MS Dhoni

৪১-এও হলুদ ঝড় দেশ জুড়ে! বিরাট, রোহিত, শুভমনরা থাকলেও এই আইপিএল সেই ধোনিরই

পঞ্চম বারের জন্য আইপিএল জিতলেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। তিনি সমার্থক হয়ে উঠলেন আইপিএলের সঙ্গে। বিরাট, রোহিতরা থাকলেও ধোনিই এ বারের আইপিএলের মুখ।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০২৩ ০১:৪৮
Share:

আরও এক বার চেন্নাইয়ের জার্সিতে আইপিএল জিতলেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। ছবি: পিটিআই

কলকাতা, দিল্লি, মুম্বই— ভারতের যে ১২টি মাঠে এ বারের আইপিএল হয়েছে প্রতিটি মাঠই তাঁর ঘরের মাঠ। যে স্টেডিয়ামেই তিনি খেলতে নেমেছেন সেখানেই গ্যালারি জুড়ে শুধু হলুদ রং। যে দলের ঘরের মাঠ, তারাই অবাক হয়ে গিয়েছে। অবাক হওয়ারই কথা। বিশ্বের কোন দেশের কোন লিগে এই ছবি দেখা গিয়েছে? এক জন ক্রিকেটার, যিনি চার বছর আগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছেড়ে দিয়েছেন, তাঁকে দেখতে গ্যালারি ভরাবেন দু’দলের সমর্থকরাই। আসলে সেই ক্রিকেটারের নাম যে মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। যে দেশকে তিনি তিনটি আইসিসি ট্রফি জিতিয়েছেন, ভারতীয় ক্রিকেটে এত ভাল মুহূর্ত উপহার দিয়েছেন, তাঁকে কি আর তাঁর ভক্তরা ভুলতে পারে! এখনও তাই আইপিএল আর ধোনি সমার্থক। অন্য সব বারের মতো এ বারের আইপিএলও সেই ধোনিরই। শেষ দিন পর্যন্ত সেই ছবি দেখা গেল। গুজরাতের ঘরের মাঠে তাদের হারিয়ে তিনি যখন সতীর্থদের জড়িয়ে ধরছেন তখন গ্যালারিতে কাঁদছেন হলুদ জার্সি পরা সমর্থকরা। তাঁরা বুঝিয়ে দিচ্ছেন, এই মানুষটার জন্যই দু’দিন ধরে সব কষ্ট সহ্য করে ছিলেন তাঁরা। সেই কষ্টের শেষে জয়ের আনন্দ সমর্থকদের মনে।

Advertisement

এখন আইপিএল ছাড়া আর কোথাও খেলেন না ধোনি। ঘরোয়া ক্রিকেটে অবশ্য মাঝে মাঝে ঝাড়খণ্ডের সাজঘরে দেখা যায় তাঁকে। কিন্তু তা শুধুই পরামর্শদাতার ভূমিকায়। আইপিএল শুরুর তিন-চার মাস আগে থেকে প্রস্তুতি শুরু করেন ধোনি। চেন্নাইয়ে বসে শিবির। সেখানে যোগ দেন ঘরোয়া ক্রিকেটাররা। সেখান থেকেই ধোনি খুঁজে নেন তাঁর তুরুপের তাস। প্রতি বারই তাই চেন্নাইয়ে এমন কিছু ক্রিকেটার দেখা যায় যাঁরা পরবর্তীতে ভারতীয় ক্রিকেটের পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন।

তবে বয়স তো থেমে থাকে না। বয়সের ভারে কমে ধারও। ধোনির ক্ষেত্রেও সেটা হয়েছে। গত কয়েক বছর থেকেই ব্যাট হাতে ছন্দে নেই তিনি। এ বার তার সঙ্গে দেখা গিয়েছে হাঁটুর চোট। খেলার সময়টুকু ছাড়া বাকি সময়ে বাঁ হাটুতে আইসপ্যাক বাঁধা থাকে। মাঠেও মাঝেমধ্যে খুঁড়িয়ে হাঁটতে দেখা যায় তাঁকে। সেই কারণেই হয়তো এ বারের আইপিএলে একেবারে শেষ দিকে ব্যাট করতে নামছেন তিনি। ফিল্ডিং করার সময় উইকেটের পিছনে দাঁড়িয়ে ইশারাতেই বোলারদের সব বুঝিয়ে দিচ্ছেন। খুব বেশি দৌড়ঝাঁপ করছেন না। তাতেই দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়ছেন।

Advertisement

আসলে ধোনি এক জন ব্যাটার বা এক জন উইকেটরক্ষকের থেকে অনেক বেশি এক জন নেতা। তিনি মাঠে থাকা মানে প্রতিপক্ষ চাপে থাকা। ম্যাচ চলাকালীন পরিস্থিতি বুঝে সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতায় অন্যদের থেকে অনেক এগিয়ে তিনি। ম্যাচে তাঁর একটা সিদ্ধান্ত বদলে দেয় খেলার ছবি। কঠিন পরিস্থিতি থেকে ম্যাচ বার করতে পারেন বলেই সব সময় দলের বাকি ক্রিকেটাররা তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকে। আর তিনি বড় দাদার মতো সব সময় নিজের কাজটা করে যান। কোনও ক্রিকেটার চাপে থাকলে তাঁকে শান্ত হতে বলেন। চোখের ইশারায় বুঝিয়ে দেন তিনি পাশে আছেন। এই ভরসার হাতটাই হয়তো সেই ক্রিকেটারের সেরাটা বার করে আনে।

মাঠে চুপচাপ নিজের কাজটা করেন ধোনি। খুব বেশি বিতর্কে জড়ান না। না মাঠে, না মাঠের বাইরে। বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মারা মেজাজ হারান, মাঠেই বিতর্কে জড়ান, কিন্তু ধোনি সে সব থেকে শতহস্ত দূরে। তাই হয়তো সমর্থকরা এত ভালবাসেন তাঁকে। আসলে ধোনি এখন আর কোনও ক্রিকেটারের নাম নয়, ধোনি একটা আবেগ। যে আবেগ আট থেকে আশিকে এক সূত্রে বেঁধে রাখে। সেই আবেগের কারণেই ইডেন থেকে ওয়াংখেড়ে, সব চিপক হয়ে যায়। সেখানে এক জনই নায়ক। এক জনই নেতা। ঠাকুর দর্শনের মতো যাঁকে এক বার দেখলেই চিৎকার করে ওঠে গোটা মাঠের দর্শক। আর তিনি। শুধু মুচকি হাসেন। হাত নাড়েন। বুঝিয়ে দেন, বিরাট, রোহিতরা থাকলেও আইপিএলের মুখ তিনিই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement