হর্ষ-বিষাদ: জয়ের পরে নোভাক। নাম তুলে নিয়ে নাদাল । গেটি ইমেজেস
অস্ট্রেলীয় ওপেন শুরু হওয়ার সপ্তাহ খানেক আগে রাফায়েল নাদাল চোটের জন্য সরে দাঁড়ালেন এটিপি কাপের প্রথম ম্যাচ থেকে। বিশ্বের দু’নম্বর, স্পেনের তারকার সিঙ্গলসে খেতার কথা ছিল অস্ট্রেলিয়ার অ্যালেক্স ডি মিনারের বিরুদ্ধে। কিন্তু ম্যাচের কয়েক ঘণ্টা আগেই নাদাল নাম তুলে নেন। তবে একই প্রতিযোগিতায় দুরন্ত জয় পেয়েছেন নোভাক জ়োকোভিচ।
নাদাল টুইট করেছেন, ‘‘স্পেন দল এবং আমার সাপোর্ট স্টাফ সিদ্ধান্ত নিয়েছে এটিপি কাপের প্রথম ম্যাচে আমি খেলব না। আমার পিঠে চোটের সমস্যা রয়েছে। আশা করি বৃহস্পতিবার সুস্থ হয়ে উঠব। আমাদের দল শক্তিশালী। দলের বাকিদের জন্য শুভেচ্ছা রইল।’’ গত বছর স্পেন ফাইনালে সার্বিয়ার কাছে হেরেছিল। বৃহস্পতিবার স্পেন খেলবে গ্রিসের বিরুদ্ধে। দল আশায়, বৃহস্পতিবার ফিট হয়ে উঠে অস্ট্রেলীয় ওপেনের আগে কিছুটা ম্যাচ প্র্যাকটিসও সেরে নিতে পারবেন তিনি এটিপি কাপে। তবে নাদাল না নামলেও প্রথম টাইয়ে তাঁর দেশ ৩-০ হারিেয়ছে অস্ট্রেলিয়াকে।
জ়োকোভিচ যদিও মরসুমের শুরুটা দারুণ ভাবে করলেন এটিপি কাপে ডেনিস শাপোভালোভকে হারিয়ে। নবম অস্ট্রেলীয় ওপেন জয়ের লক্ষ্যে থাকা সার্বিয়ার তারকা ৭-৫, ৭-৫ হারান কানাডার তারকাকে। এর পরে তিনি ডাবলসে ফিলিপ ক্রাজেনোভিচের সঙ্গে জুটিতে ডাবলসে নেমে হারান শাপোভালোভ এবং মিয়োস রাওনিচের জুটিকে ৭-৫, ৭-৬ (৭-৪)। এই জয়ের ফলে গত বারের চ্যাম্পিয়ন সার্বিয়া গ্রুপ ‘এ’-র লড়াইয়ে ২-১ হারায় কানাডাকে।
ম্যাচের পরে জ়োকোভিচ বলেন, ‘‘মরসুমের শুরুটা দুরন্ত ভাবে হল। হার্ডকোর্টে শাপোর (শাপোভালোভ) বিরুদ্ধে খেলাটা বড় চ্যালেঞ্জ। আমার মনে হয় দু’জনেই উচ্চ পর্যায়ের টেনিস উপহার দিতে পেরেছি। তাই আমি সব মিলিয়ে খুশি।’’ তিনি আরও যোগ করেছেন, ‘‘এই প্রতিযোগিতাটা দারুণ। আমাদের এ রকমই আরও প্রতিযোগিতা প্রয়োজন। যেখানে আমরা একটা দলকে, নিজের দেশের প্রতিনিধিত্ব
করতে পারব।’’
গত বছর এটিপি কাপের উদ্বোধনে একাধিক শহরে খেলা হয়েছিল। যোগ দিয়েছিল মোট ২৪টি দল। তবে এ বার সেখানে যোগ দেওয়া দলের সংখ্যা কমিয়ে আনা হয়েছে ১২টিতে। সব ম্যাচই খেলা হবে মেলবোর্ন পার্কে। এ দিন টাইয়ে প্রথমে অবশ্য কানাডাকে এগিয়ে দিয়েছিলেন রাওনিচ। তিনি স্ট্রেট সেটে হারান দুসান লাজোভিচকে। ১-০ এগিয়ে যায় এই জয়ের ফলে কানাডা। জ়োকোভিচ সিঙ্গলস জিতে সমতা ফেরানোর পরে ডাবলসে নেমে
দলকে জেতান।
তবে যুক্তরাষ্ট্র ওপেন চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রিয়ার ডমিনিক থিমের শুরুটা প্রত্যাশা অনুযায়ী হল না। তিনি প্রথম ম্যাচে বিশ্বের ১০ নম্বর ইটালির মাতেও বারেত্তিনির কাছে হারেন ২-৬, ৪-৬। জয়ের পরে বারেত্তিনি বলেছেন, ‘‘নিজের পারফরম্যান্সে খুশি। বিশেষ করে দলের জন্য অবদান রাখতে পেরে।’’ বারেত্তিনির ম্যাচের আগে অবশ্য ইটালি পিছিয়ে পড়েছিল বিশ্বের ১০০ নম্বরে থাকা ডেনিস নোভাক বিশ্বের ১৭ নম্বর ফাবিও ফগনিনিকে হারিয়ে দেওয়ায়। এর পরে নির্ণায়ক ডাবলস ম্যাচে থিম ও নোভাককে হারান ৬-১, ৬-৪ ফলে বারেত্তিনি এবং ফগনিনি।
