পরিদর্শন: শারজা স্টেডিয়াম দেখে এসেছেন বোর্ড প্রধান সৌরভ। ছবি: টুইটার
মাঠের মধ্যে দ্বৈরথ মহেন্দ্র সিংহ ধোনি ও রোহিত শর্মার। আর মাঠের বাইরে অগ্নিপরীক্ষা তাঁদের।
অতিমারির মধ্যে দেশ থেকে আইপিএল বিদেশে নিয়ে যাওয়া। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে স্বাস্থ্যবিধি তৈরি করে মহাযজ্ঞের আয়োজন করা। চোদ্দো মাস পরে মাঠে ফেরা মহেন্দ্র সিংহ ধোনি যদি বর চান ‘প্রথম দিনের টসটা জিতিয়ে দাও’, বোর্ড প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রার্থনা হবে, ‘‘সব কিছু যেন ঠিক থাকে।’’
ছাত্রজীবনের বড় পরীক্ষার আগের রাতের মতোই মরুদেশে শুক্রবার দিনটা কাটল সৌরভের। অন্তিম প্রস্তুতিতে ব্যস্ত বোর্ড প্রেসিডেন্ট তার মধ্যেই রাতের দিকে ফোনে আনন্দবাজারকে বললেন, ‘‘চ্যালেঞ্জ তো মানুষের জীবনে থাকেই। কিন্তু এটা অন্য রকম এক চ্যালেঞ্জ। কোভিডের কারণে এ বারের আইপিএল একদম অন্য রকম।’’ এখনও পৃথিবীর শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক হওয়া দূরের কথা, আতঙ্কই কাটেনি। তার মধ্যেই আইপিএল। যেখানে হাজার একটা নিষেধাজ্ঞা। বলে থুতু লাগানো যাবে না, করমর্দন করা যাবে না, টস করো দূরে দাঁড়িয়ে, বোলারের টুপি নেবেন না আম্পায়ার।
সপ্তাহখানেক ধরে সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে সব কিছু সরেজমিনে দেখার পরে মাহেন্দ্রক্ষণের আগে অবশ্য আশ্বস্ত করছেন সৌরভ, ‘‘মনে হচ্ছে, সব কিছু ঠিক আছে। এখন অপেক্ষা ক্রিকেট শুরু হওয়ার।’’ তিনটি কেন্দ্রে হবে এ বারের আইপিএল। উদ্বোধন আজ, শনিবার আবু ধাবিতে। ম্যাচ হবে শারজা, দুবাইয়েও। শুরুতেই ক্রিকেটের এল ক্লাসিকো। মুখোমুখি চার বারের চ্যাম্পিয়ন মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ও তিন বারের চ্যাম্পিয়ন চেন্নাই সুপার কিংস। চোদ্দো মাস পরে মাঠে ফিরছেন ধোনি। শেষ দেখা গিয়েছিল বিশ্বকাপের সেই স্বপ্নভঙ্গের সেমিফাইনালে। যেখানে মার্টিন গাপ্টিলের থ্রোতে রান আউট হয়ে চোখের জল মুছতে মুছতে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। ফিনিশার কী ভাবে খেলবেন বুম বুম বুমরার ইয়র্কার? রোহিত শর্মা নামক রানমেশিন ভোঁতা করার জন্য কী মগজাস্ত্র প্রয়োগ করবেন ক্যাপ্টেন কুল? নানা উত্তেজক ধাঁধায় ফের সরব ক্রিকেট দুনিয়া।
আরও পড়ুন: আজ শুরু আইপিএল, মহারণে শুরু মহাযজ্ঞ
সৌরভ— তিনি কাকে ফেভারিট ধরছেন? প্রথম আইপিএলের উদ্বোধনী ম্যাচে যিনি টস করতে গিয়েছিলেন, যাঁর নেতৃত্বে ব্রেন্ডন ম্যাকালামের ঝোড়ো ইনিংস দিয়ে জয়যাত্রা শুরু হয়েছিল জনপ্রিয় ক্রিকেট লিগের, তিনি বলে দিচ্ছেন, ‘‘ফেভারিট বাছা কঠিন। দারুণ একটা ম্যাচ দিয়ে শুরু হচ্ছে টুর্নামেন্ট, এটা বলে দিতে পারি। সব চেয়ে বেশি আইপিএল তো এই দু’টো টিমই জিতেছে।’’ আমিরশাহিতে প্রশাসক হিসেবে গিয়ে শারজার বিখ্যাত সব ভারত-পাক ম্যাচ মনে পড়ছিল না আপনার? কিছুক্ষণের জন্য যেন ক্রিকেট জীবনে ফিরলেন সৌরভ। ‘‘দারুণ সব ম্যাচ হত। শারজা মানেই ছিল উত্তেজক ক্রিকেট। তখন টি-টোয়েন্টি ছিল না। এখন আইপিএল এসে গিয়েছে, টি-টোয়েন্টি খুব জনপ্রিয় খেলা। সময় পাল্টে গিয়েছে। মাঠগুলোও পাল্টে গিয়েছে দুবাই, শারজায়। দারুণ সব স্টেডিয়াম হয়েছে।’’
