বেজে গিয়েছে আইপিএলের ত্রয়োদশ সংস্করণের দামামা। ১৯ সেপ্টেম্বর এ বারের আইপিএলের প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ও চেন্নাই সুপার কিংস। দুই দলের অধিনায়কই এই টি-২০ প্রতিযোগিতায় অত্যন্ত সফল। পরিসংখ্যান ছাড়াও কঠিন পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া নজর কেড়েছে আইপিএলের বিগত মরসুমগুলিতে। কিন্তু এ বারের আট অধিনায়ককের মধ্যে পরিসংখ্যানের বিচারে সফলতম কে? দেখে নেওয়া যাক।
মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। ‘ক্যাপ্টেন কুল’ আইপিএলের প্রথম সিজন থেকেই নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন চেন্নাই সুপার কিংসকে। ভারতীয় দলের অধিনায়ক হিসাবে যে মুন্সিয়ানার পরিচয় তিনি দেখিয়েছেন, তা আইপিএলেও পুরোদমে বজায় রয়েছে।
তাঁর নেতৃত্বেই টুর্নমেন্টে সব থেকে বেশি বার ফাইনাল খেলেছে চেন্নাই। এই পরিসংখ্যানই বুঝিয়ে দেয় ধোনির চেন্নাই কতটা ধারাবাহিক দল। আট বার ফাইনাল খেলে তিন বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে চেন্নাই। ধোনির আইপিএল পরিসংখ্যানও বেশ ঈর্ষনীয়। অধিনায়ক হিসাবে তিনি খেলেছেন ১৭৪টি ম্যাচ। ৫৯.৮ শতাংশ ম্যাচেই জিতিয়েছেন দলকে। সেই সঙ্গে তাঁর মোট রান ৪ হাজার ৪৩২।
আইপিএল অধিনায়কদের কথা এলে এর পরই আসবে রোহিত শর্মার নাম। ২০১৩-তে সিজনের মাঝ পথেই মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের দায়িত্ব ছেড়ে দেন রিকি পন্টিং। তার পর মুম্বইয়ের দায়িত্ব আসে ‘হিট ম্যান’-এর কাঁধে। সে দায়িত্ব পালনে তিনি যে সফল, তা পরিসংখ্যানই বলে দেয়।
অধিনায়ক হিসাবে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সকে সব থেকে বেশি, চার বার (২০১৩, ’১৫, ’১৭, ’১৯) আইপিএল ট্রফির স্বাদ দিয়েছেন। ১০৪ ম্যাচে মুম্বইয়ের হয়ে অধিনায়কত্ব করেছেন তিনি। জিতেছেন ৫৭.৭ শতাংশ ম্যাচে। আইপিএলের সমস্ত সিজন মিলিয়ে তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তিনি। পরিসংখ্যানের বাইরে বেরিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেন, কঠিন পরিস্থিতিতে মাথা ঠান্ডা রেখে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে অধিনায়ক রোহিতের।
ডেভিড ওয়ার্নার। অস্ট্রেলীয় এই বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যানের হাতে রয়েছে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের দায়িত্ব। ২০১৫ থেকেই এই দায়িত্ব পালন করে আসছেন তিনি। তাঁর দায়িত্ব নেওয়ার পরের বছরই (২০১৬) চ্যাম্পিয়ন হয় হায়দরাবাদ।
ব্যাট হাতে আইপিএল দাপানো অভ্যাসে পরিণত করেছেন ডেভিড। ২০১৯ আইপিএলে সর্বোচ্চ রান (৬৯২) সংগ্রাহক তিনি। প্রিমিয়ার লিগে প্রথম ২০ রান সংগ্রাহদের মধ্যে ওয়ার্নারের ব্যাটিং গড় সব থেকে বেশি (৪৩.১৭)। ৪৭ ম্যাচে হায়দরাবাদকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। জিতেছেন ৫৫.৩ শতাংশ ম্যাচ।
২০১৮ থেকে কলকাতা নাইট রাইডার্সের দায়িত্ব রয়েছে দীনেশ কার্তিকের হাতে। ২০১৮তে তৃতীয় স্থানে আইপিএল যাত্রা শেষ করেছিল নাইটরা। একটুর জন্য হাত ছাড়া হয়েছিল ফাইনালে খেলার সুযোগ। গত বছর পঞ্চম স্থানেই থেমে থাকতে হয়েছিল নাইটদের। দীনেশও ব্যাট হাতে তেমন সাফল্য পাননি।
আইপিএলে ১৮২টি ম্যাচ খেললেও, এখনও অবধি ৩৬ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন কার্তিক। জিতেছেন ৪৭.২ শতাংশ ম্যাচ। দুবাইয়ে তাঁর নেতৃত্বে ‘বাদশা’র দল কেমন পারফর্ম করে তা দেখতে মুখিয়ে রয়েছেন নাইট সমর্থকরা।
আইপিএল অধিনায়কদের নিয়ে কাটাছেঁড়া করতে বসলে ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহালির নাম অবধারিত ভাবেই আসে। আইপিএলে তিনি এখনও অবধি সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। কিন্তু ব্যাট হাতে রয়্যাল চ্যালে়ঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরে তিনি যতটা সফল, অধিনায়ক হিসাবে কী ততটা সফল?
