সূর্যকুমার যাদব আউট হওয়ার পরে উল্লাস লখনউ সুপার জায়ান্টসের ক্রিকেটারদের। ছবি: আইপিএল
মুম্বইয়ের ব্যাটিংয়ের শুরুটা দেখে মনে হয়েছিল, সহজেই এই ম্যাচ জিতে যাবে তারা। কিন্তু প্রথমে রবি বিষ্ণোই ও তার পর যশ ঠাকুর ম্যাচে ফেরালেন লখনউকে। হাতের বাইরে বেরিয়ে যাওয়া ম্যাচ আবার হাতের মুঠোয় নিলেন ক্রুণাল পাণ্ড্যরা। টান টান ম্যাচে শেষ পর্যন্ত জয়ের হাসি হাসলেন গৌতম গম্ভীররা। মুম্বইকে হারিয়ে পয়েন্ট তালিকায় নিজেদের জায়গা আরও পাকা করল লখনউ। নিজেদের শেষ ম্যাচে ইডেন গার্ডেন্সে কলকাতা নাইট রাইডার্সকে হারাতে পারলেই প্লে-অফ পাকা হয়ে যাবে লখনউয়ের।
টসে জিতে লখনউকে ব্যাট করতে পাঠান মুম্বইয়ের অধিনায়ক রোহিত শর্মা। লখনউয়ের ছন্দে থাকা ওপেনার কাইল মেয়ার্সকে এই ম্যাচে বাইরে রেখেছিল দল। বদলে কুইন্টন ডি’ককের সঙ্গে ওপেন করতে নামেন দীপক হুডা। কিন্তু দুই ওপেনারই ব্যর্থ। প্রথমে ৫ রানের মাথায় হুডাকে আউট করেন জেসন বেহরেনডর্ফ। শূন্য রানে ফেরেন তিন নম্বরে নামা প্রেরক মাঁকড়। তাঁকেও আউট করেন বেহরেনডর্ফ। ১৬ রানের মাথায় পীযূষ চাওলার শিকার হন ডি’কক।
লখনউয়ের মন্থর উইকেটে খেলতে সমস্যা হচ্ছিল ব্যাটারদের। তিন উইকেট পড়ার পরে ক্রুণাল ও স্টোইনিস জুটি বাঁধেন। দু’জনে মিলে দলের রানকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন। দৌড়ে রান নেওয়ার পাশাপাশি খারাপ বলে বড় শট মারছিলেন দুই ব্যাটার। দেখে বোঝা যাচ্ছিল, এই পিচে সহজেই চার-ছক্কা মারা অত সহজ নয়। তাই বুদ্ধি করে খেলছিলেন তাঁরা।
৪৯ রানের মাথায় পায়ে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন ক্রুণাল। ব্যাট করতে নামেন নিকোলান পুরান। আগের ম্যাচে বিধ্বংসী ব্যাটিং করা পুরানেরও ব্যাট-বলে সমস্যা হচ্ছিল এই উইকেটে। তাঁরা চেষ্টা করছিলেন দলের রান ১৬০-এর কাছে নিয়ে যেতে। এর মধ্যেই ৩৬ বলে অর্ধশতরান করেন স্টোইনিস।
অর্ধশতরান করার পরে আর থামানো গেল না স্টোইনিসকে। ক্রিস জর্ডন, বেহরেনডর্ফদের বিরুদ্ধে একের পর এক বড় শট খেললেন তিনি। একটা সময় দেখে মনে হচ্ছিল, শতরান হয়ে যাবে তাঁর। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ৮৯ রানে থামলেন তিনি। লখনউয়ের ইনিংস শেষ হল ১৭৭ রানে।
উইকেট দেখে মনে হচ্ছিল রান তাড়া করতে কিছুটা হলেও সমস্যা হবে মুম্বইয়ের। কিন্তু কোথায় কী? প্রথম ওভার থেকে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং শুরু করলেন ঈশান কিশন। পাওয়ার প্লে কাজে লাগিয়ে হাওয়ায় বেশ কিছু শট খেললেন তিনি। তাঁকে দেখে রং বদলালেন রোহিতও। দুই ব্যাটার সাবলীল ব্যাটিং করছিলেন। লখনউয়ের কোনও বোলারই তাঁদের সমস্যায় ফেলতে পারছিলেন না।
মুম্বইয়ের ব্যাটারদের আরও খানিকটা সুবিধা করে দিল লখনউয়ের ফিল্ডিং। ক্যাচ ধরতে গিয়ে বাউন্ডারিতে পা লেগে ছক্কা দিলেন রবি বিষ্ণোই। ফিল্ডারদের ভুল বোঝাবুঝিতে বল গেল বাউন্ডারির বাইরে।
৯০ রানের মাথায় মুম্বইকে প্রথম ধাক্কা দেয় লখনউ। ২৫ বলে ৩৭ রান করে বিষ্ণোইয়ের বলে আউট হন রোহিত। অপর ওপেনার ঈশান অর্ধশতরান করেন। তার পরেই বিষ্ণোইয়ের বড় শট মারতে গিয়ে ৫৯ রানের মাথায় আউট হন তিনি।
ঈশান আউট হওয়ার পরে রানের গতি কিছুটা কমে যায়। বিষ্ণোই ও ক্রুণাল ভাল বল করছিলেন। ছন্দে থাকা সূর্যকুমার যাদবও রান করতে সমস্যায় পড়ছিলেন। জরুরি রানরেট একটু একটু করে বাড়ছিল।
শেষ সাত ওভারে জয়ের জন্য দরকার ছিল ৭১ রান। মুম্বইকে বড় ধাক্কা দেন লখনউয়ের ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার হিসাবে নামা যশ ঠাকুর। আগের ম্যাচে শতরান করা সূর্যকে ৭ রানের মাথায় বোল্ড করেন তিনি। মুম্বইকে জেতানোর দায়িত্ব গিয়ে পড়ে বিষ্ণু বিনোদ ও টিম ডেভিডের উপর।
বিষ্ণু আউট হয়ে গেলেও ডেভিড মারছিলেন। দেখে মনে হচ্ছিল, আরও এক বার মুম্বইকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়বেন তিনি। শেষ ওভারে মুম্বইয়ের জিততে দরকার ছিল ১১ রান। প্রথম দু’ওভারে ২১ রান দেওয়া মহসিন খানের হাতে বল তুলে দেন ক্রুণাল। চাপের মধ্যে দুরন্ত বল করলেন এই বাঁহাতি বোলার। একের পর এক ইউর্কার দিলেন তিনি। মাত্র ৫ রান দিলেন মহসিন। ১৭২ রানে শেষ হল মুম্বইয়ের ইনিংস। ৫ রানে ম্যাচ জিতল লখনউ। ৩২ রানে অপরাজিত থাকলেও এ বার আর দলকে জেতাতে পারলেন না ডেভিড।