আরও পড়ুন: কেকেআরের মহড়ায় যোগ দিলেন রাসেল
গত দু’মাস ধরে কার্যত বিনিদ্র রজনী কাটছে বোর্ড প্রেসিডেন্টের। কখনও আইপিএলের চিনা স্পনসর বিদায় নিচ্ছে, কখনও বা দুবাই থেকে ফোন আসছে চেন্নাই সুপার কিংসে ১৩ জন করোনা পজিটিভ। ইংল্যান্ডে মাঠের মধ্যে হোটেল আছে। সেখানে দু’টি দলের খেলা হচ্ছে। কিন্তু আইপিএলে আটটা দলের প্রায় তিনশো ক্রিকেটারকে নিয়ে বিদেশে জৈব সুরক্ষা বলয় তৈরি করতে হয়েছে। সামান্য ভুল মানেই গ্লেন ম্যাকগ্রার আইটসুইংয়ের মতোই সব প্রস্তুতি ভেস্তে দিয়ে যাবে।
প্রশাসক হিসেবে এই আইপিএল কি তাঁর জীবনের সব চেয়ে বড় পরীক্ষা নয়? সৌরভ বলেন, ‘‘বর্তমান পরিস্থিতিতে অবশ্যই বড় চ্যালেঞ্জ। কোভিডের জন্য আমাদের সব কিছু ঢেলে সাজাতে হয়েছে। পুরো সিস্টেম তৈরি করতে হয়েছে এখানে (আমিরশাহিতে)। স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যাপারটিকে সব চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হয়েছে।’’ বৃহত্তর ছবি দেখছেন তিনি। ‘‘সারা দেশই হয়তো আইপিএল শুরুর অপেক্ষায়। আমি বলব, এটা ৫৩ দিনের লম্বা টুর্নামেন্ট। এক দিনের নয় দীর্ঘমেয়াদি পরীক্ষা সকলের।’’ শোনা গেল, বোর্ডের মধ্যে তাঁর প্রশাসনিক দলকেও একই বার্তা দিয়েছেন— ৫৩ দিনের লড়াই।
জানালেন, এমিরেট্স ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন (আমিরশাহির ক্রিকেট বোর্ড) খুবই সাহায্য করেছে। করোনা অতিমারির এই কঠিন সময়ে কোনও রকম উদ্বোধনী অনুষ্ঠান রাখছে না বোর্ড। সৌরভ বলে দিলেন, ‘‘শুধু খেলাটাই করতে চাই আমরা। কোনও অনুষ্ঠান থাকবে না।’’ কতটা আলাদা হবে এ বারের আইপিএল? জানতে চাওয়ায় তাঁর জবাব, ‘‘কোভিডের জন্য পরিস্থিতির দিক থেকে আলাদা তো বটেই। ভারতে আইপিএল নিয়ে উন্মাদনা অবিশ্বাস্য। অনেক মানুষ দেখতে আসেন। আটটা শহরের স্টেডিয়ামে প্রত্যেকটা ম্যাচে লোক উপচে পড়ে। সেই গমগম করা ব্যাপারটা এ বারে হয়তো মাঠে দেখা যাবে না। একে তো ভারতে টুর্নামেন্ট হচ্ছে না। তার উপরে এখানেও দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে খেলা হবে।’’
তিনি নিজে শারজায় খেলেছেন। এ বারে স্টেডিয়াম ঘুরে দেখলেন। পিচ নিয়ে এত কথাবার্তার মাঝে পিচ-িবশেষজ্ঞ প্রাক্তন অধিনায়ক কী মনে করেন? ‘‘ভাল পিচ হবে। আমার মনে হয়, উপভোগ্য ক্রিকেটই দেখা যাবে।’’ যোগ করলেন, ‘‘ক্রিকেটীয় দিক থেকে আইপিএলের চরিত্র পাল্টাবে বলে আমি মনে করি না। সেই রুদ্ধশ্বাস সমাপ্তিই দেখা যাবে।’’ দেশের ক্রিকেট ভক্তদের জন্য তাঁর বার্তা? বললেন, ‘‘এই কঠিন সময়ে মানুষের মনে কিছুটা হলেও যেন আনন্দ ফেরায় আইপিএল। টিভিতে দেখে যদি কিছুটা স্বস্তি পান সকলে।’’
আর কয়েক ঘণ্টা। ওই তো নামছেন ধোনি, রোহিতরা। তাঁদের মহারণ, সৌরভদের অগ্নিপরীক্ষা!