অস্ত্র: ট্রফি জয়ের স্বপ্ন দেখছেন কেকেআর স্পিনার। —ফাইল চিত্র।
আইপিএলের চলতি মরসুমে কলকাতা নাইট রাইডার্সের সফলতম বোলার তিনি। ১২টি ম্যাচে তুলে নিয়েছেন ১৮টি উইকেট। বৃষ্টির জন্য দু’টি ম্যাচ ভেস্তে না গেলে বেগুনি টুপির লড়াইয়ে ঢুকে পড়তে পারতেন। তিনি নাইটদের রহস্য স্পিনার সিভি বরুণ। আমদাবাদে টিম হোটেলের লন-এ দাঁড়িয়ে আনন্দবাজারকে একান্ত সাক্ষাৎকার দিতে রাজি হয়ে যান তিনি। সানরাইজ়ার্স হায়দরাবাদের ট্র্যাভিস হেড, অভিষেক শর্মাদের জন্য কী কী পরিকল্পনা রয়েছে? আইপিএলে দুরন্ত ছন্দের পরে কি ভারতীয় দলে ফেরার আশা করছেন? সব কিছু নিয়েই খোলামেলা কথা বললেন তিনি।
প্রশ্ন: সুনীল নারাইনের সঙ্গে খেলছেন ২০১৯ সাল থেকে। কোনও মূল্যবান পরামর্শের কথা মনে পড়ে যা আপনাকেও ভারতের সেরা রহস্য স্পিনার হতে সাহায্য করেছে?
বরুণ: ছাত্র তখনই ভাল হয়, যখন সে দেখে শিখতে পারে। নারাইনের পাশে দাঁড়িয়ে বল করার সময়ই অনেক কিছু শেখা যায়। কী ভাবে গ্রিপ লুকিয়ে ব্যাটসম্যানকে বিভ্রান্ত করতে হয়। কোন ব্যাটসম্যানকে কোন জায়গায় বল করলে সমস্যায় ফেলা যায়, এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নারাইনের থেকেই পাই। অবশ্যই বোলিং নিয়ে আলোচনা হয় দু’জনের মধ্যে। একেবারে নিজের ভাইয়ের মতো ভালবাসে। যে কোনও সমস্যার কথা আলোচনা করা যায়। নারাইনের সঙ্গে এক ড্রেসিংরুমে থাকার ফলে আমি যেন আরও উন্নত স্পিনার হয়ে উঠেছি। আইপিএল মরসুম শেষ হওয়ার পরে ওর ভিডিয়ো সংগ্রহ করে রাখি। সেগুলো দেখি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে। ওর প্রত্যেকটি ডেলিভারি থেকে নতুন কিছু শেখার আছে।
প্রশ্ন: আমদাবাদে সাধারণত স্পিনাররা সাহায্য পান। বিপক্ষে ট্র্যাভিস হেড, অভিষেক শর্মার মতো বিধ্বংসী ওপেনার রয়েছেন। যাঁরা প্রথম ছয় ওভারেই ম্যাচের রং পাল্টে দিচ্ছেন। তাঁদের দ্রুত ফেরানোর মতো দাওয়াই কি নাইট বোলিং বিভাগের হাতে আছে?
বরুণ: সানরাইজ়ার্স হায়দরাবাদ অসাধারণ ক্রিকেট খেলছে। ওদের প্রত্যেকটি ম্যাচ দেখার চেষ্টা করেছি। হেড ও অভিষেকই বিধ্বংসী হয়ে উঠছে। ম্যাচ থেকে বার করে দিচ্ছে বিপক্ষকে। আমরা যদিও তৈরি। দুই ওপেনারকে দ্রুত ফেরানোর মতো দাওয়াই আমাদের হাতেও আছে। তবে ক্রিকেট খুব অনিশ্চয়তার খেলা। মাঠে কী হয়, আগে থেকে কিছু বলা যায় না।
প্রশ্ন: আইপিএলের লিগ স্তরের মতো বড় প্রতিযোগিতায় টানা খেলার পরে প্লে-অফে ছন্দ ধরে রাখা কতটা কঠিন?
বরুণ: খুব কঠিন। কিন্তু প্লে-অফে ছন্দ হারিয়ে ফেললে সব চেয়ে সমস্যায় পড়বে দল। টানা দু’মাস খেলার পরে মাস্ল মেমোরিও ঠিক মতো কাজ করে না। তবুও এত দিন ধরে যে ভাবে সাফল্য পেয়েছি সেটাই চেষ্টা করে যেতে হবে। প্রত্যেকটি ম্যাচের আগে নিজের ভিডিয়ো দেখি। কোথায় উন্নতি করা যায়, তা বার করার চেষ্টা করি। তাতে কিছুটা হলেও ভাল খেলার তাগিদ ফিরে আসে।
প্রশ্ন: আইপিএলে সাফল্যের পরে ভারতীয় দলে প্রত্যাবর্তনের স্বপ্ন কি দেখতে শুরু করেছেন?
বরুণ: খুব একটা আশা করছি না। শেষ দু’বছর ধরে ভারতীয় দলে ফেরার স্বপ্ন দেখতাম। খুব একটা লাভ হয়নি। এ বার তাই ঠিক করেছি, যা হওয়ার হবে। নিজের খেলাটা খেলে যাব। পরিশ্রমে কোনও খামতি রাখব না। ভারতীয় দলে সুযোগ পেলে ভাল, না পেলেও হতাশ
হব না।
প্রশ্ন: লাল বলের ক্রিকেট খেলার কথা কখনও মাথায় আসে? টেস্ট খেলার স্বপ্ন দেখেন?
বরুণ: আইপিএল শেষ হওয়ার পরে তামিলনাড়ুর হয়ে সীমিত ওভারের ক্রিকেট খেলার পরিকল্পনাই রয়েছে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলি না। আমি ক্রস সিমে বল করি। লাল বলের ক্রিকেটে সাফল্য পেতে গেলে সিম ধরে বল করতে হয়। একেবারে ঘূর্ণি পিচ না হলে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আমি কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারব না।
প্রশ্ন: কলকাতার ক্রিকেটপ্রেমীরা ইতিমধ্যেই তৃতীয় ট্রফির স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। প্রত্যাশার চাপ কি দলের উপরে প্রভাব ফেলতে পারে?
বরুণ: কলকাতার সমর্থক, জিজি ভাই (গৌতম গম্ভীর) এবং সাপোর্ট স্টাফের জন্য মরিয়া লড়াই করব। নাইট সমর্থকদের আশ্বস্ত করতে পারি, আমরা মরিয়া লড়াই করব ট্রফি কলকাতায় নিয়ে আসার। শুধুমাত্র চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্য নিয়েই প্লে-অফ খেলতে এসেছি। এর চেয়ে কম কিছুতে খুশি হব না।
প্রশ্ন: চলতি আইপিএলে বেশির ভাগ ম্যাচ দেখতে এসেছেন শাহরুখ খান। প্লে-অফের আগে দলকে উদ্বুদ্ধ করতে কোনও বার্তা দিয়েছেন?
বরুণ: মাঠে ওঁর উপস্থিতিই বাড়তি খিদে তৈরি করে। পঞ্জাব ম্যাচের পরে প্রত্যেক বোলারের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলেছিলেন। সকলকে বুঝিয়েছিলেন, হাল ছাড়ার কোনও জায়গা নেই। আমরা হারতে আসিনি। এসআরকে-র প্রত্যেকটি বার্তা হৃদয় ছুঁয়ে গিয়েছে। তাঁর হাতে ট্রফি তুলে দিতে পারলে সব চেয়ে খুশি হব।