পঞ্চম বারের জন্য আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হলেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। —ফাইল চিত্র
গত বছর লিগ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে হেরে যখন নবম স্থানে থেকে বিদায় নিচ্ছে চেন্নাই সুপার কিংস, দলের অধিনায়ক মহেন্দ্র সিংহ ধোনি জানিয়েছিলেন, এই ব্যর্থতা ভুলে পরের বার সমর্থকদের মনে হাসি ফোটাতে চান তাঁরা। এ বছর সেটাই করে দেখালেন ধোনিরা। গত বারের ব্যর্থতা ভুলে শুরু থেকেই ভাল খেললেন। প্রথম দু’য়ে থেকে প্লে-অফে উঠলেন। গত বারের চ্যাম্পিয়ন গুজরাত টাইটান্সকে হারিয়ে উঠলেন ফাইনালে। তার পর রুদ্ধশ্বাস ফাইনালে গুজরাতকে হারিয়ে পঞ্চম বারের জন্য ট্রফি জিতলেন ধোনিরা। ছুঁয়ে ফেললেন রোহিত শর্মার মুম্বই ইন্ডিয়ান্সকে।
কিন্তু কী ভাবে ভোল বদলে গেল চেন্নাইয়ের? মাত্র ৯ মাসেই কোন মন্ত্রে একটি দল এত ভাল খেলল?
চেন্নাইয়ের ভোলবদলের নেপথ্যে সব থেকে বড় কারণ অধিনায়ক। গত বার প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার আগেই ধোনি জানিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি আর নেতৃত্ব দেবেন না। নতুন অধিনায়ক করা হয়েছিল রবীন্দ্র জাডেজাকে। কিন্তু জাডেজা সামলাতে পারেননি। তার ফল ভুগতে হয়েছিল দলকে। প্রথম থেকে একের পর এক হার। প্রথম সাত ম্যাচে মাত্র একটি জয় পেয়েছিল চেন্নাই।
বাধ্য হয়ে মরসুমের মাঝপথে অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিয়েছিলেন জাডেজা। আবার দায়িত্ব নিতে হয়েছিল ধোনিকে। তিনি পরের দিকে কিছুটা চেষ্টা করলেও পারেননি। তার মাঝেই জাডেজার সঙ্গে চেন্নাই ফ্র্যাঞ্চাইজির সমস্যা হয়েছিল। শেষ দিকে কয়েকটি ম্যাচে খেলেননি তিনি। শেষ পর্যন্ত ১৪ ম্যাচে মাত্র ৪টি জিতে ৮ পয়েন্ট নিয়ে নবম স্থানে শেষ করেছিলেন ধোনিরা।
দলের গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার দীপক চাহারকে চোটের কারণে গত বছর পায়নি চেন্নাই। ফলে তাদের পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। নতুন বোলারদের খেলাতে হয়। দুই বিদেশি বোলার মাহেশ থিকশানা ও মাথিশা পাথিরানাও গত বার নতুন ছিলেন। মানিয়ে নিতে সমস্যা হয়েছিল তাঁদের। ভারতীয় ক্রিকেটারদের নিয়েও সমস্যা হয়েছিল। শিবম দুবে, অম্বাতি রায়ডুরা ভাল খেলতে পারেননি।
গত বারের খামতি ঢাকতে এ বার প্রথম থেকেই তৎপর ছিল সিএসকে ম্যানেজমেন্ট। মিডল অর্ডারের খামতি ঢাকতে অজিঙ্ক রাহানেকে নিয়েছিল তারা। মইন আলির সঙ্গে বিদেশি অলরাউন্ডার বেন স্টোকসকে নেওয়া হয়েছিল। স্টোকস অবশ্য প্রথম তিনটি ম্যাচের পরে আর খেলতে পারেননি। সেই সঙ্গে এ বার চাহারকে প্রথম থেকে পেয়েছে চেন্নাই। ফলে ধোনির পরিকল্পনা করতে সুবিধা হয়েছে।
এ বার দলকে প্রথম থেকেই নিজের হাতে পেয়েছেন ধোনি। তিনি সেই হিসাবে পরিকল্পনা করতে পেরেছেন। যে ম্যাচে স্পিনারদের দরকার, সেই ম্যাচে স্পিনের ঘূর্ণিতে ম্যাচ বার করেছেন। দলের ওপেনিং জুটি ভাল খেলেছে। ঘরের মাঠের উইকেট ধোনির থেকে ভাল কেউ চেনেন না। নিজের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েছেন তিনি। সব মিলিয়ে দলগত ভাবে সফল হয়েছেন ধোনিরা।
চেন্নাইয়ের জয়ের আরও একটি কারণ চিপকের দর্শক। গত বার মহারাষ্ট্রে নিজেদের সব ম্যাচ খেলতে হয়েছিল চেন্নাইকে। ঘরের মাঠে খেলার সুযোগ পাননি তাঁরা। কিন্তু এ বার লিগ পর্বের সাতটি ও তার পর প্লে-অফ ঘরের মাঠে খেলেছেন ধোনিরা। তা ছাড়া ধোনি যে মাঠেই গিয়েছেন সেখানেই হোম টিমের থেকে বেশি সমর্থন পেয়েছেন। এই দর্শকদের সমর্থনও তাঁদের ভাল খেলতে উদ্বুদ্ধ করেছে। তার জেরে গত বারের ব্যর্থতা ভুলে এ বার ঘুরে দাঁড়িয়েছেন ধোনিরা।