—প্রতীকী চিত্র।
হিন্দু নারীদের জন্য যে সব নিয়ম ও অনুশাসন লেখা হয়েছিল সমাজের পুরুষ কর্তাদের হাতে, তা-ই কালে কালে প্রথায় পরিণত। পরে যখন ব্রিটিশ শাসকদের হাতে ভারতীয় আইন নির্দিষ্ট রূপ পেল, সেখানেও রয়ে গেছে ধর্মীয় ও সামাজিক প্রথার প্রভাব। থেকে গেছে নানা অসঙ্গতি, আজও যা মেয়েদের স্বাভাবিক যাপন ও সাংবিধানিক অধিকারের ক্ষেত্রে অন্তরায়। এই ফাঁকগুলিই বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা করেছেন লেখিকা। দেখা গিয়েছে, কোনও কোনও ক্ষেত্রে আইন নারীর অনুকূলে থাকলেও তাকে পাশ কাটিয়ে প্রয়োগ হয়ে চলেছে সামাজিক কর্তৃত্ব, নিয়মের হুমকি। হিন্দু নারীদের বিবাহে পালিত নানা সামাজিক লোকাচারে কী ভাবে নারীর আত্মসম্মানকে বারংবার আঘাত করা হয়, উদাহরণ-সহ তুলে ধরা হয়েছে তা। মাঙ্গলিক নারীর সঙ্গে অমাঙ্গলিক পুরুষের বিয়ের ক্ষেত্রে আগে শাস্ত্রের বিধান মেনে বট, অশ্বত্থ, কলাগাছ অথবা বিষ্ণুমূর্তির সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হত পাত্রীর মাঙ্গলিক দোষ খণ্ডনের জন্য, একুশ শতকেও তার নজির রয়েছে। শিক্ষার আলোও যুক্তিবোধ তৈরিতে অনেক সময়ই ব্যর্থ। কন্যাদানের প্রথায় মেয়েকে পাত্রের পরিবারের হাতে ‘দান’ করার রীতি, বা বিয়ের সময়ে পাত্রের মাকে ‘তোমার জন্য দাসী আনতে যাচ্ছি’ বলে যাওয়ার নেপথ্যে যে নিহিত পুরুষতান্ত্রিকতা, আলোচিত হয়েছে তা-ও। এসেছে বাঙালি হিন্দু মেয়ের সম্পত্তির অধিকারের ক্ষেত্রে সমাজপ্রথা-প্রভাবিত আইনের প্রসঙ্গও।
প্রথা আইন এবং বাঙালি হিন্দুনারী
দেবাংকৃতা সরদার
২৫০.০০
অক্ষর
‘ট্রান্সলেশন স্টাডিজ়’-এর মুখ্য উদ্দেশ্য: অনুবাদ বিষয়টির গুণাগুণ বিচার, মূল পাঠের প্রতিসরণ হিসাবে অনুবাদ কী ভাবে নতুন সৃষ্টি হয়ে ওঠে তার মূল্যায়ন এবং মূল থেকে উদ্দিষ্ট পাঠে পৌঁছনোর পথে অনুবাদকের ভূমিকার সন্ধান। কিন্তু এর সঙ্গে লগ্ন তাত্ত্বিক ভাবনাগুলি কোন খাতে বয়েছে, সাহিত্য অনুবাদের ক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলি বৌদ্ধিক পরিসর তৈরি করে, অনুবাদের শৈলীই বা কী, এমন নানা প্রশ্ন সামনে রেখেছে বইটি। একই ভাবে বিশ্বসাহিত্য, ভারতীয় ও বাংলা সাহিত্যের মধ্যে সেতুবন্ধনের কাজ করা উনিশ ও বিশ শতকের বিভিন্ন পাঠে কী ধরনের পদ্ধতিগত ও সংরূপগত মোচড় রয়েছে, তারও সনিষ্ঠ অনুসন্ধান। মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের সময় থেকে অনুবাদধারা নিত্য বহতা, সারস্বতজনের হাতে পুষ্ট।
সাহিত্যের অনুবাদ: বিকীর্ণ ভাবনা
ঋতম্ মুখোপাধ্যায়
