শ্রেয়স আয়ারকে ছাড়াই এ বার খেলতে নামবে কেকেআর। —ফাইল চিত্র
আন্দ্রে রাসেল, শাকিব আল হাসান, লিটন দাস থাকতে শেষে নীতীশ রানা! অখ্যাত এক জনের হাতে এ বার কলকাতা নাইট রাইডার্সের দায়িত্ব।
কেন?
যা জানা যাচ্ছে, নাইটদের নতুন কোচ চন্দ্রকান্ত পণ্ডিতের জন্যই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পণ্ডিত কলকাতা নাইট রাইডার্সের প্রথম ভারতীয় কোচ। তাঁকে এই বছরই দায়িত্ব দিয়েছেন শাহরুখ খানরা। ঘরোয়া ক্রিকেটে পণ্ডিতমশাইয়ের নামে উঠতি ক্রিকেটারদের হাঁটু কাঁপতে থাকে। কিন্তু রাসেলরা তো সারা বিশ্বে খেলে বেড়িয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবেন তো পণ্ডিত? এই প্রশ্ন ঘুরছিল পণ্ডিতকে কোচ করার পর। পণ্ডিত বলেন, “জীবন এবং ক্রিকেট দুই ক্ষেত্রেই শৃঙ্খলা জরুরি বলে আমাকে শেখানো হয়েছে। রমাকান্ত আচরেকর (সচিন তেন্ডুলকরের ক্রিকেটগুরু) এবং অশোক মাঁকড়ের (বিনু মাঁকড়ের পুত্র) কাছে আমি এটাই শিখেছি। এঁরাই আমাকে শৃঙ্খলার গুরুত্ব বুঝিয়েছেন। সেটাই আমি আমার দলে আনার চেষ্টা করি।”
পণ্ডিত মানেই কড়া শৃঙ্খলা। যা ভাঙলে ঘরোয়া ক্রিকেটে নাকি চড়ও খেতে হয়েছে। মধ্যপ্রদেশ বাংলাকে হারিয়ে ২০২১-২২ মরসুমে ফাইনালে উঠেছিল। সেই ম্যাচের পর কোনও উচ্ছ্বাস দেখা যায়নি ক্রিকেটারদের মধ্যে। এর পিছনেও ছিলেন পণ্ডিত। তিনি দলের মধ্যে একটাই জিনিস ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন যে, রঞ্জি জিততে হবে। সেটা না হওয়া পর্যন্ত কোনও উচ্ছ্বাস পছন্দ করেন না তিনি। সাজঘরে গান শোনা, জোরে কথা বলা, এমন অনেক কিছুই নাকি পছন্দ নয় পণ্ডিতের। ঘরোয়া ক্রিকেটে এই ভাবেই সাফল্য এনে দিয়েছেন একের পর এক দলকে। শোনা যায় বাংলা দল এই মরসুমে নাকি পণ্ডিতকে কোচ করার কথা ভেবেছিল। কিন্তু এই বিরাট শৃঙ্খলার কথা ভেবে পিছিয়ে আসা হয়। বাংলা দলে খেলেন মনোজ তিওয়ারির মতো ক্রিকেটার। যিনি রাজ্যের ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী। এমন একটা দলে পণ্ডিতের শাসন কতটা সফল হবে ভেবেই তাঁকে আর দায়িত্ব দেওয়া হয়নি বলে মনে করা হয়। সেই পণ্ডিত এখন আইপিএলে কলকাতা দলের কোচ।
এ বার অধিনায়ক নীতীশ রানা। ছবি: কেকেআর
আইপিএল মানে ম্যাচের পর সারা রাতের পার্টি। ক্রিকেটের সঙ্গে আইপিএলে বিনোদন হাত ধরাধরি করে চলে। ঘরোয়া ক্রিকেটের সঙ্গে আইপিএলের তফাত অনেকটাই। সেখানে পণ্ডিত এসেছেন তাঁর শৃঙ্খলা নিয়ে। মিশে গিয়েছেন রাসেলদের সঙ্গে। আইপিএল শুরু হওয়ার আগে বার বার পণ্ডিত এবং রাসেলের ছবি দেখা গিয়েছে। তবে ইতিমধ্যেই ক্রিকেটারদের সঙ্গে সংবাদমাধ্যমের কথা বলার উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এর পিছনে পণ্ডিতের মস্তিষ্ক থাকতেই পারে। তিনি এমন একজন কোচ, যিনি দলের রাশ সব সময় নিজের হাতে রাখতে পছন্দ করেন। সেই কারণেই হয়তো রাসেল, নারাইন, সাউদিদের মতো কাউকে নেতা না করে অপেক্ষাকৃত ‘লো প্রোফাইল’-এর এক জনকে অধিনায়ক বেছেছে কলকাতা।
