Asian Games

এশিয়াডে ১১ পদক, ক্রিকেটে ইতিহাস ভারতের, দ্বিতীয় দিনে বাঙালির গলায় সোনা, খাতা খুলল শুটিংও

সোমবার এশিয়াডে ছ’টি পদক এল ভারতের ঘরে। তার মধ্যে সবচেয়ে বড় নিঃসন্দেহে মেয়েদের ক্রিকেটে সোনা। এ ছাড়া যাঁদের থেকে অনেক পদকের আশা করা হচ্ছে, সেই শ্যুটিং থেকেও পদক এল সোমবার।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২২:১৭
Share:

এশিয়াডে সোনাজয়ী ভারতের মহিলা ক্রিকেট দল। ছবি: পিটিআই।

সোমবার এশিয়াডে ছ’টি পদক এল ভারতের ঘরে। তার মধ্যে সবচেয়ে বড় নিঃসন্দেহে মেয়েদের ক্রিকেটে সোনা। যাঁদের থেকে অনেক পদকের আশা করা হচ্ছে, সেই শ্যুটিং থেকেও পদক এল সোমবার। এ ছাড়া রোয়িং থেকে পদক এসেছে তিনটি। ২টি সোনা, ৩টি রুপো এবং ৬টি ব্রোঞ্জ নিয়ে ভারত দ্বিতীয় দিনের শেষে পদক তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে। এখনও অনেক ইভেন্টের খেলা শুরু হওয়া বাকি।

Advertisement

দিনের সেরা জয় মহিলা ক্রিকেটারদের। ফাইনালে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে সোনা জিতেছে তারা। প্রথম দিনে যদি মেহুলি ঘোষ রুপো পান, তা হলে দ্বিতীয় দিনে বাংলার তিতাস সাধুর গলায় ঝুলেছে সোনার পদক। ফাইনালে দুর্দান্ত বল করেছেন। একাই শ্রীলঙ্কার টপ অর্ডারকে ধসিয়ে দিয়েছেন। তারও আগে শ্যুটিংয়ের দলগত বিভাগ থেকে সোনা জিতেছে ভারত। চমকে দিয়েছেন রোয়াররাও। সেই খেলা থেকে পাঁচটি পদক এসেছে।

ক্রিকেট

Advertisement

নিঃসন্দেহে দিনের সেরা সাফল্য ক্রিকেটে। সোমবারের দ্বিতীয় সোনা আসে ক্রিকেটের হাত ধরেই। মহিলাদের ক্রিকেটের ফাইনালে শ্রীলঙ্কাকে হারান হরমনপ্রীত কৌর, স্মৃতি মন্ধানারা। ব্যাট হাতে ভাল খেলেন মন্ধানা ও জেমাইমা রদ্রিগেজ। বল হাতে দাপট দেখান বাংলার তিতাস সাধু। শ্রীলঙ্কার টপ অর্ডারকে একাই আউট করেন তিনি। সেই ধাক্কা সামলাতে পারেনি শ্রীলঙ্কা। আনন্দবাজার অনলাইনের ২০২২ সালের ‘বছরের বেস্ট’ পুরস্কার পেয়েছিলেন তিতাস। সেই তিতাসের হাত ধরেই সোনা এসেছে ক্রিকেটে। ফাইনালে টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন ভারতের অধিনায়ক হরমনপ্রীত। নিলম্বিত থাকায় কোয়ার্টার ফাইনাল ও সেমিফাইনালে খেলতে পারেননি তিনি। ফাইনালে দলে ফেরেন হরমন। ব্যাট করতে নেমে তাড়াতাড়ি দলের ওপেনার শেফালি বর্মার উইকেট হারায় ভারত। অপর ওপেনার মন্ধানা ভাল খেলেন। তাঁকে সঙ্গ দেন তিন নম্বরে নামা জেমাইমা। দু’জনে মিলে দলের রানকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন। মন্ধানা ও জেমাইমার মধ্যে ৭৩ রানের জুটি হয়। দেখে মনে হচ্ছিল, ১৩০ রানের কাছাকাছি যেতে পারবে ভারত। কিন্তু ৪৬ রান করে মন্ধানা আউট হওয়ার পরেই খেই হারায় ভারতের ব্যাটিং। মিডল অর্ডার রান পায়নি। বাধ্য হয়ে বড় শট খেলতে গিয়ে ৪২ রানে আউট হন জেমাইমা। ব্যাট হারতে ব্যর্থ অধিনায়ক হরমনপ্রীত। শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১১৬ রান করে ভারত। জবাবে প্রথম ওভারেই ১২ রান করেন শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক চামারি আতাপাত্তু। ভারতীয় সমর্থকদের মনে চাপ বাড়ার আগেই অবশ্য ভারতকে খেলায় ফেরান তিতাস। নিজের প্রথম ওভারেই দুই উইকেট নেন তিনি। দ্বিতীয় ওভারে আতাপাত্তুকে আউট করে শ্রীলঙ্কাকে বড় ধাক্কা দেন বাংলার তিতাস। সেখান থেকে অনেক চেষ্টা করেও আর ফিরতে পারেনি শ্রীলঙ্কা। ধাক্কা সামলে জুটি বাঁধেন হাসিনি পেরেরা ও নীলাক্ষি ডি সিলভা। প্রতি ওভারে বড় শট খেলার চেষ্টা করছিলেন তাঁরা। জরুরি রান রেট বাড়তে থাকায় তা ছাড়া কোনও উপায়ও ছিল না। পেরেরাকে বেশি আক্রমণাত্মক দেখাচ্ছিল। এই জুটির হাত ধরে ৫০ পার হয় শ্রীলঙ্কার। বড় শট মারতে গিয়ে ২৫ রান করে আউট হন পেরেরা। ভারতের স্পিনারদের বিরুদ্ধে রান করা কঠিন হচ্ছিল। বল ঘুরছিল। ফলে জরুরি রান রেট বাড়ছিল। তার মধ্যেই নীলাক্ষি কয়েকটি বড় শট খেলেন। বল হাতে দীপ্তির দিন ভাল যায়নি। ভারতের উপর কিছুটা চাপ বাড়ায় তিতাসের হাতে বল তুলে দেন হরমনপ্রীত। দু’বার ক্যাচের সুযোগ থাকলেও কোনও ফিল্ডার না থাকায় উইকেট পাননি তিতাস। নিজের ৪ ওভারে ৬ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন তিনি। শেষ ৪ ওভারে শ্রীলঙ্কার জিততে দরকার ছিল ৪০ রান। পূজা বস্ত্রকর আউট করেন নীলাক্ষিকে। উইকেট পড়তে থাকায় ক্রমাগত পিছিয়ে পড়ছিল শ্রীলঙ্কা। শেষ পর্যন্ত ৯৭ রানে শেষ হয়ে যায় তাদের ইনিংস। ১৯ রানে ম্যাচ জিতে সোনা জেতে ভারত।

