আশুতোষ শর্মা। ছবি: পিটিআই।
জয়ের জন্য পঞ্জাব কিংসের লক্ষ্য ছিল ১৯৩ রান। আইপিএলে যে ভাবে রান হচ্ছে, তাতে এই রান না হওয়ার কিছু ছিল না। যদি না বিপক্ষের বোলারের নাম হয় যশপ্রীত বুমরা। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে ব্যাট হাতে দাপট ছিল সূর্যকুমার যাদবের। বল হাতে সেই কাজটা করলেন বুমরা। আর পাঁচ বারের আইপিএলজয়ী মুম্বই জিতল ৯ রানে। ব্যর্থ আশুতোষ শর্মার লড়াই। চেষ্টা করেও জেতাতে পারলেন না পঞ্জাবকে।
টস জিতে মুম্বইকে ব্যাট করতে পাঠিয়েছিলেন স্যাম কারেন। পঞ্জাবের অধিনায়ক শিখর ধাওয়ান এখনও পুরোপুরি সুস্থ নন। তাঁর জায়গায় দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন কারেন। মুম্বই অধিনায়ক হার্দিক পাণ্ড্য যদিও টস জিতলে প্রথমে ব্যাট করতেন বলে জানালেন।
মুম্বইয়ের ওপেনার ঈশান কিশন রান পাননি। ৮ বলে ৮ রান করে কাগিসো রাবাডার নির্বিষ বলে আউট হলেন তিনি। রাবাডাও ভাবেননি যে, তিনি ওই বলে উইকেট পাবেন। তবে ঈশান আউট হতেই নামেন সূর্যকুমার। শুরু থেকেই বড় শট খেলার চেষ্টা করছিলেন তিনি। সেই সঙ্গে ছিলেন রোহিত শর্মা। যিনি বৃহস্পতিবার আইপিএলে ২৫০তম ম্যাচ খেলে ফেললেন। সেই ম্যাচে নজিরও গড়লেন। আইপিএলে ৬৫০০ রানের গণ্ডি পার করলেন রোহিত। পঞ্জাবের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার করলেন ২৫ বলে ৩৬ রান।
সূর্য রান পেলেও আবার ব্যর্থ হার্দিক। মাত্র ১০ রান করে আউট হয়ে গেলেন তিনি। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে সূর্যকুমার ভারতীয় দলকে স্বস্তি দিলেও চিন্তায় রাখছেন রোহিত। এ বারের আইপিএলে রান পাচ্ছেন না তিনি। বল হাতেও খুব একটা প্রভাব ফেলতে পারছেন না। বরং তিলক বর্মা ১৮ বলে ৩৪ রান করে দলকে ভরসা দিলেন। তিনি বলও করতে পারেন। আগামী দিনে হার্দিকের বদলে তিলককে ভারতীয় দলে দেখা গেলে খুব অবাক হওয়ার থাকবে না।
১৯৩ রানের লক্ষ্য মাথায় নিয়ে ব্যাট করতে নেমে ২.১ ওভারেই ৪ উইকেট পড়ে যায় পঞ্জাবের। প্রভসিমরন সিংহ (০), রিলি রুসো (১), স্যাম কারেন (৬) এবং লিয়াম লিভিংস্টোন (১) সাজঘরে। নেপথ্যে বুমরা এবং জেরাল্ড কোয়েৎজ়ি। প্রথম উইকেট নেন কোয়েৎজ়ি। পরের ওভারে বুমরা এসে দু’টি উইকেট তুলে নেন। তৃতীয় ওভারে বল করতে এসে কোয়েৎজ়ি আরও একটি উইকেট নেন। ম্যাচের ভাগ্য তখনই নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল প্রায়।
১৪ রানে ৪ উইকেট হারানো পঞ্জাব ঘুরে দাঁড়ায় সেই শশাঙ্ক সিংহ এবং আশুতোষ শর্মার হাত ধরে। ২৫ বলে ৪১ রান করে শশাঙ্ক আউট হলেও আশুতোষ লড়াই চালিয়ে যান। হরপ্রীত ব্রারকে সঙ্গে নিয়ে লড়ছিলেন তিনি। ২৮ বলে ৬১ রান করেন আশুতোষ। তিনি যত ক্ষণ ক্রিজ়ে ছিলেন, তত ক্ষণ আশা ছিল পঞ্জাবের।
শেষ চার ওভারে প্রয়োজন ছিল মাত্র ২৮ রান। মনে হচ্ছিল আশুতোষই জিতিয়ে দেবেন। এমন সময় বল করতে এলেন বুমরা। দিলেন মাত্র ৩ রান। সেখানেই ম্যাচ ঘুরে গেল। চাপ বেড়ে যায় আশুতোষের উপর। পরের ওভারের প্রথম বলেই কোয়েৎজ়ি তুলে নেন আশুতোষের উইকেট। লেগ সাইডে ফিল্ডার বেশি রেখে বাউন্সার করেন কোয়েৎজ়ি। তাতেই কাজ হয়। পুল করতে গিয়ে তুলে দেন আশুতোষ। আগের ওভারে মাত্র ৩ রান হওয়ার চাপ যে তখন তাঁর মাথায়। আর আশুতোষ আউট হতেই জয়ের আশা শেষ হয়ে যায় পঞ্জাবের।
তবে ১৯তম ওভারে বল করতে এসে ১১ রান দিয়ে পঞ্জাবকে আবার জয়ের স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেন হার্দিক। অধিনায়ক হিসাবেও তাঁর ভুল বার বার চোখে পড়ল। প্রথম চার ওভারে যে চাপ বুমরা এবং কোয়েৎজ়ি তৈরি করেছিলেন, সেটা ধরে রাখতে পারলেন না বাকিরা। হার্দিক সেই সময় বুমরা এবং কোয়েৎজ়িকে আরও এক ওভার করানোর সাহসটা দেখাতে পারলেন না। মহম্মদ নবিকে দলে নিলেও তাঁকে দিয়ে এক ওভারও বল করালেন না। শ্রেয়স গোপালের থেকে নবি হয়তো অভিজ্ঞতা দিয়ে বেশি কার্যকরী হতেন। কিন্তু হার্দিক সে পথে গেলেন। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে বুমরার সঙ্গে কথা বলতে দেখা গেল রোহিতকেও। বুমরা ৪ ওভারে ২১ রান দিয়ে ৩ উইকেট তুলে নেন। কোয়েৎজ়িও ৩ উইকেট নেন। একটি করে উইকেট নেন আকাশ মাধওয়াল, হার্দিক এবং শ্রেয়স।
চেন্নাই সুপার কিংসের বিরুদ্ধে হারের পর আবার জয়ে ফিরল মুম্বই। এই জয় হার্দিকদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেবে। তবে পঞ্জাবকে ভাবতে হবে আশুতোষ এবং শশাঙ্ককে আরও আগে নামানো যায় কি না। তাতে হয়তো পঞ্জাবেরই উপকার হবে।