কোন পথে কোভিড ঢুকল ভারতীয় শিবিরে? —ফাইল চিত্র
টস হওয়ার দু’ ঘণ্টা আগে ম্যাঞ্চেস্টারে ভারত-ইংল্যান্ড টেস্ট স্থগিত হয়ে যাওয়ার পিছনে দায়ী কে? কোটি টাকার এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে সবার আগে যে কারণটি উঠে আসছে, সেটি হল ইংল্যান্ডে প্রায় রাতারাতি শিথিল করে দেওয়া কোভিডবিধি।
বিরাট কোহলীরা যখন জুলাই মাসে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল খেলতে প্রথম ইংল্যান্ডে পৌঁছেছিলেন, সেই সময়ের থেকে সে দেশের এখনকার কোভিডবিধিতে আকাশ-পাতাল তফাৎ। প্রথমে সাদামটনে কড়া নিভৃতবাসে থাকতে হয়েছিল ভারতীয় দলকে। কড়া বায়ো বাবলে থেকে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে সেই টেস্ট ম্যাচ খেলতে হয়েছিল কোহলীদের।
পরিস্থিতি বদলে যায় অগস্টের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে। লর্ডস টেস্টে জেতার পর ভারতীয় দল যখন লন্ডন থেকে লিডসে পৌঁছয়, ঠিক সেই সময় বরিস জনসনের সরকার গোটা ইংল্যান্ড থেকে যাবতীয় কোভিডবিধি শিথিল করে দেয়। এমনকী মাস্ক পরা, বা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নিয়মও উঠে যায় বিলেত থেকে। সাদামটনের বায়ো বাবল তখন আর কোহলীদের জন্য ছিল না। গোটা ইংল্যান্ডই তখন বায়ো বাবল!
লিডসে শহরের মধ্যিখানে যে হোটেলে ভারতীয় দলকে রাখা হয়েছিল, সেখানে নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখানোই দস্তুর ছিল। হোটেলের লবি থেকে রেস্তরাঁ, ক্যাফে, সর্বত্র বাইরের লোকের অবাধ যাতায়াত ছিল। হোটেলে অন্য অতিথিদের থাকার ক্ষেত্রেও কোনও বিধিনিষেধ ছিল না। ক্রিকেটারদের আর পাঁচজনের সঙ্গে একই লিফটে উপর-নীচ করতে হয়েছে।
এমনকী মাঠেও কোভিডের কোনও বিধিনিষেধ ছিল না। সাজঘর, ক্রিকেটারদের যাতায়াতের প্যাসেজ, সর্বত্র বহু অবাঞ্ছিত মানুষকে দেখা গিয়েছে। বারবার জার্ভোর মাঠে ঢুকে পড়ার ঘটনায় ইংল্যান্ডের মাঠের নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখে সবাই তাজ্জব বনে গিয়েছেন।
এই পরিস্থিতিতে বিরাট কোহলীরা চতুর্থ টেস্ট খেলতে লিডস থেকে ফের লন্ডনে আসেন। তখনও তাঁদের যে হোটেলে রাখা হয়, সেখানকার পরিবেশও একই রকম ছিল। উপরন্তু জানা যাচ্ছে, ওই সময় হোটেলের একটি অংশের উদ্বোধন ছিল। সেই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অনেক হোমরা চোমরারা ছিলেন, যাঁরা কোভিডবিধিকে উপহাসের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন।
এই হোটেলেই ছিল রবি শাস্ত্রীর বই প্রকাশ অনুষ্ঠান। এখন অনেকেই সেই অনুষ্ঠানকে এবং ভারতীয় দলের কোচকে বলির পাঁঠা করছেন। কারণ ওই অনুষ্ঠানের পরেই শাস্ত্রী, বোলিং কোচ ভরত অরুণ, ফিল্ডিং কোচ আর শ্রীধর, ফিজিয়ো নিতিন পটেল করোনা আক্রান্ত হন। ওই অনুষ্ঠানে বহিরাগতরাও ছিলেন। বলা হচ্ছে, কোভিড পরিস্থিতির মধ্যে কেন এরকম জমকালো অনুষ্ঠান করতে গেলেন শাস্ত্রী?
আঙুল উঠছে কোহলীর দিকেও। গোটা ভারতীয় দল ওই অনুষ্ঠানে ছিল। কিন্তু ঘটনা হল, তারপর কোহলীদের প্রত্যেকের কোভিড পরীক্ষা হয়েছে। প্রত্যেকের রিপোর্টই নেগেটিভ এসেছে। এমনকী সেখানে এমন হাই প্রোফাইল ব্যক্তিত্বরা ছিলেন, যাঁদের কোভিড হলে ব্রিটিশ ট্যাবলয়েডে এত দিনে ফলাও করে তা ছাপা হয়ে যেত। ফলে ওই অনুষ্ঠান থেকে যদি করোনা ছড়িয়েই থাকে, তাহলে সেটা শুধু বেছে বেছে ভারতীয় দলের সাপোর্ট স্টাফদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে, এই তত্ত্বটা কিছুটা হলেও মানা কঠিন।
ভারতীয় শিবিরে করোনা থাবা বসানোর জন্য যদি কোনও কিছু দায়ী থেকে থাকে, সেটা কোভিড নিয়ে ব্রিটিশ সরকারের হঠকারিতা, ভ্রান্ত নীতি।