ম্যাচ গড়াপেটার নতুন কৌশল দেখে অবাক বোর্ডের অপরাধ দমন শাখা। প্রতীকী ছবি।
‘চুরি বিদ্যা মহা বিদ্যা যদি না পড় ধরা’। আইপিএল চলার সময় ম্যাচ গড়াপেটা করার এক নতুন প্রক্রিয়া দেখে অবাক বিসিসিআই-এর অপরাধ দমন শাখার আধিকারিক ও দিল্লি পুলিশ। এ বার ‘পিচ সাইডিং’ কান্ডে পুলিশ প্রয়াত অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামের দুজন সাফাই কর্মীকে গ্রেপ্তার করল বোর্ডের অপরাধ দমন শাখার আধিকারিকরা। গত ২ মে রাজস্থান রয়্যালস বনাম সানরাইজার্স হায়দরাবাদ ম্যাচ চলার সময় দুই ধৃত ব্যাক্তি বল প্রতি বল গড়াপেটা করছিলেন। তবে দলের পাণ্ডা এখনও নাগালের বাইরে। দিল্লি পুলিশের দাবি এই নতুন ধরনের গড়াপেটা কান্ডের সঙ্গে একাধিক ব্যক্তি জড়িয়ে আছেন। একই সঙ্গে অপরাধের নতুন ধরণ দেখে চিন্তিত প্রশাসন।
কিন্তু কীভাবে এই গড়াপেটা চলছিল? পাঠকদের জানিয়ে রাখা ভাল যে কোনও ক্রিকেট ম্যাচের সরাসরি সম্প্রচার টেলিভিশনে দেখানো হলে, টিভি স্ক্রিনে চোখ রাখা দর্শকরা ৩০ থেকে ৪০ সেকেন্ড পরে খেলার প্রতিটা ঘটনা দেখতে পান। আরও বিশদে বোঝাতে গেলে, মনে করুন আইপিএল-এর কোনও ম্যাচে মহম্মদ শামি ইনিংসের প্রথম ওভার শুরু করছেন। আর প্রথম বলেই বিরাট কোহলী বোল্ড হয়ে গেলেন। গ্যালারিতে থাকা দর্শকরা বিরাটের আউট হওয়ার ঘটনা সঙ্গে সঙ্গে দেখতে পেলেও, টেলিভিশনের সামনে বসে থাকা দর্শকরা কিন্তু সেই আউট হওয়ার দৃশ্য দেখবেন ৩০ কিংবা ৪০ সেকেন্ড পরে। টিভিতে সেই দৃশ্য ভেসে ওঠার আগেই মোবাইলে থাকা কয়েকটি অ্যাপের মাধ্যমে মেসেজ করে মাঠে থাকা ব্যক্তি তাঁর দলের পাণ্ডাকে পৌঁছে দিচ্ছে খবর। আর এই কয়েক সেকেন্ডের ফারাককে কাজে লাগিয়ে জুয়াড়িরা কোটি কোটি টাকা রোজগার করে ফেলছেন। তবে এ বার দর্শক শূন্য স্টেডিয়ামে খেলা হওয়ার জন্য গড়াপেটাকারীরা স্টেডিয়ামের দুই সাফাই কর্মীকে কাজে লাগিয়েছিল। জানা গিয়েছে মোবাইলে থাকা কয়েকটি অ্যাপের সাহায্যে দুজন জুয়া খেলছিল। যদিও শেষ রক্ষা হয়নি।
এই বিষয়ে বোর্ডের অপরাধ দমন শাখার প্রধান সাব্বির হোসেন শেখকদম খান্ডেলওয়াল বলেন, “স্টেডিয়ামের দুই সাফাই কর্মীর হাতে অত্যাধুনিক মোবাইল ও তাদের সন্দেহ জনক কার্যকলাপ দেখে আমার দুই আধিকারিকের সন্দেহ হয়েছিল। ওদের জিজ্ঞাসবাদের জন্য আটক করার পর ঝুলি থেকে আসল বেড়াল বেড়িয়ে এল। পরে ওদের আধার কার্ড ও মোবাইল বাজেয়াপ্ত করে দিল্লি পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। দিল্লি পুলিশ অনেক দিন ধরেই এমন একটা দলকে খুঁজে বেড়াচ্ছিল।”
করোনার জন্য এ বারের মতো আইপিএল বাতিল হয়ে গেলেও অপরাধ দমন শাখার প্রধান সাব্বির হোসেন কিন্তু দুটো বিষয় নিয়ে বেশ চিন্তিত। সেটা তিনি অকপটে জানিয়েও দিলেন। বললেন, “এই দুজনের কাছে অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড থাকায় ম্যাচ চলার সময় মাঠে থাকতে কোনও অসুবিধা ছিল না। কিন্তু চিন্তার কারণ হল ২ মে-র ম্যাচে দুজন গ্রেপ্তার হলেও এর আগে আইপিএল-এর একাধিক ম্যাচ আয়োজিত হয়েছে। এই দলটা গোটা দেশ জুড়ে কাজ করে থাকলে ওরা অসৎ উপায়ে কয়েক কোটি টাকা রোজগার করে ফেলেছে। তাছাড়া আমরা দুর্নীতি দমনের জন্য আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্য নিলে, অপরাধীরাও কিন্তু পিছিয়ে নেই। ওরা কিন্তু বিজ্ঞানকে কাজে লাগাচ্ছে। এটা আরও বেশি চিন্তার কারণ।”