রিঙ্কু সিংহ এবং কেকেআর মালিক শাহরুখ খান। —ফাইল চিত্র
এ বারের নিলামে রিঙ্কু সিংহের নাম ডাকতেই অফিসের অনেকে বলে উঠলেন, “একে তো কলকাতা নেবেই।” দেখা গেল তাঁদের কথাই সত্যি। রিঙ্কু সিংহকে ৫৫ লক্ষ টাকা দিয়ে দলে নিল কলকাতা নাইট রাইডার্স। ২০১৮ সাল থেকে কেকেআর-এর হয়েই খেলেন রিঙ্কু। খেলেন বলা ভুল। বলা ভাল, ২০১৮ সাল থেকে কেকেআর দলেই থাকেন রিঙ্কু।
থাকেন! খেলেন না? পরিসংখ্যান বলছে আইপিএলে এখনও পর্যন্ত ১২টি ম্যাচ খেলেছেন রিঙ্কু। ২০১৭ সালে তাঁকে ১০ লক্ষ টাকা দিয়ে নিয়েছিল কিংস ইলেভেন পঞ্জাব (এখন পঞ্জাব কিংস)। কিন্তু কোনও ম্যাচ খেলায়নি। ২০১৮ সালে কলকাতা তাঁকে কেনে ৮০ লক্ষ টাকা দিয়ে। অর্থকষ্টকে সঙ্গী করে বেড়ে ওঠা রিঙ্কুর পরিবারের কাছে যা ছিল স্বপ্নের মতো। সে বছর চারটি ম্যাচ খেলেন রিঙ্কু। পরের বছর খেলেন পাঁচটি ম্যাচ। ২০২০ সালে কলকাতা তাঁকে একটি ম্যাচ খেলায়। ২০২১ সালের আইপিএলে রিঙ্কুকে কোনও ম্যাচ খেলানোই হয়নি। কিন্তু সেই রিঙ্কুকেই ৫৫ লক্ষ টাকা দিয়ে এ বারের নিলামে কিনে নেয় কলকাতা। এখনও পর্যন্ত রিঙ্কু খেলেছেন দু’টি ম্যাচ।
উত্তরপ্রদেশের রিঙ্কু বাঁহাতে ব্যাট করেন। অফ ব্রেক বলও করতে পারেন। কিন্তু যে পরিবার থেকে উঠে এসেছেন এই বাঁহাতি ব্যাটার, সেখানে ক্রিকেট খেলাটাই একটা যুদ্ধ ছিল। আইপিএলে দল পাওয়া তো সোনার পাথর বাটি। রিঙ্কুর বাবা খানচাঁদ সিংহ গ্যাসের সিলিন্ডার বিলি করতেন। লখনউয়ে দু’টি ঘরে চার ভাই-বোন এবং মা-বাবাকে নিয়ে রিঙ্কুর সংসার। দু’বেলা ঠিক মতো খাবার জুটত না। রিঙ্কুর দাদা ক্রিকেট খেলার স্বপ্ন দেখা ভাইকে এক জায়গায় ঝাড়ুদারের কাজে ঢুকিয়ে দেন। রিঙ্কু যদিও দমে যাননি। তিনি ক্রিকেট খেলা চালিয়ে যান। মাত্র ১৭ বছর বয়সে সুযোগ পেয়ে যান উত্তরপ্রদেশের রাজ্য দলে। লিস্ট এ ম্যাচ খেলেন তাঁর রাজ্যের হয়ে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আবির্ভাব ২০১৬ সালে।
অনুশীলনে রিঙ্কু সিংহ। ছবি: ইনস্টাগ্রাম
কলকাতা তাঁর জীবন পাল্টে দিয়েছে। বিশাল টাকার ঋণে ডুবে থাকা রিঙ্কুর পরিবারকে বাঁচিয়ে দিয়েছে কেকেআর। সেই দলের হয়ে গত চার বছরে একাধিক ম্যাচে ফিল্ডিং করেছেন রিঙ্কু। দুর্দান্ত সব ক্যাচ নিয়েছেন। নজর কেড়েছেন। প্রশংসিত হয়েছেন। কিন্তু ম্যাচ প্রায় খেলেননি বললেই চলে। আসলে কোটিপতি লিগে তাঁর সমসাময়িক ক্রিকেটাররা যখন অধিনায়ক হয়ে গিয়েছেন, রিঙ্কু তখন ১২টি ম্যাচ খেলে করেছেন মাত্র ১৩৫ রান। বড় বড় নামের পাশে রিঙ্কুর সুযোগ পেতে হলে ব্যাটকে কথা বলাতে হত। সেটা হয়নি, তাই সুযোগও পাননি। রিঙ্কুও জানেন সেটা।
২০১৮ সালের নিলামে ৮০ লক্ষ টাকা পাওয়ার পর রিঙ্কু বলেছিলেন, “ভেবেছিলাম ২০ লক্ষ পাব। কিন্তু আমাকে ৮০ লক্ষ টাকা দিয়ে নেওয়া হয়! প্রথম কথা যেটা মাথায় এসেছিল, সেটা হল দাদার বিয়েতে সাহায্য করতে পারব। বোনের বিয়ের জন্যেও কিছু টাকা বাঁচিয়ে রাখা যাবে। আর একটা ভাল বাড়িতে থাকব আমরা।” যে পরিবার হাজার কষ্ট নিয়েও তাঁর ক্রিকেট খেলাকে কখনও বাধা দেয়নি, ক্রিকেট থেকে রোজগার করে সেই পরিবারের পাশেই দাঁড়ানোর কথা প্রথম মাথায় এসেছে রিঙ্কুর। দিল্লিতে একটি প্রতিযোগিতায় বাইক জিতেছিলেন ছোটবেলায়। বাড়ি ফিরে সেই বাইকটি বাবাকে দিয়ে দেন। ভারী সিলিন্ডার বইতে কষ্ট হয় বাবার। তাই বাইকটা নিজের জন্য না রেখে দিয়ে দেন বাবাকে।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৩০টি ম্যাচ খেলেছেন রিঙ্কু। রয়েছে পাঁচটি শতরান। ২৩০৭ রান করেছেন তিনি। গড় ৬৪.০৮। লিস্ট এ ক্রিকেটে খেলেছেন ৪১টি ম্যাচ। একটি শতরান-সহ সেখানে তাঁর সংগ্রহ ১৪১৪ রান। ঘরোয়া ক্রিকেটে তাঁর ব্যাট যে কথা বলে তা প্রমাণিত। রঞ্জিতে দলকে কোয়ার্টার ফাইনালেও তুলেছেন রিঙ্কু। আইপিএলে কলকাতা তাঁকে দলে নিয়েছে। অনুশীলনে হাসি মুখে বল করেন, ফিল্ডিং করেন, আর কখনও কখনও প্রথম একাদশেও থাকেন রিঙ্কু।