বিশ্বের এক নম্বর জ়োকোভিচ আবার টেনিসের তরুণ প্রজন্মের প্রশংসা করলেন মঙ্গলবার। তিনি বলেছেন, ‘‘নতুন গ্র্যান্ড স্ল্যাম চ্যাম্পিয়নদের উঠে আসাটা টেনিসের জন্যই ভাল। টেনিসের নতুন প্রজন্ম বড় মঞ্চে সাহসিকতা দেখাচ্ছে। আমাদের তিন জনের (ফেডেরার, নাদাল, জ়োকোভিচ) চ্যালেঞ্জ সামলাচ্ছে। তাই টেনিসের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল বলেই আমি মনে করি।’’ জ়োকোভিচের ইঙ্গিত গ্রিসের স্টেফানোস চিচিপাস, জার্মানির আলেকজান্ডার জ়েরেভ, কানাডার শাপোভালোভ এবং ইটালির বারেত্তিনির দিকে। তবে যতই নতুন প্রজন্ম চ্যালেঞ্জ জানাক, জ়োকোভিচ এটাও বলতে ভোলেননি, ‘‘এক বার গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিততে পারলে টেনিস জীবনে অন্য একটা অধ্যায় শুরু হয়ে যায়। তরুণ প্রজন্মের অনেকের সেই সম্ভাবনা রয়েছে। তবে রাফা, রজার আর আমি দেখব যাতে আগামী ১০ বছরে সেটা না হয়।’’
নিজস্ব প্রতিবেদন
২ ফেব্রুয়ারি: গত মরসুমে অস্ট্রেলীয় ওপেনের পরে তাঁর হাঁটুতে দু’বার অস্ত্রোপচার হয়েছিল। এর পরে আর বাকি মরসুমে কোনও প্রতিযোগিতায় খেলেননি। এ বারও অস্ট্রেলীয় ওপেনে তিনি নামবেন না। চোট সারিয়ে টেনিস কোর্টে ফিরে আসার লক্ষ্যে ছোট প্রতিযোগিতায় নামার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছেন। তিনি—
রজার ফেডেরার।
৩৯ বছর বয়সি সুইস তারকার গ্র্যান্ড স্ল্যাম খেতাবের সংখ্যা ২০। তবে গত মরসুমে জানুয়ারিতে মেলবোর্ন পার্কে সেমিফাইনালে নোভাক জ়োকোভিচের বিরুদ্ধে হারের পর থেকে আর কোনও প্রতিযোগিতায় খেলেননি ফেডেরার। তাঁর এজেন্ট টোনি গডসিক ডিসেম্বরে জানিয়েছিলেন, তিনি ফেডেরারের জন্য একটি সূচি তৈরি করে দেবেন। সেই অনুযায়ী ফেব্রুয়ারির শেষ দিক থেকে প্রতিযোগিতায় নামাই এখন লক্ষ্য ফেডেরারের। সুইস মিডিয়ার খবর, দোহায় এটিপি ২৫০ পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় প্রত্যাবর্তন ঘটতে পারে ফেডেরারে। যা হবে ৮ থেকে ১৩ মার্চ। যে প্রতিযোগিতায় তিনি এর আগে তিন বার জিতেছেন। ‘‘আবার জয়োৎসব করতে চাই। এর জন্য যদি আমাকে কঠিন দীর্ঘ রাস্তা পেরোতে হয়, তার জন্যও রাজি,’’ সুইস সংবাদমাধ্যমে বলেছেন ফেডেরার। তিনি আরও যোগ করেছেন, ‘‘কোন প্রতিযোগিতায় প্রত্যাবর্তন ঘটানো যায়, সেটা অনেক দিন ধরেই ভাবছি। ছোট প্রতিযোগিতাগুলোয় খেলতে চাই। যাতে আমার উপরে চাপও বেশি না থাকে।’’ ফেডেরার জানিয়েছেন, তিনি ফিটনেস ফিরে পাওয়ার লক্ষ্যে এটিপি টুরের উপরে নজর রেখে গিয়েছেন। ‘‘ভেবেছিলাম টেনিসের বেশি খোঁজখবর রাখব না এই সময়টায়। নিজের রিহ্যাব আর সন্তানদের নিয়েই ব্যস্ত থাকব। কিন্তু এর মধ্যে ম্যাচ দেখেছি, ম্যাচের ফল কী হচ্ছে সেটাও নজরে রেখেছি। এটা আশ্চর্যের ব্যাপার। কারণ সাধারণত কোনও প্রতিযোগিতায় যোগ না দিলে আমি এ সবের খোঁজ রাখি না।’’
ফেডেরার জানিয়েছেন, তাঁর প্রধান লক্ষ্য এ মরসুমে উইম্বলডন এবং অলিম্পিক্সে নামা। উইম্বলডনে ফেডেরার আট বারের চ্যাম্পিয়ন। এ ছাড়া ২০১২ লন্ডন অলিম্পিক্সে তিনি সিঙ্গলসে রুপো জিতেছিলেন।
যদিও প্রথমে মনে করা হয়েছিল ফেডেরার এ বারের অস্ট্রেলীয় ওপেনেই ১৩ মাস পরে প্রত্যাবর্তন ঘটাবেন। সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে তিনি প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছিলেন বছরের প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যামে নামার। কিন্তু এর পরেই তিনি জানিয়ে দেন, চোট সারিয়ে টেনিস কোর্টে ফেরার জন্য তাঁর আরও সময় প্রয়োজন। এই কারণেই তিন সপ্তাহ পিছিয়ে গিয়ে ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া অস্ট্রেলীয় ওপেনেও না খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়াটা যে সোজা ছিল না, সেটা ফেডেরারের কথায় স্পষ্ট। তিনি বলেছেন, ‘‘অস্ট্রেলীয় ওপেন থেকে নাম তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে খারাপ লেগেছে। কারণ এই একটা জায়গায় আমি খেলতে খুব পছন্দ করি।’’