হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে পঞ্চাশ করলেন প্রিয়ম গর্গ। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া
মায়ের স্বপ্ন ছিল ছেলে যেন দেশের হয়ে খেলে। ছেলে প্রিয়ম গর্গ মায়ের স্বপ্নপূরণ করেছেন। এ বারের অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে দেশকে নেতৃত্ব দেন তিনি। কিন্তু তাঁর মা ছেলের নেতৃত্ব দেখে যেতে পারেননি। নয় বছর আগে প্রিয়ম হারান তাঁর মাকে।মায়ের মৃত্যু মারাত্মক ট্র্যাজেডি বয়ে এনেছিল সংসারে। সেখান থেকে নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে লক্ষ্যপূরণ করেন প্রিয়ম।
পাঁচ ভাইবোনকে বড় করতে প্রিয়মের বাবা কখনও দুধ বিক্রি করেছেন, কখনও স্কুলের ভ্যান চালিয়েছেন। যখন যে কাজ পেয়েছেন তাই করেছেন নিঃসঙ্কোচে। সচিন তেন্ডুলকরের ভক্ত প্রিয়ম গর্গও করেছেন কঠিন পরিশ্রম। বাসের মাথায় চড়ে যেতেন প্রাকটিস করতে। নিজেকে ডুবিয়ে দিতেন কঠোর পরিশ্রমে। কঠিন সাধনার মাধ্যমেই তাঁর পরিবারের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন প্রিয়ম।
অল্পের জন্য এ বারের অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ জিততে পারেননি তিনি। শুক্রবার প্রিয়মের পরিবারের সকলের মুখে যে হাজার ওয়াটের আলো খেলা করছে তা বলে দেওয়াই যায়। মহেন্দ্র সিংহ ধোনি, শেন ওয়াটসন, ডেভিড ওয়ার্নার, কেন উইলিয়ামসদের মঞ্চে তিনিই আলো ছড়িয়ে ম্যাচের সেরা হয়েছেন।
তাঁর ২৬ বলে ৫১ রানের ইনিংস না হলে এ দিন হয়তো মাথা নীচু করেই মাঠ ছাড়তে হতো ওয়ার্নারদের। কিন্তু দিনটা তো ছিল প্রিয়মের। তাই কঠিন পরিস্থিতিতে নিজের প্রতিভার বিচ্ছুরণ ঘটালেন। হায়দরাবাদ অধিনায়ক ফিরে যাওয়ার পরেই নামেন প্রিয়ম। তাঁর সঙ্গী তখন কিউয়ি অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। পীযূষ চাওলার বল ব্যাটে লাগিয়েই রান নেওয়ার জন্য অন্ধের মতো ছুটতে শুরু করেন উইলিয়ামসন। কিন্তু নন স্ট্রাইকার্স এন্ডে দাঁড়িয়ে থাকা ১৯ বছরের প্রিয়ম বুঝতে পেরেছিলেন রান হবে না। রান নেওয়ার জন্য ছোটা আত্মঘাতী হওয়ারই সামিল। তাই উইলিয়ামসনের কলে সাড়া দেননি। ফেরত পাঠিয়েছিলেন তাঁকে। অভিজ্ঞ উইলিয়ামসনের পক্ষে ক্রিজে ফেরা আর সম্ভব হয়নি। শান্ত উইলিয়ামসনও অসন্তুষ্ট হন। পর পর ওয়ার্নার-উইলিয়ামসন চলে যাওয়ায় প্রবল চাপে পড়ে গিয়েছিল হায়দরাবাদ। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওযার অবস্থা। চার উইকেট হারিয়ে হায়দরাবাদ তখন ধুঁকছে। স্কোর বোর্ডে মাত্র ৬৯ রান। এই অবস্থা থেকে স্যাম কারেন, দীপক চহার সমৃদ্ধ চেন্নাই বোলিংয়ের বিরুদ্ধে পাল্টা মারের খেলা শুরু করেন প্রিয়ম।
আরও পড়ুন: হারের হ্যাটট্রিক চেন্নাইয়ের, ফিনিশার ধোনিকে দেখা গেল না দুবাইয়ে
চিরকালই সাহসী তিনি। এক বার ভুবনেশ্বর কুমারের বিরুদ্ধে স্টান্স নিয়েছিলেন ক্রিজের অনেকটা বাইরে দাঁড়িয়ে। ভুবি নিজেও অবাক হয়ে গিয়েছিলেন।
এ দিন প্রিয়মের ব্যাটিং দেখে বিস্মিত ওয়ার্নাররাও। হায়দরাবাদের ইনিংস গড়ার পথে তিনি পাশে পান অভিষেক শর্মাকে। ২৬ বলে ৫১ রানে অপরাজিত থেকে যান প্রিয়ম। অভিষেক শর্মার সঙ্গে ৭৭ রানের গুরুত্বপূর্ণ পার্টনারশিপে দলকে পৌঁছে দেয় ১৬৪ রানের সম্মানজনক স্কোরে।
সেই রান টপকানো সম্ভব হয়নি চেন্নাই সুপার কিংসের পক্ষে। ব্যাটের পাশাপাশি ফিল্ডিং করার সময়েও আলো ছড়ালেন প্রিয়ম। তাঁর আলোয় হায়দরাবাদ আজ আলোকিত।