বিরাট কোহলী। ছবি আইপিএল
বিরাট কোহলীর রানে খরা আরও বাড়ল। কবে তাঁর ব্যাটে আবার বড় রান দেখতে পাওয়া যাবে তা নিয়ে অনেক দিন ধরেই অপেক্ষা করছেন সমর্থকরা। প্রতি ম্যাচেই মনে করা হয় তাঁর ব্যাটে রান আসতে চলেছে। কিন্তু প্রতি ম্যাচেই কোহলী হতাশ করে চলেছেন। এই নিয়ে ১০১ ম্যাচে তাঁর ব্যাট থেকে কোনও শতরান পাওয়া গেল না। ১৭টি টেস্ট, ২১টি এক দিনের ম্যাচ, ২৫টি টি-টোয়েন্টি এবং ৩৭টি আইপিএলের ম্যাচ খেলে ফেললেও তিনি তিন অঙ্কের রান খুঁজে পেলেন না। কোথায় সমস্যা হচ্ছে কোহলীর?
মঙ্গলবার লখনউ সুপার জায়ান্টসের মুখোমুখি হয়েছিল বেঙ্গালুরু। সেই ম্যাচে প্রথম বলেই আউট হয়ে যান কোহলী। শনিবার হায়দরাবাদ ম্যাচেও দেখা গেল একই দৃশ্য। তিন বছর আগে এ রকমই এক এপ্রিল মাসে ইডেন গার্ডেন্স মাতিয়েছিলেন কোহলী। কলকাতার বিরুদ্ধে শতরান করেছিলেন, যা আইপিএলে তাঁর পঞ্চম। প্রথম ৫০ রান করতে নেন ৪০ বল, পরের ৫০ আসে ১৭ বলে। সেই সময়ে চূড়ান্ত ছন্দে ছিলেন কোহলী। কয়েক মাস পরে দিন-রাতের টেস্টেও শতরানও করেন। কিন্তু তার পর থেকেই তাঁর ব্যাটে রানের খরা।
কোথায় সমস্যা
কোহলীর সমস্যা মানসিক না টেকনিকের তা নিয়ে বিতর্ক হতেই পারে। টেকনিকের দিক থেকে বলা যায়, তিনি বার বার অফ স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা দিচ্ছেন। লখনউ ম্যাচে দুষ্মন্ত চামিরার বলে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ দেন কোহলী। না খেলার মতো সেটা ছিল না। কিন্তু ওই ধরনের শটে কোহলীর আউট হওয়া দেখেই বোঝা যায় কোথাও একটা গন্ডগোল রয়েছে। একই রকম ভাবে, এ দিন তিনি মার্কো জানসেনের বলে ক্যাচ দিলেন দ্বিতীয় স্লিপে। কোহলীকে দেখেই দ্বিতীয় স্লিপ রেখেছিলেন বিপক্ষ অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। প্রাক্তন বেঙ্গালুরু অধিনায়ক সেই ফাঁদে পা দিলেন।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে দিলীপ বেঙ্গসরকর সাফ জানান, কোহলীর টেকনিকে কোনও গলদ নেই। তিনি বলেছেন, “ম্যাচের পরিস্থিতি এবং পরিবেশের উপর নির্ভর করে রান করার ক্ষমতা। রান না পেলে সেটা মানসিক ভাবে চাপে ফেলে। রান পেলেই ও আত্মবিশ্বাস ফিরে পাবে।” মানসিক সমস্যার কথা আগেই জানিয়েছিলেন প্রাক্তন ভারতীয় কোচ রবি শাস্ত্রী। কিছুদিন আগেই তিনি বলেন, কোহলীর সাময়িক ভাবে ক্রিকেট থেকে বিরতি নেওয়া উচিত। বিশ্রাম নিলে এক দিক থেকে শারীরিক, আর একদিক থেকে মানসিক ভাবে নিজেকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য তৈরি করতে পারবেন কোহলী।
ডুপ্লেসির থেকে শিক্ষা
আপাতত কোহলী শিক্ষা নিতে পারেন তাঁর আইপিএল দলের অধিনায়কের থেকেই। ফ্যাফ ডুপ্লেসি প্রথম ম্যাচে ৮৮ রান করার পর, পরের পাঁচটি ম্যাচে মাত্র ৬৬ রান করেন। কিন্তু লখনউ ম্যাচেই তাঁর ব্যাট থেকে বেরোয় ৯৬ রানের ইনিংস। পরে ডুপ্লেসি বলেন, “কী ভাবে রান করব তার জন্য নিজেই প্রক্রিয়া এবং পরিকল্পনা তৈরি করেছি। এই ম্যাচে কী রকম খেলব তার জন্য অনেক আগে থেকে মানসিক ভাবে প্রস্তুত ছিলাম। সেটাই কাজে লেগেছে।” একই ভাবে কোহলীরও হয়তো উচিত প্রতিটি ম্যাচের জন্য আলাদা করে পরিকল্পনা ছকে নামা। মানসিক ভাবে নিজেকে প্রস্তুত করা। তা হলে হয়তো রান পাওয়া সময়ের অপেক্ষা।
নিজের পুরনো ইনিংস মনে করা
শুধু ডুপ্লেসি কেন, নিজেই নিজের শিক্ষক হয়ে উঠতে পারেন কোহলী। জীবনে প্রচুর ভাল ইনিংস খেলেছেন। দলকে জিতিয়েছেন। সেই ইনিংসের ভিডিয়ো দেখলে বা তাঁর কথা মনে করলে নিজেই নিজেকে তাতাতে পারেন কোহলী। কে ভুলবে এক আইপিএলে তাঁর চারটি শতরান! কে ভুলবে এক মরসুমে ৯৭৩ রান! ব্যাটিং যে একটা শিল্প, সেটা তো কোহলী নিজেই বার বার প্রমাণ করেছেন। ফলে নিজের সমস্যা যদি নিজেই খুঁজে বের করতে পারেন, তা হলে সেটাই হবে কোহলীর সবচেয়ে বড় পাওনা।