শ্যুটিং

এশিয়ান গেমসে প্রথম সোনা আসে শ্যুটারদের হাত ধরে। দিব্যাংশ পানওয়ার, ঐশ্বর্য তোমর, রুদ্রাংশ পাটিল দলগত বিভাগে বিশ্বরেকর্ড করে সোনা জেতেন। ১০ মিটার এয়ার রাইফেল বিভাগে ভারত এই পদক পেয়েছে। মোট ১৮৯৩.৭ পয়েন্ট স্কোর করেন দিব্যাংশ, ঐশ্বর্য এবং রুদ্রাংশের ভারতীয় দল। এটি বিশ্বরেকর্ড। আগের রেকর্ড ছিল চিনের। তারা ১৮৯৩.৩ পয়েন্ট স্কোর করেছিল। ১৮৯০.১ পয়েন্ট স্কোর করে কোরিয়া রুপো পেয়েছে। ব্রোঞ্জ পেয়েছে চিন। তাদের পয়েন্ট ১৮৮৮.২। শ্যুটিংয়ে আরও দু’টি পদক জিতেছে ভারত। ১০ মিটার এয়ার রাইফেল ইভেন্টে পুরুষদের ব্যক্তিগত বিভাগে ব্রোঞ্জ জিতেছেন ঐশ্বর্য তোমর। দলগত প্রতিযোগিতায় সোনা জেতার পরে দিনের দ্বিতীয় পদক জিতেছেন তিনি। ২২৮.৮ পয়েন্ট পেয়ে তৃতীয় স্থানে শেষ করেছেন ঐশ্বর্য। ২৫ মিটার র‌্যাপিড ফায়ার পিস্তল ইভেন্টেও ব্রোঞ্জ জিতেছে ভারত। পুরুষদের দলগত বিভাগে ১৭১৮ পয়েন্ট পেয়ে পদক জিতেছেন বিজয়বীর সিধু, অনিশ ও আদর্শ সিংহ। ২৫ মিটার র‌্যাপিড ফায়ারের ব্যক্তিগত ইভেন্টে ফাইনালে উঠেছেন বিজয়বীর। অর্থাৎ, আরও একটি পদক জেতার সুযোগ রয়েছে ভারতের।

