইড নোটে লেখা ছিল— ‘পরের জন্মে যেন মোহনবাগানের ফুটবলার হয়ে ইস্টবেঙ্গলকে গোল দিতে পারি।’
২৪ জুলাই, ১৯৭৬। ডার্বির ইতিহাসে নাম তুলে নেন মোহনবাগানের মহম্মদ আকবর। উলগানাথনের ক্রস থেকে মাত্র ১৬ সেকেন্ডে গোল করেছিলেন তিনি। ডার্বির ইতিহাসে এটাই এখনও পর্যন্ত দ্রুততম গোল। কলকাতা লিগের সেই ম্যাচ মোহনবাগান জেতে ১-০ গোলে।
১৬ অগস্ট, ১৯৮০। ডার্বির ইতিহাসে কালো দিন। মাঠের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছিল গ্যালারিতে। সে দিন ইডেনে তিল ধারণের জায়গা ছিল না। খেলা শুরু হয়েছিল চড়া মেজাজে। খেলা ভেস্তে দেওয়ার জন্য ফাউল, পাল্টা ফাউল চলছিল। দ্বিতীয়ার্ধের ১১ মিনিটের মাথায় বল দখলের লড়াইকে কেন্দ্র করে দুই দলের দুই ফুটবলারকে লাল কার্ড দেখানো হয়। সেই আঁচ ছড়িয়ে পরে গ্যালারিতে। পদপিষ্ট হয়ে প্রাণ হারান ১৬ জন।
১৩ জুলাই, ১৯৯৭। ডার্বির ইতিহাসে সব চেয়ে বেশি দর্শক খেলা দেখতে এসেছিলেন। সে দিন ১ লক্ষ ৩১ হাজার দর্শক উপস্থিত ছিলেন যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে। ইস্টবেঙ্গল ৪-১ গোলে মোহনবাগানকে হারিয়েছিল। ভাইচুং ভুটিয়া হ্যাটট্রিক করেছিলেন। ম্যাচ শুরু হওয়ার দিন কয়েক আগে মোহনবাগান কোচ অমল দত্তর মন্তব্যে তেতে গিয়েছিলেন ইস্টবেঙ্গল ফুটবলাররা। মাঠে নেমে জবাব দিয়েছিলেন পিকে-র ছেলেরা।
২২ ফেব্রুয়ারি, ২০০৯। ইস্টবেঙ্গলের কোচ হয়ে এসে ইতিহাসের চাকা ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন সুভাষ ভৌমিক। তাঁর হাতে ইস্টবেঙ্গলের রিমোট কন্ট্রোল ওঠার আগে দুই প্রধানের সাক্ষাতে শেষ হাসি তোলা থাকত মোহনবাগানের জন্য। ২২ ফেব্রুয়ারির ডার্বিতে সৈয়দ রহিম নবি জোড়া গোল করেন। বর্তমান ভারত অধিনায়ক সুনীল ছেত্রীকে দিয়ে একটি গোল করিয়েছিলেন নবি।
২৫ অক্টোবর, ২০০৯। ডার্বিতে মোহনবাগানের শাপমুক্তি। ৩৪ বছরের জ্বালা জুড়োয় মোহনবাগান সমর্থকদের। ইস্টবেঙ্গলকে ৩-৫ গোলে হারায় সবুজ-মেরুন শিবির। এডে চিডি একাই ৪ গোল করেছিলেন। বাগানের অপর গোলদাতা মণীশ মাথানি। তবে ৫ গোল দিলেও ৩ গোল হজমও করেছিল মোহনবাগান।
৯ ডিসেম্বর, ২০১২। অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছিল যুবভারতী। বিরতির আগে হরমনজ্যোৎ সিংহ খাবার ফ্রি কিক থেকে গোল করে এগিয়ে দিয়েছিলেন ইস্টবেঙ্গলকে। পরে নির্মল ছেত্রী ও খাবরার মধ্যে বল দখলের লড়াইকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। রেফারি বিষ্ণু চৌহানের সঙ্গে তর্ক জুড়ে লাল কার্ড দেখেন মোহনবাগান তারকা ওডাফা ওকোলি। আগুনে যেন ঘি পড়ে। গ্যালারি থেকে উড়ে আসে ইট, পাথর। উড়ে আসা ইটের আগাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন রক্তাক্ত রহিম নবি। বিরতির পরে আর মাঠে নামেনি মোহনবাগান। ইস্টবেঙ্গলকেই জয়ী ঘোষণা করে দেওয়া হয়।
এখনও পর্যন্ত দুই দল মুখোমুখি হয়েছে ৩৭১ বার। যার মধ্যে ইস্টবেঙ্গল জিতেছে ১২৯ বার এবং মোহনবাগান ১২০ বার। এ বার আইএসএল দেখবে দুই প্রধানের মহারণ। মেগা টুর্নামেন্টের প্রথম ডার্বি জিতবে কারা? সেই দিকেই তাকিয়ে সমর্থকরা।