৩০০.০০তু
হিনা প্রকাশনী
অনুবাদের অধ্যয়নের ছত্রছায়ায় তাত্ত্বিক দিকগুলির চর্চা বাংলা ভাষায় তাই খুব জরুরিও। এই ‘দেখতে চাওয়া’ থেকেই লেখকের উদ্দিষ্ট হয়েছে বাঙালির ম্যাক্সিম গোর্কি, ডব্লিউ বি ইয়েটস বা এমিলি ডিকিনসন-চর্চা; ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, ভগিনী নিবেদিতা বা সমর সেনের সৃষ্টি। অনুবাদের ক্ষেত্রটি কবিতা হলে ভাষা ও সংস্কৃতির ব্যবধান কত প্রবল হয়ে ওঠে, তা অতিক্রমের চেষ্টাই বা কেমন, সেও চর্চার বিষয়। এই সূত্রে এসেছে সদ্যপ্রয়াত উইলিয়াম রাদিচের রবীন্দ্র-অনুবাদ, বা ক্লিন্টন বি সিলির জীবনানন্দ-কবিতার অনুবাদ-অনুষঙ্গ। মূল পাঠের ভাব ও রূপ অক্ষুণ্ণ রেখেও এক নব রূপায়িত পাঠ তৈরি হয়ে ওঠে অনুবাদে, এই পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্লেষিত হয়েছে গিরিশ কারনাড রচিত হয়বদন-এর অনুবাদ, শঙ্খ ঘোষের করা।
বাবর: নির্বাসন থেকে সিংহাসনেকুন্তক চট্টোপাধ্যায়
২৫০.০০
একতারা প্রকাশনী
পানিপতের যুদ্ধ শেষে মোগল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা বাবর যখন দিল্লি পৌঁছলেন, তখনই তিনি তাঁর কাজকর্মের মধ্য দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন পূর্বসূরি চেঙ্গিস খান বা তৈমুর লং-এর মতো নিছক হামলা তাঁর উদ্দেশ্য নয়। বরং তিনি চেয়েছিলেন হিন্দুস্থানকে শাসন করতে। তখ্তে বসার পর মসজিদে বিরাট নমাজের আয়োজন করেন তিনি। তাঁর নামের খুৎবা পাঠ হয়। পর দিন তিনি খাজা কুতুবুদ্দিনের মাজারে যান। সুলতান গিয়াসুদ্দিন বলবন, আলাউদ্দিন খিলজির সমাধি দর্শন করেন ও দরিদ্র প্রজাদের মধ্যে অর্থ বিলি করেন। এই সবই তাঁর হাত ধরে এক দীর্ঘস্থায়ী শাসনব্যবস্থার গোড়াপত্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছিল। এত কিছু সত্ত্বেও দেখা যায়, অন্য মোগল সম্রাটদের মতো আলোচনার বৃত্তে উঠে আসেননি বাবর। বিশ শতকের গোড়ায় যখন ভারতে মোগল ইতিহাসের চর্চা শুরু হয়, তখনও তা মূলত আবর্তিত ছিল আকবর ও তাঁর উত্তরসূরিদের ঘিরে। বাবর পরিচিতি পেয়েছেন তার অনেক পরে। তাঁকে নিয়েই এই আলোচ্য গ্রন্থটি। শুধুমাত্র ব্যক্তি বাবরই নয়, বরং তাঁর জীবনের নানা ঘটনার সূত্রে মোগল সাম্রাজ্যের আদি পর্বই হয়ে উঠেছে গ্রন্থটির মূল উপজীব্য। ভারতের বর্তমান হিন্দুত্ববাদী শাসনের ইতিহাস পরিবর্তনের প্রবল তাড়নার বিপরীতে দাঁড়িয়ে যাঁরা এখনও ভারত ইতিহাসের অতি গুরুত্বপূর্ণ মোগল সাম্রাজ্য বিষয়ে জানতে চান, বইটি তাঁদের সহায়ক হয়ে উঠতে পারে।