দাপট: ছয় উইকেট নিয়ে বাংলাকে জেতানোর নেপথ্যে ঈশান। ছবি: পিটিআই।
ভারতীয় ‘এ’ ও বোর্ড প্রেসিডেন্ট দলের হয়ে খেলার পরে অদ্ভুত আত্মবিশ্বাস পেতে শুরু করেছেন ঈশান পোড়েল। যার প্রমাণ পাওয়া গেল বিজয় হজ়ারে ট্রফিতে জম্মু ও কাশ্মীরের বিরুদ্ধে। ১০ ওভারে ৩৪ রানে ছয় উইকেট নিয়ে বাংলাকে সহজ জয় উপহার দিলেন ২১ বছর বয়সি পেসার। বাংলা জিতল আট উইকেটে। ঈশানের পরিসংখ্যান ১০-৩-৩৪-৬। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে প্রথম বার পাঁচ উইকেট প্রাপ্তি তাঁর।
সোমবার জয়পুরে টস জিতে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন বাংলার নতুন অধিনায়ক অভিমন্যু ঈশ্বরন। দিনের দ্বিতীয় ওভারের চতুর্থ বল থেকেই ভাঙন শুরু হয় জম্মু ও কাশ্মীর শিবিরে। ওপেনার কামরান ইকবাল (০) ঈশানের বলে কাট করতে গিয়ে বোল্ড হয়ে ফিরে যান। চতুর্থ ওভারে বল করতে এসে ফের উইকেট আসে ঈশানের ঝুলিতে। অফস্টাম্পের উপর থেকে তাঁর বল বাইরের দিকে কাট করে শুভম খাজুরিয়ার ব্যাট ছুঁয়ে চলে যায় স্লিপে মনোজ তিওয়ারির হাতে। ততক্ষণে রক্তের স্বাদ পেয়ে গিয়েছেন বাংলার পেসার।
এক দিক থেকে অশোক ডিন্ডা একের পর এক মেডেন ওভার করে চলেছেন। অন্য দিক থেকে সুইং ও বাউন্সে পরাস্ত করে চলেছেন ঈশান। ছয় উইকেটের মধ্যে চারটিই কট-বিহাইন্ড। একটি কট ও বোল্ড ও একটি বোল্ড। ৪৮.২ ওভারে ১৬৯ রানে শেষ হয়ে যায় জম্মু ও কাশ্মীরের ইনিংস। জবাবে ২৮ ওভারে দুই উইকেট হারিয়ে ১৭৫ রান করে বাংলা। ৮০ বলে অপরাজিত ৮৬ রানের দুরন্ত ইনিংস খেলেন শ্রীবৎস গোস্বামী। অধিনায়ক অভিমন্যুও ৫৫ বলে ৫১ রান করে ফিরে যান। শেষ ম্যাচে সেঞ্চুরি করলেও এ ম্যাচে রান পাননি অভিষেক রামন (৪)। মনোজ তিওয়ারি ২৬ বলে অপরাজিত ২৭ রান করেন। মঙ্গলবার তামিলনাড়ুর বিরুদ্ধে নামার আগের দিন, ফর্মে ফেরায় খুশি কোচ অরুণ লাল।
ঈশান মনে করছেন, আগের চেয়ে গতি অনেক বেড়েছে। দ্রুত হাঁপিয়ে পড়ার প্রবণতাও নেই। কী করে এতটা পার্থক্য গড়লেন? জয়পুর থেকে ফোনে তরুণ পেসার বলছিলেন, ‘‘মরসুম শুরু হওয়ার আগে যে ফিটনেস ট্রেনিং করেছি, তার ফলই এখন পাচ্ছি।’’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘ভারতীয় ‘এ’ ও বোর্ড প্রেসিডেন্ট দলের হয়ে খেলাও উপভোগ করেছি। ফ্যাফ ডুপ্লেসিদের বিরুদ্ধে যে ছন্দে বল করেছি, এখানেও তাই করেছি। ওখানে যে বলে উইকেট পাইনি, এখানে তাতেই উইকেট এল।’’
এ দিকে, রবিবার রাতে অশোক ডিন্ডার নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল বাংলা শিবিরে। দলীয় বৈঠকে কোচ অরুণ লাল যে ১২ জনের দল ঠিক করেছিলেন, তাতে ছিলেন না ডিন্ডা। তাঁর পরিবর্তে রাখা হয়েছিল ঈশান পোড়েলকে। কিন্তু পারভেজ রসুলের দলের বিরুদ্ধে দিনের প্রথম বলটাই এল ডিন্ডার হাত থেকে। ৮.২ ওভারে ২৭ রান দিয়ে তাঁর প্রাপ্তি দুই উইকেট। একটি করে উইকেট মনোজ ও অর্ণব নন্দীর। হঠাৎ কী করে প্রথম একাদশে জায়গা পেলেন বাংলার অভিজ্ঞ সৈনিক? কোচ অরুণ লালের সাফ মন্তব্য, ‘‘ডিন্ডার ইচ্ছেশক্তিই ওকে প্রথম একাদশে জায়গা করে দিয়েছে। আর সেই সুযোগেই বাজিমাত করে জয়ে বড় ভূমিকা নিল।’’
আজ, মঙ্গলবার একই মাঠে বাংলার প্রতিপক্ষ তামিলনাড়ু। তিন ম্যাচে তিনটি জিতে গ্রুপ ‘সি’-র শীর্ষে তারা। বাংলা তিন ম্যাচে দু’টি জিতে চতুর্থ স্থানে। দু’দলের হাতেই এখনও বাকি পাঁচ ম্যাচ। কিন্তু কোচ অরুণ মনে করছেন, এটাই তাঁদের নক-আউট। কারণ, গুজরাতের বিরুদ্ধে বাংলা প্রথম ম্যাচ হেরেছে। এই গ্রুপ থেকে দু’টি দল সুযোগ পাবে কোয়ার্টার ফাইনালে। অরুণ বলছিলেন, ‘‘ভাল ফর্মে আছে দীনেশ কার্তিক, বিজয় শঙ্কর। ওদের হারাতে পারলে অনেকটা কাজ এগিয়ে যাবে আমাদের।’’