জুটিতে লুটি। অশ্বিন ও বিরাটের এই জুটি ম্যাচ ঘুরিয়ে দেয়। ছবি - টুইটার
শুধু ক্রিকেট নয়, ক্রিকেটের বাইরে একাধিক বিষয়ে ওঁর পান্ডিত্য রয়েছে। তাই তো বীরেন্দ্র সহবাগ ওঁকে মজা করে ‘প্রফেসর’ বলে ডাকতেন। সেই ‘প্রফেসর’ ঘরের মাঠে অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে ‘ম্যাচের সেরা’ হয়েছেন। জো রুটের ইংল্যান্ডকে ৩১৭ রানে হারিয়ে সিরিজে সমতা ফেরানোর পর এহেন রবিচন্দ্রন অশ্বিনের সাক্ষাৎকার নিলেন ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহালি। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডে তাদের ওয়েব সাইটে সেই সাক্ষাৎকার তুলে ধরেছে।
বিরাট কোহালি: আমি এখন ‘ম্যাচের সেরা’ অশ্বিনের সঙ্গে রয়েছি। দ্বিতীয় ইনিংসে খুব কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও প্রথম টেস্ট শতরান। সঙ্গে দুই ইনিংস মিলিয়ে ৮ উইকেট। অ্যাশ তুমি টেস্টে বরাবর চ্যাম্পিয়ন পারফরম্যান্স করেছ। তবে এবার ঘরের মাঠে, পরিবারের সামনে এমন সাফল্য পাওয়ার পর তোমার অনুভুতি কেমন?
রবিচন্দ্রন অশ্বিন: সত্যি কথা বলতে কেরিয়ারে এই প্রথম বার আমি যেন শূন্যে ভাসছি। মাথা কাজ করছে না! তোমাকেও যেমন ব্যাট করার সময় বারবার জিজ্ঞেস করছিলাম, ‘আমি কি সুইপ মারতে পারি?’ এখনও অদ্ভুত অনুভুতি হচ্ছে। কিছু ভাবতেই পারছি না। ওই মুহূর্তগুলো চোখের সামনে ভেসে উঠলেই আবেগপ্রবণ হয়ে পরছি। তুমি তো আমাকে খুব ভালভাবে জানো। আমি কিন্তু খুবই বাস্তববাদী। তবে এবার কিছুতেই নিজেকে সামলাতে পারছি না। আমরা ০-১-এ পিছিয়ে থাকার পরেও এমন দাপুটে জয় ছিনিয়ে নিতে পেরেছি। সেই জয়ে আবার আমার ব্যাটে-বলে অবদান রয়েছে। এখনও ভাবলে মনে হচ্ছে আমি যেন আকাশে ভাসছি। আমাদের জুটির জন্যই ওরা ম্যাচ থেকে হারিয়ে গেল। হ্যাঁ, আমি নিজের মত চালিয়ে ব্যাট করেছি। তাই খুব ভাল লাগছে। অসাধারণ জয়।
বোলার অশ্বিনকে নিয়ে উল্লসিত গোটা দল। ছবি - টুইটার।
বিরাট কোহালি: এর আগে কোনও বিদেশ সফরে তোমাকে এত আক্রমণাত্মক মেজাজে দেখিনি। তবে এই অস্ট্রেলিয়া সফরে আমরা যেন অন্য অশ্বিনকে দেখলাম। তোমার সেই আগ্রাসী মনভাবের প্রভাব কিন্তু দলের জন্য ভাল হয়েছে। তাছাড়া দেশে-বিদেশে তোমার খেলাতেও অনেক উন্নতি হয়েছে।
রবিচন্দ্রন অশ্বিন: করোনা পরিস্থিতি ও লকডাউনে থাকার সময় যেন পাগলের মত হয়ে গিয়েছিলাম। ক্রিকেট আমার প্রথম ভালবাসা। কেউ যদি ক্রিকেটকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নেয়, তাহলে আমি বাঁচতে পারব না। শুধু তাই নয়, আমি একদিনের ও টি-টোয়েন্টি ম্যাচ না খেললেও দেশের জন্য টেলিভিশন খুলে বসে থাকি। সেই ম্যাচগুলোর আগে আমাদের দল নিয়ে কে কি লিখছে কিংবা মন্তব্য করছে সেই খবর রাখি। এমন অবস্থায় যখন দেশ পুরো লকডাউন হয়ে গিয়েছিল, তখন শুধু ভাবতাম কীভাবে দিন কাটাব! শুধু তাই নয়, আমি নেট মাধ্যমের সঙ্গে সারাক্ষণ কাটাতাম। জানার চেষ্টা করতাম বাইরের লোকজন আমাকে নিয়ে কী ভাবনাচিন্তা করে এবং আমি কি তাঁদের কোনও সাহায্যে আসতে পারি। একই সঙ্গে নিজের একটা ভুল শোধরানোর চেষ্টা করলাম। আগে বিদেশে গেলে নিজের খেলা নিয়ে বড্ড বেশি ভাবতাম। অন্যদের ভুল প্রমাণ করার চেষ্টা করতাম। তাই ঠিকমত মেলে ধরতে পারতাম না নিজেকে। তবে গত অস্ট্রেলিয়া সফরে গিয়ে শুধু ভেবেছি নিজের যতটুকু ক্ষমতা আছে সেটা দিয়েই খেলার চেষ্টা করব। আমি যে যোগ্য, সেটা নিজের কাছে প্রমাণ করব। বাইরের লোকজন আমাকে নিয়ে কী ভাবলেন, সেটা নিয়ে বিন্দুমাত্র চিন্তা করব না। আর নিজের মধ্যে এই মানসিকতা আনার পরেই খেলায় অনেক উন্নতি হয়েছে। তাছাড়া তোমার, রাহানে ও পূজারার থেকেও শিখেছি। তোমরা হারতে জানো না। তুমি প্রথম ইংল্যান্ড সফরে গিয়ে ব্যর্থ হলেও পরের বার কিন্তু নিজেকে দারুণ মেলে ধরেছিলে। এই ব্যাপারগুলো আমার অনেক উন্নতি ঘটিয়েছে।
বিরাট কোহালি: দ্বিতীয় ইনিংসে একটা সময় কিন্তু ম্যাচ ৫০-৫০ ছিল। তবে তুমি মাঠে নেমে পাল্টা ব্যাট চালাতেই খেলা ঘুরে গেল। আমাদের সেই জুটি নিয়ে কিছু বল?
রবিচন্দ্রন অশ্বিন: আমাদের এই জুটির ভিত কিন্তু অস্ট্রেলিয়া সফরে ব্ল্যাক টাউনে গড়ে ওঠে। ওখানে গিয়ে আমি শর্ট বল মারার অনুশীলন করছিলাম। সেটা নিয়ে তোমার সঙ্গে অনেক চর্চাও হয়েছে। অ্যাডিলেড টেস্টে হারলেও তোমার পরামর্শ মাথায় ছিল। এখানেও তুমি আমাকে সুইপ ও স্লগ সুইপ মারতে উদ্বুদ্ধ করলে। আসলে সঠিক সময় সঙ্গীর কাছ থেকে ইতিবাচক বার্তা এলে যেকোনও কাজ ভাল হয়। এবারও সেটাই হল।
বিরাট কোহালি: অ্যাশ তুমি সত্যি চ্যাম্পিয়ন। এই ভাবেই দেশের জন্য খেলে যাও। আমরা সবে সিরিজে সমতা ফিরিয়েছি। এখনও দুটো টেস্ট বাকি। আশা করি বাকি সিরিজেও ভাল ফল করতে পারব।