চিরাচরিত ধারণা ভেঙে দিচ্ছে কলকাতা নাইট রাইডার্স। আইপিএল মানেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সেরাদের লড়াই। বিভিন্ন দেশের সেরা ক্রিকেটারদের সঙ্গে মিশে যান ভারতীয় ক্রিকেটাররা। সেখানে সচিন তেন্ডুলকর, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় থেকে রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিরা যেমন আছেন, তেমনই আছেন অনামি রিঙ্কু সিংহ, কুমার কার্তিকেয়র মতো ক্রিকেটারও। সেই মিশেলে সব সময় প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারদেরই। ব্যতিক্রম এ বারের কলকাতা।
২০০৮ সালের আইপিএলে সচিন, সৌরভ, রাহুল দ্রাবিড়, শেন ওয়ার্ন, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপজয়ী মহেন্দ্র সিংহ ধোনিদের দেখা গিয়েছিল অধিনায়ক হিসাবে। প্রাধান্য দেওয়া হত বিদেশি কোচদেরও। আইপিএল বরাবর তাই দেখেছে। পরীক্ষিত অধিনায়কদেরই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। নয়তো দায়িত্ব পেয়েছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বিরাট অভিজ্ঞতা থাকা কোনও ক্রিকেটার। প্রথম বারের আইপিএলে যেমন ছিলেন ওয়ার্ন। গত বার গুজরাত টাইটান্স অধিনায়ক করে হার্দিক পাণ্ড্যকে। অধিনায়ক হিসাবে তিনি প্রথম বার দায়িত্ব নিলেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলার অভিজ্ঞতা ছিল তাঁর।
নাইটদের নতুন কোচ চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত। ছবি: কেকেআর
কলকাতা দলের প্রথম অধিনায়ক ছিলেন সৌরভ। যিনি ভারতীয় দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এর পর ব্র্যান্ডন ম্যাকালামকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। যিনি প্রাক্তন কিউই অধিনায়ক। গৌতম গম্ভীর ভারতীয় দলকে কখনও নেতৃত্ব না দিলেও তাঁর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বিপুল অভিজ্ঞতা ছিল। একই কথা বলা যায় দীনেশ কার্তিকের ক্ষেত্রেও। অইন মর্গ্যানকে অধিনায়ক করা হয়। তিনি ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক। গত বছর দায়িত্ব দেওয়া হয় শ্রেয়স আয়ারকে। তাঁকে ভবিষ্যতের অধিনায়ক ভাবা হচ্ছে বলে শোনা যায়। কলকাতাকে নেতৃত্ব দেওয়ার আগে আইপিএলে দিল্লি ক্যাপিটালসের অধিনায়ক ছিলেন শ্রেয়স। অর্থাৎ অভিজ্ঞতা ছিল তাঁর। কিন্তু এ বার অধিনায়ক নীতীশ রানা।
শ্রেয়সের চোট থাকায় আইপিএলে হয়তো খেলতে পারবেন না তিনি। সেই জায়গায় অধিনায়ক হিসাবে সোমবার নীতীশের নাম ঘোষণা করে কেকেআর। তাঁকে অধিনায়ক করা হতে পারে আন্দাজ করা হয়েছিল। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মাত্র তিনটি ম্যাচ খেলা নীতীশ ঘরোয়া ক্রিকেটে দিল্লিকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। কিন্তু আইপিএলের মতো বড় জায়গায় দল সামলানোর দায়িত্ব পেলেন প্রথম। ঘরোয়া ক্রিকেটে ৪৪টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলা নীতীশ নেতৃত্ব দেবেন আন্দ্রে রাসেল, সুনীল নারাইন, শাকিব আল হাসান, টিম সাউদির মতো বড় বড় নামকে। অনেকের মনেই প্রশ্ন উঠছে নীতীশ নীতি মানতে পারবেন তো তাঁরা?
ঘরোয়া ক্রিকেটে সাফল্য এনে দেওয়া পণ্ডিতের সঙ্গে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অনভিজ্ঞ নীতীশের জুটি দেখবে আইপিএল। ধোনি, রোহিত, ফ্যাফ ডুপ্লেসিদের সঙ্গে টস করতে দেখা যাবে দিল্লির রঞ্জি দলের বাতিল অধিনায়ক নীতীশকে। সব ধারণা ভেঙে দিয়েছে কলকাতা। এখন অপেক্ষা তাতে সাফল্য আসে কি না দেখার।