ইডেনে কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিরুদ্ধে ২৬১ রান তাড়া করে জিতেছিল পঞ্জাব কিংস। ছবি: আইপিএল।
ইডেনে কলকাতা নাইট রাইডার্স প্রথমে ব্যাট করে তুলেছিল ২৬১ রান। ২০ ওভারে সেই রান তাড়া করে ম্যাচ জিতে নিয়েছিল পঞ্জাব কিংস। আবার লখনউ সুপার জায়ান্টসের ১৬১ রানের জবাবে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ ৯.৪ ওভারে ম্যাচ জিতে নিয়েছে। বেশির ভাগ ম্যাচেই ২০০ রান উঠছে সহজে। সেই রান তাড়া করে ম্যাচও জিতছে বিপক্ষ। গত ১৬টি আইপিএলে ২৫০ রানের গণ্ডি পার হয়েছিল মাত্র দু’বার। এ বারের আইপিএল শেষ হয়নি এখনও, তাতেই আট বার ২৫০ রান পার হয়ে গিয়েছে। ২০০ রান তো এখন জলভাত। কিন্তু এই পরিবর্তনের কারণ কী?
ভারত প্রথম বার বিশ্বকাপ জিতেছিল ১৯৮৩ সালে। তখন এক দিনের ক্রিকেটে ১৮৩ রানও ছিল বিরাট ব্যাপার। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট আসার পর এক দিনের ক্রিকেটে ৪০০ রান পার হতে দেখেছে ক্রিকেটবিশ্ব। ৫০ ওভারের ক্রিকেটে এখন ৩০০ রান খুবই সাধারণ ঘটনা। কিন্তু এ বারের আইপিএল দেখে মনে হচ্ছে যে কোনও দিন ২০ ওভারের ক্রিকেটেই ৩০০ রান উঠে যেতে পারে। এ বারের আইপিএলেই ২৮৭ রান উঠেছে। মাত্র ১৩ রানের জন্য হায়দরাবাদ ৩০০-র গণ্ডি পেরতে পারেনি।
পাওয়ার প্লে-তে ট্রেভিস হেড, অভিষেক শর্মা, সুনীল নারাইন, ফিল সল্ট, জস বাটলারেরা যে ঝড় তুলে দিচ্ছেন, তাতেই ২০০ বা ২৫০ রান ওঠা সহজ হয়ে যাচ্ছে। আগে প্রথম ৬ ওভারে ৬০ রান উঠলেই মনে হত অনেক রান। কিন্তু দিল্লি ক্যাপিটালসের বিরুদ্ধে হায়দরাবাদ ৬ ওভারে ১২৫ রান তুলে দেখিয়েছে, এই ভাবেও রান করা যায়। আইপিএলের ইতিহাসে পাওয়ার প্লে-তে ওটাই সব থেকে বেশি রান। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “আগামী দিনে এ ভাবেই খেলা হবে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে শক্তিই সব। এখন থেকে সেটাই দেখা যাবে। সঞ্জু স্যামসনের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। ও বলল, এখনকার সময়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে দেখার সময় নেই। শুধুই মারতে হবে।”
তবে ব্যাটারদের এমন দাপটের নেপথ্যে ইমপ্যাক্ট প্লেয়ারকে বড় কারণ হিসাবে দেখছেন অনেকে। বাড়তি এক জন ব্যাটার খেলাতে পারছে সব দল। ফলে ১৬-২০ ওভারেও বড় শট খেলার সুযোগ পাচ্ছেন ক্রিকেটারেরা। ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটার প্রণব রায় বললেন, “ক্রিকেটারদের মানসিকতা বদলে গিয়েছে। সকলে জানে বাড়তি এক জন ব্যাটার রয়েছে। এটা মাথায় নিয়ে খেলতে নামলে বড় শট খেলা সহজ হয়ে যায়। শুরু থেকে মারার চেষ্টা করে। আগে ছক্কা মারতে যায়, পরে চার মারার চেষ্টা করে।”
আইপিএলে বড় রান ওঠার আরও একটি কারণ অবশ্যই পিচ। আগে চেন্নাইয়ের মাঠ মানেই ছিল স্পিনের রাজত্ব। মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়ে ছিল পেসারদের জন্য। দিল্লির কোটলার পিচ মানেই মন্থর। কিন্তু এখন সব মাঠেই অনায়াসে বড় রান ওঠে। ইডেনে ২৬১ রান উঠবে তা ভাবতেই পারেন না নিয়মিত খেলা দেখতে আসা সমর্থকেরা। আগে বেঙ্গালুরু মানেই ছিল রানের পাহাড়। কিন্তু এখন সব মাঠই সমান হয়ে গিয়েছে। সৌরভ বলেন, “ব্যাটারদের জন্য আদর্শ উইকেট তৈরি হচ্ছে। ভারতে মাঠও খুব বড় নয়। প্রায় প্রতি ওভারেই ছক্কা হচ্ছে। এখন এ ভাবেই খেলার কথা ভাবছেন ক্রিকেটারেরা। ইমপ্যাক্ট প্লেয়ারের নিয়ম আসায় আরও সুবিধা হয়েছে এ ভাবে খেলার।”
অন্য একটি দিক তুলে ধরলেন সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলার রঞ্জিজয়ী অধিনায়কের মতে আধুনিক ব্যাটের কারণে এত রান উঠছে। তিনি বললেন, “এখনকার ক্রিকেটারেরা যে ব্যাট নিয়ে খেলছে, তাতে ব্যাটের মাঝে না লাগলেও ছয় হচ্ছে। ফলে এখন রান করা অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে।”
সুনীল গাওস্করদের যুগে এক জন ভিভ রিচার্ডস ছিলেন। বোলারদের ত্রাস হয়ে ছিলেন। সচিন তেন্ডুলকরদের যুগে ছিলেন শাহিন আফ্রিদি, এবি ডিভিলিয়ার্সের মতো বিধ্বংসী ব্যাটারেরা। কিন্তু এখন সূর্যকুমার যাদবের মতো ব্যাটারদের সংখ্যাই বেশি। সেখানে চেতেশ্বর পুজারাদের মতো ক্রিকেটারেরাই বিরল। ফলে মিচেল স্টার্কের মতো ক্রিকেটারদের কাছেও কখনও কখনও ত্রাস হয়ে ওঠেন কখনও ভারতীয় দলে না খেলা অভিষেক শর্মাদের মতো ক্রিকেটারেরা।