প্রতি বছরই কোহালির ব্যাঙ্গালোরকে নিয়ে উন্মাদনা থাকে চরমে। কিন্তু সিজন শেষে ট্রফির স্বপ্ন অধরাই থেকে যায়। ১১০টি ম্যাচে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্সকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। কিন্তু জিতেছেন মাত্র ৪৪.৫ শতাংশ ম্যাচে। নিন্দুকেরা বলেন, ভারতের অধিনায়কত্ব করার সময় তিনি পাশে পেয়েছেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি ও রোহিত শর্মার মতো ক্রিকেট মস্তিষ্ককে। ব্যাঙ্গালোরে সেই অভাব কী প্রকট?
২০১৮-র থেকেই দিল্লির ডেয়াডেভিলসকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন শ্রেয়স আইয়ার। ২০১৯-এ এই তরুণ নেতার অধীনে সেমিফাইনাল খেলেছিল দিল্লি। সৌরভ ও পন্টিংয়ের তত্ত্বাবধানে থেকে নিজেদের গুছিয়ে নিতে পেরেছেন দিল্লির তরুণরা।
দু’টি সিজন মিলিয়ে মাত্র ২৪ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। তার মধ্যে ৫৪.২ শতাংশ ম্যাচই জিতেছেন। এ ব্যাপারে কোহালি, কার্তিকের থেকেই এগিয়ে রয়েছেন তিনি। তবে ক্রিকেট মহলের একটা বড় অংশ বলে, তাঁর এই সাফল্যের পিছনে রয়েছে সৌরভ-পন্টিংয়ের মস্তিষ্কও।
২০২০ আইপিএলে রাজস্থান রয়্যালসের দায়িত্ব স্টিভ স্মিথের কাঁধে। অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যান এর আগে রাইজিং পুণে সুপারজায়ান্টকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। প্রিমিয়ার লিগে ২৯টি ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। জিতেছেন ৬৫ শতাংশ ম্যাচ। অর্থাৎ জয়ের শতাংশের দিক থেকে তিনিই সফলতম অধিনায়ক। তবে এটাও ঠিক যে, তিনি ধোনি-রোহিতের থেকে অনেক কম ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
তবে এ বার রাজস্থানকে প্রথম বার নেতৃত্ব দেবেন তিনি। এখনও অবধি এক বারই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে রাজস্থান। আইপিএলের উদ্বোধনী সিজনে স্মিথের স্বদেশীয় শেন ওয়ার্ন ভেল্কি দেখিয়েছিলেন। তরুণ তুর্কিদের নিয়েই জিতেছিলেন ট্রফি। ওয়ার্নের সেই স্মৃতি কি ফেরাতে পারবেন স্মিথ?
প্রথম বারের জন্য নেতৃত্ব পেয়েছেন লোকেশ রাহুল। তাঁর কাঁধেই এ বার কিংস ইলেভেন পঞ্জাবের ভার। এই আইপিএল সফরে তিনি কোচ হিসাবে পাচ্ছেন অনিল কুম্বলের মতো পোড়খাওড়া ক্রিকেটারকে। ক্রিস গেলের মতো বিধ্বংসী ব্যাটসম্যানও তাঁর দলে।
২০১৮ ও ’১৯-এ ব্যাট হাতে যথেষ্ট সফল হয়েছেন রাহুল। গত বছর সেঞ্চুরিও কয়েছেন। অধিনায়কত্বের দায়িত্ব নিয়ে পঞ্জাবকে কতটা সাফল্য দিতে পারবেন, তা দেখতে হলে অপেক্ষা করতে হবে আর মাত্র কয়েকটা দিন।