কলকাতা নাইট রাইডার্সকে নিয়ে তেমন আশাবাদী হতে পারছেন না সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়
অবধারিত জেতা ম্যাচ অবিশ্বাস্য ভাবে হেরে যাওয়া। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে ১০ রানে হেরে কলকাতা নাইট রাইডার্স যে চরম ধাক্কা খেয়েছে এই বিষয়ে সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মনে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। এর মধ্যে আবার অইন মর্গ্যানের দলের পরবর্তী প্রতিপক্ষ বিরাট কোহলীর রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর। এমন একটা দল, যারা এ বারের আইপিএলে সত্যিকারের দল হিসেবে খেলে ইতিমধ্যেই দুইয়ে দুই করে বসে আছে। তৃতীয় অভিযান শুরু করার আগে নাইট শিবিরের একাধিক ভুল নিয়ে বিশ্লেষণ করে পরামর্শ দিলেন বাংলার রঞ্জি ট্রফি জয়ী প্রাক্তন অধিনায়ক। দুটো দল এখনও পর্যন্ত ২৬বার মুখোমুখি হয়েছে। এর মধ্যে কেকেআর জিতেছে ১৪ ম্যাচ। আরসিবির দখলে এসেছে ১২ ম্যাচ। এর মধ্যে গত বছর দুবারই বিরাটের দল জয়ের মুখ দেখেছে। সম্বরণের দাবি পরিসংখ্যানের দিক থেকে নাইটরা এখনও এগিয়ে থাকলেও চিপকের বাইশ গজে আগামী ম্যাচে কোহলীর দল ফেভারিট।
টস জিতলে ব্যাট করো
কেকেআর রান তাড়া করতে নামলেই চাপে পড়ে যায়। সেটা গত ম্যচে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। এছাড়া অতীতেও একাধিক ম্যাচে কলকাতা রান তাড়া করতে গিয়ে হেরেছে। তাই চেন্নাইয়ের এই ঘূর্ণি পিচে টসে জিতলে নাইটদের আগে খোলা মনে ব্যাট করে নেওয়া উচিত। স্কোর বোর্ডে বড় রান তুলে দিলে এই বোলিংয়ের বিরাটের দলকে গুটিয়ে দেওয়ার দক্ষতা আছে। আরও গরম বাড়লে পিচ ভাঙবে। তখন ব্যাটিং করা আরও মুশকিল। তবে এই সময় চিপকের পিচে ১৬৫ থেকে ১৭০ রান কিন্তু জেতার জন্য যথেষ্ট।
মর্গ্যানের তিন নম্বরে ব্যাট করা উচিত
ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে চিন্তা ভাবনা করার সময় এ বার এসেছে। শুভমন গিল ও নীতীশ রানা খুব ভাল শুরু করলেও ওরা নিজেদের ইনিংসকে দীর্ঘায়িত করতে পারছে না। এটা কিন্তু চিন্তার বিষয়। তিনে মর্গ্যানের আসা উচিত। কারণ ও দলের অধিনায়ক এবং সবচেয়ে ভাল ব্যাটসম্যান। তিন নম্বরে খেললে ও অনেক বেশি বল খেলার সুযোগ পাবে। এ বার পরিস্থিতি বিচার করে রাহুল ত্রিপাঠি, দীনেশ কার্তিক, আন্দ্রে রাসেল ও শাকিব আল হাসানকে ক্রিজে পাঠানো হোক। কিন্তু সমস্যা হল এই তিনজন ছন্দের ধারেকাছে নেই। কার্তিক কবে রান করবে সেটা হয়তো ও নিজেও বলতে পারবে না। বাকি দুজনেরও একই অবস্থা। তাই এমন ব্যাটিং নিয়ে রান তাড়া করার কথা স্বপ্নেও ভাবা উচিত নয়।
বাকি দুই বিদেশি কে?
ম্যাচের আগে বড় অঘটন না ঘটলে মর্গ্যান ও প্যাট কামিন্স খেলছেই। শাকিব চিপকের এই পিচে অসাধারণ বল করছে। কিন্তু সমস্যা হল ওর ব্যাটেও রান নেই। তবে এত দ্রুত শাকিবকে বসিয়ে দেবে বলে মনে হয় না। আন্দ্রে রাসেল গত ম্যাচে পাঁচ উইকেট নিলেও সবাই ওর কাছ থেকে বড় রান আশা করে। কিন্তু গত মরসুমে ওর দুর্বলতা ধরা পড়েছিল। এ বার সেটা আরও প্রকট। দলের সহকারীদের ডায়েরির পাতায় সেটা নিশ্চয়ই উঠে গিয়েছে। আইপিএল জগত ওকে নিয়ে রোমাঞ্চিত হলেও বিপক্ষ ওকে নিয়ে ভিত নয়। তাহলে বাকি রইল সুনীল নারাইন। এই চেন্নাইতেই ওর বিরুদ্ধে বল ছোড়ার অভিযোগ আনা হয়েছিল। সেই মাঠেই কি নারাইন নতুন মরসুম শুরু করবে? ও যদি ফিট থাকে তাহলে কি রাসেলের বদলি হিসেবে ওকে দেখা যাবে? আমিও উত্তরের অপেক্ষায় আছি।
বোলিং ভাল, কিন্তু হরভজনের ভূমিকা কী?
দুই ম্যাচে মাত্র তিন ওভার বোলিং করে বাকি সময়টা ভাজ্জি দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। ওকে কোটার চার ওভার বোলিং না করিয়ে খুব খারাপ বার্তা দেওয়া হচ্ছে। তবে বয়সের ভারে ওর ফিল্ডিং খুবই শ্লথ। তাই ওকে কটা ম্যাচ খেলানো হবে সেটাও কিন্তু দেখার বিষয়।
বাইশ গজে স্পিনারদের যুদ্ধ
নারাইন খেললে নাইটদের বোলিং আরও শক্তিশালী হয়ে যাবে। কিন্তু যদি গত ম্যাচের দল নিয়ে মর্গ্যান মাঠে নামে তবুও কলকাতার বোলিং কিন্তু খারাপ নয়। বিপক্ষের রান আটকানোর জন্য মর্গ্যান শুরু থেকে স্পিনারদের হাতে বল তুলে দিচ্ছে। এটা ভাল ভাবনা। যদিও বিরাটের দলে যুজবেন্দ্র চহাল, শাহবাজ আহমেদ, ওয়াশিংটন সুন্দরের মতো তিনজন স্পিনার রয়েছে। তাই লড়াই জমবে।
আতঙ্কের নাম এবি ডিভিলিয়ার্স ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েল
বিরাট, দেবদত্ত পাড়িক্কল তো আছেই। তাদের সঙ্গে রয়েছে ডিভিলিয়ার্স ও ম্যাক্সওয়েল। গত আইপিএলের পর ডিভিলিয়ার্স এ বারের প্রতিযোগিতা খেলছে। অথচ কী ফিট! কিপিং করে দলকে সাহায্য করার সঙ্গে ব্যাট হাতেও আগের মতো ভরসা যোগাচ্ছে। আর এই দলের বাড়তি পাওনা ম্যাক্সওয়েল। গত বার ছন্দে না থাকলেও এ বার কিন্তু গত দুটো ম্যাচে কঠিন সময় রান করেছে। এই দুজন ছন্দ থাকলে নাইট শিবিরের আতঙ্ক বাড়বে।