‘‘এখানে স্কোরাররা তো বেশ সুন্দরী।’’ ঈষৎ লঘু স্বরেই কথাগুলি বলেছিলেন ইশান্ত শর্মা। ২০১১ সালে দিল্লির বাস্কেটবল অ্যাসোসিয়েশন লিগের বিশেষ অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত হয়ে। কিছু ক্ষণের মধ্যই অবশ্য পেসারের ভুল শুধরে দেন তাঁর বন্ধু। যে তরুণীকে ফ্লার্ট করে তিনি এই কথাগুলো বলেছেন, তিনি স্কোরার নন। বরং তিনি জাতীয় দলের নামী বাস্কেটবল খেলোয়াড় প্রতিমা সিংহ।
হবু স্ত্রীর সঙ্গে এ ভাবেই আলাপ হয়েছিলে ইশান্তের। সেই অনুষ্ঠানে তিনি গিয়েছিলেন প্রতিমার দিদি প্রিয়ঙ্কার আমন্ত্রণে। প্রসঙ্গত, প্রতিমার বাকি ৪ বোনই বাস্কেটবল খেলোয়াড়। তাঁর দিদি প্রিয়ঙ্কা বর্তমানে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব স্পোর্টসে বাস্কেটবল কোচ। বাকি বোনদের মধ্যে দিব্যা অনূর্ধ্ব ১৬ পুরুষ বাস্কেটবল দলের প্রশিক্ষক। প্রশান্তি মহিলাদের জাতীয় দলের অধিনায়ক। আকাঙ্ক্ষা এবং প্রতিমাও খেলছেন জাতীয় দলে। বাস্কেটবলের দুনিয়ায় তাঁরা পরিচিতি ‘সিংহ সিস্টার্স’ নামে।
প্রতিমার বোন দিব্যা ছিলেন ইশান্তের বন্ধু। তাঁর আমন্ত্রণেই বাস্কেটবল টুর্নামেন্টে হাজির ছিলেন ভারতীয় পেসার। কিন্তু কী করে আর জানবেন, সেখানেই তাঁর অপেক্ষায় থাকবেন হবু জীবনসঙ্গিনী!
বাস্কেটবলের সেই প্রতিযোগিতায় প্রথম দর্শনেই ‘স্কোরার’ প্রতিমাকে ভাল লেগেছিল ইশান্তের। কিন্তু প্রতিমা তাঁকে বিশেষ পাত্তা দেননি। ফেসবুকে ইশান্তের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট গ্রহণ করতেই সময় নিয়েছিলেন ২ বছর। এর পর ধীরে ধীরে দু’জনের বন্ধুত্ব এবং সেখান থেকে প্রেমপর্ব শুরু হয়। কিন্তু বিয়ের প্রস্তাব দিতে ইশান্ত সময় নিচ্ছিলেন।
শেষে দ্বিধা কাটিয়ে ২০১৬ সালে প্রতিমাকে প্রোপোজ করেন ইশান্ত। ৩ বছরের প্রেমপর্বের পরে ২০১৬ সালের জুন মাসে তাঁদের এনগেজমেন্ট হয়। বিয়ে হয় আরও ৬ মাস পরে। গুরুগ্রামে নটিং হিলস ফার্মহাউসে সাতপাকে বাঁধা পড়েছিলেন ইশান্ত-প্রতিমা। তাঁদের বিয়ের আসরে অতিথিদের মধ্যে বড় অংশ ছিল ক্রিকেট এবং বাস্কেটবল দুনিয়ার বিখ্যাত মুখ।
বিয়েতে নবদম্পতিকে শুভেচ্ছা জানাতে হাজির ছিলেন টিম ইন্ডিয়ার প্রাক্তন অধিনায়ক মহেন্দ্র সিংহ ধোনি, ক্রিকেটার যুবরাজ সিংহ এবং অলিম্পিকে পদকজয়ী কুস্তিগীর যোগেশ্বর দত্ত।
ইশান্ত এবং প্রতিমা জানিয়েছেন, খেলাধূলার প্রতি ভালবাসাই তাঁদের সম্পর্ককে দ্রুত গাঢ় করেছে। বিয়ের পরও জাতীয় দলের হয়ে খেলা চালিয়ে যাবেন, আগেই বলেছিলেন প্রতিমা। সে কথা তিনি রেখেছেন। স্ত্রীর কেরিয়ারে বাধা হয়ে দাঁড়াননি ‘বাস্কেটবল পরিবার’-এর জামাই ইশান্তও।