রোয়িং

সোমবার রোয়িংয়ে দু’টি ব্রোঞ্জ পদক পেয়েছে ভারত। ‘মেন্স ফোর’ বিভাগে যশবিন্দর, ভীম, পুনিত এবং আশিস ব্রোঞ্জ পেয়েছেন। তাঁরা ৬:১০:৮১ সময় করেছেন। এই বিভাগে সোনা পেয়েছে উজবেকিস্তান। তাদের সময় ৬:০৪:৯৬। রুপো পেয়েছে চিন। তাদের সময় ৬:১০:০৪। ‘কোয়াড্রপল স্কালস’ বিভাগে ভারতকে ব্রোঞ্জ এনে দিয়েছেন সতনম সিংহ, পারমিন্দর সিংহ, জাকার খান এবং সুখমিত সিংহ।

উশু

অরুণাচল প্রদেশের উশু খেলোয়াড়দের চিনের ভিসা না দেওয়ায় বিতর্ক হয়েছে। সেই উশুতে ভারত পদক নিশ্চিত করলেন রোশিবিনা দেবী। ৬০ কেজি বিভাগের কোয়ার্টার ফাইনালে তিনি কাজাখস্তানের আইমান কারশিগাকে হারিয়েছেন। ছেলেদের বিভাগে সূর্য ভানু প্রতাপ সিংহ কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছেন।

বক্সিং

বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জ জয়ী দীপক ভোরিয়া এবং নিশান্ত দেব প্রি-কোয়ার্টারে উঠেছেন। ৫১ কেজি বিভাগে মালয়েশিয়ার মহম্মদ আব্দুল কাইয়ুম বিন আরিফিনকে ৫-০ পয়েন্টে হারিয়েছেন। নিশান্ত ৭১ কেজি বিভাগে একই ব্যবধানে হারিয়েছেন নেপালের দীপেশ লামাকে। তবে মেয়েদের বিভাগে অরুন্ধতী চৌধরি ৬৬ কেজি বিভাগে হেরে গিয়েছে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন চিনের ইয়াং লিউয়ের কাছে।

সাঁতার

ছেলেদের ৫০ মিটার ব্যাকস্ট্রোকে শ্রীহরি নটরাজ ষষ্ঠ স্থানে শেষ করেছেন। নিজের ব্যক্তিগত সেরা দিলে হয়তো ব্রোঞ্জ পেতে পারতেন। ১০০ মিটার ব্যাকস্ট্রোকের ফাইনালেও ষষ্ঠ স্থানে শেষ করেন নটরাজ। অন্য সাঁতারু লিকিত সেলভারাজ ১০০ মিটার ব্যাকস্ট্রোকে সপ্তম স্থানে শেষ করেছেন।

দাবা

পুরুষ বিভাগে তৃতীয় বাছাই বিদিত গুজরাতি তৃতীয় এবং চতুর্থ রাউন্ডে জিতেছেন। হারিয়েছেন তাইল্যান্ডের প্রিন লাওহাউইরাপাপ এবং ভিয়েতনামের লে তুয়ান মিনকে হারিয়ে তিন পয়েন্টে পৌঁছলেন। এখন তিনি ষষ্ঠ স্থানে। অর্জুন এরিগাইসিও তিন পয়েন্টে রয়েছেন। মেয়েদের বিভাগে কোনেরু হাম্পি এবং দ্রোণাভল্লি হরিকা দু’টি রাউন্ডে অর্ধেক পয়েন্ট পেয়েছেন। দু’জনেরই একটি হার এবং একটি ড্র।

টেনিস

পুরুষদের শীর্ষ বাছাই রোহন বোপান্না এবং ইউকি ভামরি বিদায় নিয়েছেন। ভারতের কাছে এটি অঘটনই। তাঁরা ৬-২, ৩-৬, ৬-১০ হেরেছেন উজ়বেকিস্তানের সের্গেই ফোমিন এবং খুমায়ুন সুলতানভ জুটির কাছে। তবে সিঙ্গলসে অঙ্কিতা রায়না এবং রুতুজা ভোসালে প্রথম রাউন্ডে জিতেছেন।

রাগবি

এশিয়াডে রাগবিতে চারটি ম্যাচেই হার ভারতের মহিলা দল। সব মিলিয়ে অষ্টম স্থানে শেষ করেছে তারা।

হ্যান্ডবল

প্রথম ম্যাচে জাপানের কাছে ১৩-৪১ পয়েন্টে হেরেছে ভারত। চারটি গোল করেছেন মেণিকা।

জুডো

এশিয়াড থেকে ছিটকে গেলেন গরিম চৌধরি। দু’মিনিট দু’সেকেন্ডে তিনি ১-১০ পয়েন্টে হেরেছেন ফিলিপিন্সের ইপ্পন রিয়োকো সালিনাসের কাছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement