সোমবার ইডেনে ব্যাট করতে নামার আগে বল নিয়ে জাগলিং রিঙ্কুর। ছবি: আইপিএল
রিঙ্কু সিংহ। কলকাতা নাইট রাইডার্সের কাছে যেন স্বপ্নের এক নতুন নাম। এই দলে এমনিতেই খুব ভাল খেলছেন, এমন ক্রিকেটারের সংখ্যা হাতে গোনা। আন্দ্রে রাসেল বাদে দলকে একার হাতে জেতাবেন এমন কারও উপরেও ভরসা রাখতে পারেন না সমর্থকরা। এখানেই ব্যতিক্রমী রিঙ্কু। নিঃশব্দে নিজের কাজটা করেছেন। দলের সতীর্থরাও স্বীকার করছেন, এই রিঙ্কু অনেক আলাদা। এই রিঙ্কুকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে পারে কলকাতা।
এমনিতেই এই কেকেআরে স্বপ্ন দেখানোর মতো ক্রিকেটার খুব বেশি নেই। রাসেল প্রতি ম্যাচে জেতাবেন না সমর্থকরা জানেন। কেকেআরে কোনও মহেন্দ্র সিংহ ধোনি, কোনও বিরাট কোহলি, নিদেনপক্ষে কোনও হার্দিক পাণ্ড্যও নেই। সেই কলকাতাই হয়তো পেয়ে গেল নিজেদের নতুন নায়ককে।
গুজরাতের বিরুদ্ধে শেষ ওভারে পাঁচটি ছক্কা আচমকাই রিঙ্কুর জীবন এক রাতে বদলে দিয়েছিল। অন্ধকার থেকে রাতারাতি উঠে এসেছিলেন আলোয়। এক সময় যাঁকে নিয়ে সমাজমাধ্যমে মস্করা করা হত, তিনিই সেই একই মাধ্যমে নায়ক হয়ে উঠেছিলেন। গোটা বিশ্ব জেনেছিল রিঙ্কুর অসাধারণ ক্রিকেটযাত্রার কাহিনি। পঞ্জাবের বিরুদ্ধে আরও একটি ম্যাচ জেতাতে অবদান রাখার পর তাঁকে নিয়ে চর্চা আরও বাড়তে বাধ্য।
অধিনায়ক নীতীশ রানা পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে আসতেই তাঁকে রিঙ্কু নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। এতটাই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লেন কেকেআরের অধিনায়ক যে, কথাই শেষ হচ্ছিল না। বললেন, “আমি সবসময় একটা কথা ওকে বলি, নিজের উপর বিশ্বাস রাখো। তুমি যা অর্জন করেছো তা অনেক মানুষ সারা জীবনেরও পারবে না।”
নীতীশের সংযোজন, “যখন ও ব্যাট করছিল তখন গোটা স্টেডিয়াম ‘রিঙ্কু, রিঙ্কু’ চিৎকার করছিল। এটাই এই বছর ওর সেরা প্রাপ্তি। অনেক বছর ধরে আমি এই দলের সঙ্গে রয়েছি। ইডেন গার্ডেন্সের মানুষকে আগে অনেক বার ‘রাসেল, রাসেল’ বলে চিৎকার করতে শুনেছি। এ বারই প্রথম ‘রিঙ্কু, রিঙ্কু’ বলে চিৎকার করতে শুনলাম। এতেই আমার বুকটা গর্বে ভরে উঠেছে। এই সম্মান রিঙ্কু শুধুমাত্র ওর ক্রিকেটের জেরে আদায় করে নিয়েছে।”
যাঁর সঙ্গে রিঙ্কুর তুলনা চলছে, সেই রাসেলও কার্যত টুপি খুলে কুর্নিশ করলেন রিঙ্কুকে। বললেন, “পঞ্চম বলে ও-ই আমাকে জিজ্ঞাসা করল, যদি তুমি বলটা ঠেকাতে না পারো তা হলে কী করব? আমাদের কি রান নেওয়ার জন্যে দৌড়নো উচিত? আমি বললাম, অবশ্যই। আমার বিশ্বাস ছিল ওর প্রতি যে শেষ বলে ম্যাচটা শেষ করে আসতে পারবে।”
রাসেল যোগ করেছেন, “মাঠে ও যা করছে তা দেখে গায়ের রোম খাড়া হয়ে যায় এখন। ওর সঙ্গে ব্যাট করতে নামা মানে একজন সত্যিকারের লড়াকু ক্রিকেটারকে উল্টো দিকে পাওয়া। সব চাপ ও একাই শুষে নেয়। বেশ কয়েক বছর দলে আমাদের দলে রয়েছে। কঠোর পরিশ্রম করে। কিন্তু এমনিতে দেখে বুঝবেন না। দারুণ মজা করে। আমরা যখন অনুশীলন করি, তখন ওর যতটা সম্ভব কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করি।”