ভারতীয় ফুটবলের মাথায় কি বসতে চলেছেন বাংলার সুব্রত দত্ত? গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
ভারতীয় ফুটবলের মাথায় কি বসতে চলেছেন বাংলার সুব্রত দত্ত? একটি চিঠি ঘিরে এই জল্পনা শুরু হয়েছে। যা খবর পাওয়া যাচ্ছে, তাতে প্রফুল্ল পটেলকে ‘সম্মানজনক বিদায়’ জানিয়ে সুব্রতকে সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের (এআইএফএফ) সভাপতি করা হতে পারে। স্বয়ং সুব্রত এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। তাঁর সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি।
যে চিঠি ঘিরে এই জল্পনা, সেটির প্রেরক দিল্লি ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাজি প্রভাকরণ। তিনি চিঠিটি দিয়েছেন সব রাজ্যের ফুটবল নিয়ামক সংস্থাকে। সেই চিঠিতে বর্তমান ফেডারেশন সভাপতি প্রফুল্লের ভূয়সী প্রশংসা করে রাজ্য সংস্থাগুলিকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তাঁকে যেন সারা জীবনের স্বীকৃতি জানিয়ে সম্মান দেওয়া হয়। যে সম্মানের নাম ‘ভারতীয় ফুটবল রত্ন’। যা দেশের কোনও ফুটবল প্রশাসকের কাছে সর্বোচ্চ সম্মান। ওই চিঠিতে আরও প্রস্তাব করা হয়েছে যে, ওই সম্মানপ্রদান অনুষ্ঠান যেন ফেডারেশনের বর্তমান সহ-সভাপতি সুব্রতের নেতৃত্বে হয়। তাঁকে যেন ওই সংক্রান্ত কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়।
দেশের ফুটবল-রাজনীতি সম্পর্কে ওয়াকিবহালরা অবশ্য মনে করছেন, আপাতদৃষ্টিতে নিরীহ-দর্শন হলেও প্রফুল্লকে নিয়ে এই উদ্যোগের অন্য ‘তাৎপর্য’ আছে। তাঁরা মনে করছেন, কাউকে সারা জীবনের সম্মান দেওয়ার মধ্য দিয়ে সাধারণত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে বার্তা দেওয়া যে, এবার তাঁর সময় শেষ হয়েছে। নতুন করে তাঁর আর কিছু দেওয়ার নেই। এ ক্ষেত্রেও সে ভাবে প্রফুল্লকে বার্তা বা ইঙ্গিত দেওয়া হচ্ছে। তখন সভাপতির পদে বসবেন অধুনা সহ-সভাপতি বাংলার সুব্রত। প্রসঙ্গত, সুব্রত এখন বাংলার ফুটবল নিয়ামক সংস্থা আইএফএ-রও চেয়ারম্যান।
যে চিঠি ঘিরে এই জল্পনা শুরু হয়েছে।
সুব্রতকে চেয়ারম্যান করে পুরস্কার প্রদানের কমিটিতে বিভিন্ন রাজ্য সংস্থা থেকে ছ’জনের নাম প্রস্তাব করার অনুরোধও করা হয়েছে ওই চিঠিতে। শাজি চিঠিতে লিখেছেন, ‘প্রফুল্ল পটেলকে সভাপতি হিসেবে পেয়ে আমরা ভাগ্যবান। ওঁর জন্যই ভারতীয় ফুটবলের উন্নতি হয়েছে। ফেডারেশন আর্থিক দিক দিয়ে সুরক্ষিত হয়েছে। ব্যক্তিগত ভাবে আমি মনে করি, সব রাজ্য সংস্থাগুলির এক সঙ্গে এগিয়ে এসে ওঁকে পুরস্কৃত করা উচিত। ভারতীয় ফুটবল রত্ন নামে একটি পুরস্কার চালু করা হোক, যা ভবিষ্যতে দেশের সেরা ফুটবল প্রশাসককে নিয়ম করে দেওয়া হবে। যত দ্রুত সম্ভব একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করে ওঁকে পুরস্কৃত করা হোক।’
ফুটবল-রাজনীতির জগতের একাংশ মনে করছে, এর মধ্যে সুব্রতের ভূমিকা থাকলেও থাকতে পারে। কারণ, প্রফুল্ল বিদায় নিলে সহ-সভাপতি হিসেবে তাঁর নামটাই সভাপতির দৌড়ে এগিয়ে থাকবে। সুব্রতের ঘনিষ্ঠরা অবশ্য জানাচ্ছেন, এই সম্মানপ্রদানের মধ্যে সুব্রতের কোনও ভূমিকা নেই। তিনি এ বিষয়ে বিন্দু বিসর্গও জানেন না। তাঁর এক ঘনিষ্ঠের দাবি, সুব্রতকে এর মধ্যে ইচ্ছাকৃত ভাবে জড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে তাঁর ফেডারেশনের সভাপতি হওয়ার পথ বরং উল্টে অমসৃণ হতে পারে। তাঁকে কমিটির চেয়ারম্যান করে সেই কমিটি প্রফুল্লকে ‘সারা জীবনের সম্মান’-এর মতো বার্তা দিলে বিভিন্ন রাজ্য সংস্থার ফুটবল কর্তারা তা ‘সাদা চোখে’ দেখবেন না।