বোল্ড ধোনি। ছবি: আইপিএল।
টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং করে কলকাতা নাইট রাইডার্স তুলেছিল ১৬৭। জবাবে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির দল পাঁচ উইকেট হারিয়ে থামল ১৫৭ রানে। শাহরুখ খানের উপস্থিতিতে ১০ রানে দুরন্ত জয় ছিনিয়ে নিল কেকেআর। জয়ের ফলে লিগ তালিকায় তিনে উঠে এল নাইটরা।
রান তাড়ায় চেন্নাই সুপার কিংসের প্রথম উইকেট পড়েছিল ৩০ রানে। শিবম মাভির বলে দীনেশ কার্তিককে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছিলেন ফাফ দু’প্লেসি (১০ বলে ১৭)। কিন্তু, অন্যদিকে দুরন্ত ছন্দে ছিলেন শেন ওয়াটসন। কিংস ইলেভেন পঞ্জাবের বিরুদ্ধে আগের ম্যাচেই ৫৩ বলে ৮৩ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি। বুধবার সেই মেজাজেই দেখা গিয়েছিল তাঁকে।
ওয়াটসনের পঞ্চাশ এসেছিল ৩৯ বলে। ছয়টি চার ও একটি ছয়ের সাহায্যে। অম্বাতি রায়ুডুর সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেটে ৬৯ রান যোগ করে তিনি টানছিলেন চেন্নাইকে। ২৭ বলে ৩০ করে ফিরেছিলেন রায়ুডু। কমলেশ নাগারকোটির বলে শুভমন গিলকে ক্যাচ দিয়েছিলেন তিনি। ৯৯ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারিয়েছিল সিএসকে।
পঞ্চাশ পেরনো ওয়াটসনকে ফিরিয়ে এর পর কলকাতাকে ম্যাচে ফেরালেন সুনীল নারিন। এলবিডব্লিউ হয়েছিলেন ওয়াটসন। ডিআরএস প্রযুক্তির সাহায্য নিয়েও লাভ হয়নি। ফিরতেই হয়েছিল তাঁকে। ১০১ রানে তৃতীয় উইকেট পড়েছিল চেন্নাইয়ের।
চার নম্বরে নেমেছিলেন ধোনি। কিন্তু রান পেলেন না। বরুণ চক্রবর্তীর বলে বোল্ড হলেন এমএসডি (১২ বলে ১১)। ১২৯ রানে চতুর্থ উইকেট হারিয়েছিল চেন্নাই। পাঁচে নেমেছিলেন স্যাম কারেন (১১ বলে ১৭)। তিনি ফিরলেন সেই ১২৯ রানেই। আন্দ্রে রাসেলের বলে ইয়ন মর্গ্যানের হাতে জমা পড়ল তাঁর ক্যাচ।
শেষ দুই ওভারে চেন্নাইয়ের দরকার ছিল ৩৬ রান। কেদার যাদব-রবীন্দ্র জাডেজাকে প্রতি ওভারে তুলতে হত ১৮ রান করে। শেষ ছয় বলে করতে হত ২৬ রান। রাসেল শেষ ওভারে দিলেন ১৫ রান। পাঁচ উইকেট হারিয়ে চেন্নাই থেমে গেল ১৫৭ রানে। কেদার যাদব, রবীন্দ্র জাডেজা অপরাজিত থাকলেন যথাক্রমে ৭ ও ২১ রানে।
বুধবার আবু ধাবিতে চেন্নাই সুপার কিংসের বিরুদ্ধে একই দল নামিয়েছিল কেকেআর। অন্যদিকে, চেন্নাই সুপার কিংস দলে একটি পরিবর্তন হয়েছিল। পীযূষ চাওলার পরিবর্তে এগারোয় এসেছিলেন কর্ণ শর্মা। দলে পরিবর্তন না হলেও ব্যাটিং অর্ডারে পরিবর্তন ঘটিয়েছিল কেকেআর। ক্রমাগত ব্যর্থতার পর সুনীল নারিনকে দেখা যায়নি ওপেনিংয়ে। পরিবর্তে, শুভমন গিলের সঙ্গে ওপেন করতে নেমেছিলেন রাহুল ত্রিপাঠি। আর তিনি শুরুই করলেন বাউন্ডারি হাঁকিয়ে। ছন্দে দেখিয়েছিল তাঁকে। তুলনায় নিষ্প্রভ ছিলেন গিল (১২ বলে ১১)। শার্দুল ঠাকুরের বলে ইনিংসের পঞ্চম ওভারে পিছনে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছিলেন তিনি। কলকাতার প্রথম উইকেট পড়েছিল ৩৭ রানে। ৫.৪ ওভারে পঞ্চাশ পূর্ণ হয়েছিল ইনিংসের।
পাওয়ারপ্লে-র ছয় ওভারে এক উইকেট হারিয়ে কলকাতার রান ছিল ৫২। কিন্তু, নীতিশ রাণা (১০ বলে ৯) বেশিক্ষণ থাকেননি। কর্ণ শর্মার বলে ফিরেছিলেন তিনি। ৭০ রানে পড়েছিল কেকেআরের দ্বিতীয় উইকেট। চার নম্বরে নেমেছিলেন সুনীল নারিন। অন্যপ্রান্তে, আক্রমণাত্মক ত্রিপাঠি টানছিলেন নাইটদের। তাঁর পঞ্চাশ এসেছিল ৩১ বলে। ছয়টি চার ও দুই ছয়ের সাহায্যে। ১০ ওভারে কলকাতার রান ছিল দুই উইকেটে ৯৩। কিন্তু, তার পরই ফিরেছিলেন নারিন (৯ বলে ১৭)। সীমানায় রিলে ক্যাচে ফিরতে হয়েছিল তাঁকে। লং অনে রবীন্দ্র জাডেজা ক্যাচ ধরে পড়ে গিয়ে তা ছুড়ে দিয়েছিলেন ফাফ দু’প্লেসিকে। কর্ণ শর্মার দ্বিতীয় শিকার হয়েছিলেন তিনি। চার ওভারে মাত্র ২৫ রান দিয়ে মাঝের ওভারে কলকাতাকে আটকে রেখেছিলেন চাওলার জায়গায় দলে আসা এই লেগস্পিনার।
আরও পড়ুন: চোটের জন্য এ বারের আইপিএল শেষ আলি খানের
আরও পড়ুন: নানা প্রশ্নে বিদ্ধ কার্তিকের বড় পরীক্ষার ধ্বনি
পাঁচে নেমেছিলেন ইওন মর্গ্যান (১০ বলে ৭)। কিন্তু, তিনিও রান পেলেন না। স্যাম কারেনের বলে ফিরলেন ধোনিকে ক্যাচ দিয়ে। ১১৪ রানে পড়েছিল কেকেআরের চতুর্থ উইকেট। রান পেলেন না আন্দ্রে রাসেলও। ছয় নম্বরে নেমে চার বলে দুই রানে ফিরেছিলেন তিনি। শার্দুল ঠাকুরের বলে তিনি ক্যাচ দিয়েছিলেন ধোনিকে। ১২৮ রানে পঞ্চম উইকেট হারিয়েছিল কেকেআর।
অন্যপ্রান্তে, ক্রমাগত উইকেট পড়তে থাকলেও একটা দিক আটকে রেখেছিলেন রাহুল ত্রিপাঠি। কেকেআরের হয়ে প্রথম বার ওপেন করতে নেমে তিনি টানছিলেন দলকে। শেষ পর্যন্ত ৫১ বলে ৮১ করে ডোয়েন ব্র্যাভোর বলে ফিরেছিলেন তিনি। তাঁর ক্যাচ ধরেছিলেন শেন ওয়াটসন। ত্রিপাঠির ইনিংসে ছিল আটটি চার ও তিনটি ছয়। ১৪০ রানে পড়েছিল ষষ্ঠ উইকেট।
দীনেশ কার্তিকের নেতৃত্ব নিয়ে ক্রিকেটমহলে প্রশ্ন উঠেছিল ম্যাচের আগে। ফলে তাঁর কাছে এই ম্যাচ বাড়তি গুরুত্বের। দাড়ি ছেঁটে নতুন স্টাইলে দেখা গেল তাঁকে। তবে রান এল না। ব্যাট হাতে ফের ব্যর্থ হলেন তিনি। সাত নম্বরে নেমে ১১ বলে করলেন ১২ রান। যদিও জিতে শেষ হাসি তিনিই হাসলেন।
কলকাতার ইনিংসের শেষ ওভারে রান ওঠেনি। সেই ওভারে পড়েছিল মোট তিন উইকেট। ডোয়েন ব্র্যাভোর বলে ফিরেছিলেন কমলেশ নাগারকোটি (২ বলে ০) ও শিবম মাভি (১ বলে ০)। রান আউট হয়েছিলেন বরুণ চক্রবর্তী (১ বলে ১)। ত্রিপাঠি ফেরার পর প্যাট কামিন্স (৯ বলে অপরাজিত ১৭) না চালালে ১৬৭ রানে পৌঁছত না কলকাতা। শেষ ওভারে ‘বার্থডে বয়’ ডোয়েন ব্র্যাভো নিলেন দুই উইকেট। তিন উইকেট নিয়ে তিনিই চেন্নাইয়ের সফলতম বোলার।
অন্যদিকে, ফিনিশার মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে নিয়ে ম্যাচের আগেই ছিল প্রশ্ন। যা এই হারের পর জোরাল হল। তবে ব্যাট হাতে ভরসা দিতে না পারলেও কিপিং গ্লাভস হাতে স্বচ্ছন্দ দেখাল তাঁকে। ধরলেন চারটি ক্যাচ। তার মধ্যে শেষ ওভারে একটি প্রায় উড়ে গিয়ে তালুবন্দি করলেন। একটি রান আউটেও বড় ভূমিকা থাকল তাঁর। কর্ণ শর্মাকে খেলানোর সিদ্ধান্ত থেকে বোলার পরিবর্তন, ধোনির নেতৃত্ব যথারীতি নজর কাড়ল। এক সময় মনে হচ্ছিল, দুশোর কাছাকাছি পৌঁছবে কলকাতা। কিন্তু, ব্র্যাভো-কর্ণের বোলিংয়ে আটকে গেলেন নাইটরা। শেষ পর্যন্ত অবশ্য কলকাতার নাইটদের সামনে নতজানু দেখাল চেন্নাইয়ের সিংহদের।