সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
আইপিএল কি বিদেশে হতে চলেছে? এই সম্ভাবনা একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। কারণ, বোর্ড প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছেন, প্রতিষেধক না বেরোনো পর্যন্ত তিনি ভারতে আইপিএল আয়োজন করবেন না।
বিসিসিআই টিভির চ্যাট শোয়ে মায়াঙ্ক আগরওয়ালকে সৌরভ বলেছেন, "আগামী চার মাস পরিস্থিতি আরও কঠিন হতে পারে। আমাদের এই পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করতেই হবে। আশা করি, বছরের শেষে অথবা আগামী বছরের শুরুতে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা যাবে।"
কিন্তু ভারতে আইপিএল আয়োজন করা যাবে কি না তা বলতে পারেননি সৌরভ। এখনও পর্যন্ত নিউজ়িল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহি করোনা মুক্ত। আমিরশাহি ইতিমধ্যে ভারতীয় বোর্ডকে আইপিএল আয়োজন করার প্রস্তাব দিয়েছে। দেশের বাইরে আইপিএল আয়োজন করার সম্ভাবনা কতটা? সৌরভ বলেন, "প্রতিষেধকের জন্য অপেক্ষা করব। তার আগে পর্যন্ত সতর্ক থাকতেই হবে। কেউই অসুস্থ হতে চায় না। বলে থুতু ব্যবহার করা নিয়েও সমস্যা হবে। প্রতিষেধক বেরোলে অন্যান্য অসুখের মতোই সেরে যাবে এই অসুখ।" যোগ করেন, "অনেকটা ব্যাটিংয়ের মতো। মন্থর পিচে এক রকম ব্যাট করতে হয়। ব্যাটিং পিচে এক রকম। কোভিড এমন একটা পরিস্থিতি যেখানে ধৈর্য ধরতেই হবে। আশা করি বছরের শেষেই সব ঠিক হয়ে যাবে।"
মায়াঙ্ককে আরও এক তথ্য ফাঁস করেন সৌরভ। ইনিংসের প্রথম বল কখনওই খেলতে চাইতেন না সচিন তেন্ডুলকর। ওয়ান ডে-তে তাঁর ওপেনিং সঙ্গী সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কেই সেই দায়িত্ব নিতে হত। রবিবার মায়াঙ্ক আগরওয়ালের সঙ্গে বিসিসিআই টিভি-র লাইভ চ্যাট শোয়ে এই তথ্য ফাঁস করলেন বোর্ড প্রেসিডেন্ট। বললেন, ‘‘প্রত্যেক বার। ইনিংসের প্রথম বল না খেলার যুক্তিতে দু’টি উত্তর তৈরি থাকত ওর। ওকে অনেক বার বলেছি, ‘প্রত্যেক বার আমিই ইনিংসের প্রথম বলে স্ট্রাইক নিই। তুমিও কখনও নিয়ো।’ আর প্রত্যেক বারই ওর উত্তর তৈরি থাকত।’’ ছন্দে থাকলে এক রকম জবাব দিতেন সচিন। ছন্দে না থাকলে তাঁর জবাব ছিল অন্য। সৌরভ বলছিলেন, ‘‘রানের মধ্যে থাকলে ও বলত, নন-স্ট্রাইকিং এন্ডে থেকেই রান যখন পাচ্ছি, আর বদলানোর প্রয়োজন নেই।’’ যোগ করেন, ‘‘যখন ছন্দে থাকত না বলত, শুরুতে নন-স্ট্রাইকার’স এন্ডে থাকাই ভাল। চাপ কমাতে সাহায্য করবে। দুই পরিস্থিতির জন্যই উত্তর তৈরি থাকত ওর কাছে।’’
সৌরভও ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নন। কয়েক বার সচিনকে বাধ্য করেছেন ইনিংসের প্রথম বল মোকাবিলা করতে। বোর্ড প্রেসিডেন্ট বলে দিলেন, ‘‘কয়েক বার ইচ্ছে করে ওর আগে আমি নন-স্ট্রাইকার’স এন্ডে চলে গিয়েছি। ততক্ষণে টিভি-তে দেখিয়ে দিয়েছে কে ফেস করছে। ব্যস, এ পাশে আর আসতে পারেনি সচিন।’’ ভারতের সব চেয়ে সফল ওপেনিং জুটি সচিন ও সৌরভের। ১৯৯৬ থেকে ২০০৭-এর মধ্যে ১৩৬ ইনিংসে দেশের হয়ে ওপেন করেছেন তাঁরা। এই জুটির রানসংখ্যা ৬৬০৯। গড় ৪৯.৩২। রানের বিচারে বিশ্বের সব চেয়ে সফলতম জুটি সৌরভ ও সচিনের।
ভারতীয় দলের পেস বিভাগের উন্নতি নিয়েও মায়াঙ্কের সঙ্গে আলোচনা করলেন সৌরভ। প্রাক্তন অধিনায়ক জানিয়েছেন, ভারতীয় ক্রিকেট সংস্কৃতির পরিবর্তন ও ফিটনেসে উন্নতির জন্যই ভারতীয় পেস বিভাগের গভীরতা বেড়েছে। মহম্মদ শামি, ভুবনেশ্বর কুমার, ইশান্ত শর্মা, উমেশ যাদব ও যশপ্রীত বুমরাদের রীতিমতো ভয় পেতে শুরু করেছে ক্রিকেটবিশ্ব। কী করে ঘটল এই পরিবর্তন? সৌরভের ব্যাখ্যা, ‘‘এই উন্নতির নেপথ্যে ক্রিকেটারদের সঙ্গেই কোচ, ফিটনেস ট্রেনারদেরও অবদান অনস্বীকার্য। সব চেয়ে বড় পরিবর্তন হয়েছে সংস্কৃতির।’’ সৌরভ আরও বলেন, ‘‘ভারতীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে বিশ্বাস তৈরি হয়েছে, আমরাও ভাল পেসার হতে পারি। ফিটনেসের মাপকাঠির পাশেই ফিট হওয়ার সংস্কৃতি ঢুকে পড়েছে ভারতীয় ড্রেসিংরুমে। শুধু বোলারদের মধ্যেই সংস্কৃতির এই পরিবর্তন ঘটেনি, ব্যাটসম্যানের মধ্যেও এই ফিটনেস সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। সবাই বুঝতে পেরেছে, আমরা যদি ফিট হই, যদি শক্তি সঞ্চয় করি তা হলে জোরে বল করতে পারি।’’
১৯৭০ ও আশির দশকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেস বিভাগের মতোই ভারতীয় পেস বিভাগকে ভয় পাচ্ছে ক্রিকেটবিশ্ব। সৌরভ যদিও বলছিলেন, ‘‘ভারতীয়দের নিজেদের তৈরি করতে হয়েছে। তাই বলছি, সংস্কৃতি পরিবর্তনের জন্যই এই সাফল্য।’’