নিজের ম্যাচের জন্য প্রতিমা সব সময় ইশান্তের ম্যাচ দেখতে হাজির থাকতে পারেন না। কিন্তু সেটা নিয়ে তাঁদের দাম্পত্যে সমস্যা হয়নি। নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়ায় সব কিছু ঠিক করে নেন দুই খেলার জাতীয় দলের দুই সদস্য।
তবে প্রেমপর্বের শুরুতে সব কিছু এত মসৃণ ছিল না। নিজেই জানিয়েছেন ইশান্ত। বলেছেন, তাঁকে পছন্দ করতেন না প্রতিমা। ভারতে যে হেতু ক্রিকেট অন্য সব খেলার তুলনায় অনেক বেশি জনপ্রিয়, প্রতিমার মনে হত ইশান্ত জাতীয় দলের ক্রিকেটার হিসেবে খুব দাম্ভিক।
নিজেদের খেলা নিয়েও রসিকতার ছলে তর্ক লেগেই থাকত দু’জনের মধ্যে। প্রতিমা বলতেন, ক্রিকেটে কোনও শারীরিক কসরতের দরকারই পড়ে না। অন্য দিকে ইশান্তের দাবি ছিল, বাস্কেটবলে অত পরিশ্রমের কিছু নেই। তবে দু’জনেই আখেরে অন্যের খেলার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। সেটাই তাঁদের সম্পর্কের ভিত্তি বলে মনে করেন এই খেলোয়াড় দম্পতি।
দিল্লির ছেলে ইশান্ত ক্রিকেটের জন্য দশম শ্রেণির পরে স্কুলের পর্ব শেষ করেন। অনূর্ধ্ব ১৯, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট, রঞ্জি থেকে শুরু টেস্ট অভিষেক। সব কিছুই তিনি এবং বিরাট কোহালি শুরু করেছেন একই ম্যাচ দিয়ে। উচ্চতার জন্য সতীর্থদের কাছে ‘লম্বু’ ডাকনাম পাওয়া ইশান্ত দেশের অন্যতম দ্রুতগতির ফাস্ট বোলার।
২০০৭ সালের মে মাসে বাংলাদেশ সফরে টেস্ট দলে তিনি সুযোগ পান মুনাফ পটেলের পরিবর্ত খেলোয়াড় হিসেবে। কেরিয়ারে ৯৭ টেস্টে এখনও অবধি উইকেট পেয়েছেন ২৯৭টি। সেরা ৭/৭৪। ব্যাট হাতে সর্বোচ্চ ৫৭। ওয়ান ডেতে ৮০টি ম্যাচে উইকেট শিকার ১১৫টি। সেরা বোলিং ৪/৩৪। রান করেছেন ৭২। সর্বোচ্চ ১৩।
বিশ্বে পঞ্চম সর্বকনিষ্ঠ বোলার হিসেবে টেস্টে ১০০ উইকেট নিয়েছেন। পঞ্চম ভারতীয় হিসেবে দ্রুততম ১০০ উইকেটের মালিক হয়েছেন ওয়ানডেতে।
আইপিএল-এ ইশান্ত কেরিয়ার শুরু করেছিলেন নাইট বাহিনীর হয়ে। এর পর তিনি ডেকান চার্জার্স, হায়দরাবাদ, পুণে এবং পঞ্জাবের হয়ে খেলেছেন। বর্তমানে তিনি দিল্লি ক্যাপিটালসের সদস্য।
অন্য দিকে উত্তরপ্রদেশের মেয়ে প্রতিমা আদতে রাজপুত। ২০০৬ সালে জাতীয় দলে তাঁর আত্মপ্রকাশ জুনিয়র দলে। পরবর্তীতে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস্কেটবল দলেও তিনি ছিলেন প্রথম সারির খেলোয়াড়।
২০০৬, ২০০৭ এবং ২০০৯ সালে জাতীয় দলের হয়ে প্রতিমা প্রতিনিধিত্ব করেছেন ২০০৬ এশিয়ান বাস্কেটবল চ্যাম্পিয়নশিপে। ২০১০ এশিয়ান গেমসেও তিনি ছিলেন দলের উল্লেখযোগ্য সদস্য।
দলগত দু’টি খেলায় দেশকে সাফল্য এনে দেওয়া দুই তারকা খেলোয়াড় মাঠ এবং কোর্টের বাইরে সংসারও করছেন চুটিয়ে।