কোহলীর সঙ্গে বিবাদ অ্যান্ডারসনের। ছবি রয়টার্স
সুইংয়ের সম্রাট, গতির রাজা, নেতা, পরামর্শদাতা, বিনোদনকারী— নিজের দীর্ঘ ক্রিকেটজীবনে একাধিক আখ্যা পেয়েছেন জেমস অ্যান্ডারসন। কিন্তু ক্রিকেটারের বাইরে অন্য কোনও বিষয়ে যদি সব থেকে বেশি তিনি বিখ্যাত হয়ে থাকেন তাহলে তা নিঃসন্দেহে তাঁর ঝগড়ুটে মানসিকতার জন্য। এই সিরিজে অ্যান্ডারসনের ঝগড়া রীতিমতো আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। কখনও তিনি বিরাট কোহলীর সঙ্গে ঝগড়া করছেন, কখনও যশপ্রীত বুমরার সঙ্গে। এর আগেও বার বার বিভিন্ন ক্রিকেটারের সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়েছেন। বেশিরভাগই অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটারদের সঙ্গে অ্যাশেজ চলার সময়।
বল হাতে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠলেও ভারতীয় দলে বুমরা পরিচিত শান্তশিষ্ট ছেলে হিসেবেই। তাঁর উদ্দেশে অ্যান্ডারসনের বাক্যবর্ষণে অবাক হয়েছেন অনেকেই। ঝামেলার মূলে বুমরা ১০ বলের একটি ওভার। প্রথম বল সপাটে গিয়ে লেগেছিল হেলমেটে। দ্বিতীয় বল বুকে। তৃতীয় বলে কোনওমতে ব্যাট ছোঁয়ান অ্যান্ডারসন। তারপর একটি ইয়র্কার করেই ফের বুমরা শর্ট বল করতে থাকেন। সেই ওভারে ক্রিজের বাইরে পা পড়ার জন্য তাঁর চারটি বল নো হয়। ক্রমাগত শর্ট বল হওয়ায় রেগে যান অ্যান্ডারসন। ইনিংস শেষ হওয়ার পর বুমরা তাঁর পিঠ চাপড়াতে গেলেও তিনি তা ভাল ভাবে গ্রহণ করেননি। তারপরের ঘটনা জানা গিয়েছে রবিচন্দ্রন অশ্বিনের থেকে। অশ্বিনের কথায়, বুমরার জোরে বল করা মেনে নিতে পারেননি অ্যান্ডারসন।
অনেকেরই মনে পড়ছে ২০১৩-১৪ সালের অ্যাশেজ। সে বার ইংল্যান্ডের লোয়ার অর্ডারের উদ্দেশে মিচেল জনসন একের পর এক বাউন্সার দিয়েছিলেন। তার শিকার হয়েছিলেন অ্যান্ডারসন নিজেও। আম্পায়ারের কাছে অভিযোগ জানিয়েও লাভ হয়নি। বুমরা শান্তশিষ্ট হলেও চরিত্রগত ভাবে ঠিক তাঁর উল্টো ছিলেন জনসন। অ্যান্ডারসনকে পাল্টা জবাব দিয়েছিলেন তিনিও। ওই সিরিজেই মাইকেল ক্লার্ক সরাসরি অ্যান্ডারসনকে বলেছিলেন, “তোমার হাত ভেঙে গুঁড়িয়ে দেব। তৈরি থাকো।” ক্লার্কের ২০ শতাংশ ম্যাচ ফি কাটা যায়। তবে সেই ম্যাচে ধারাভাষ্যকার হিসেবে থাকা শেন ওয়ার্ন দাবি করেছিলেন, অস্ট্রেলিয়ার অভিষেককারী ক্রিকেটার জর্জ বেইলির মুখে ঘুষি মারার হুমকি দিয়েছিলেন অ্যান্ডারসন। সে বছরই রবীন্দ্র জাডেজার সঙ্গে অ্যান্ডারসনের লড়াই সিরিজের অন্যতম আলোচ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
কোহলীর নেতৃত্বাধীন এই ভারতের আগ্রাসন দেখে অনেকেই আগেকার অস্ট্রেলিয়া দলের সঙ্গে তুলনা টানছেন। স্টিভ ওয়ের আমলে অস্ট্রেলিয়ার আক্রমণের লক্ষ্যই ছিল বিপক্ষ দলের অধিনায়ক। তারা জানত এক বার অধিনায়ককে রাগিয়ে দিলে গোটা দল আত্মসমর্পণ করবে। কোহলী সেটাকেই একটু বদলে নিয়েছেন নিজের মতো করে। তিনি আক্রমণ করেন তাঁকেই, যিনি ভাল খেলছেন। এ ক্ষেত্রে সেটি ছিলেন অ্যান্ডারসন। নিজের ব্যাটিং করতে যাওয়ার সময় কোহলী পরোক্ষ ভাবে অ্যান্ডারসনকে বুড়ো বলেছিলেন।
রুটের পাল্টা দেওয়ার মানসিকতা ডুবিয়ে দিল ইংল্যান্ডকে। বুমরা এবং মহম্মদ শামি ব্যাট করার সময় অ্যান্ডারসনকে লেলিয়ে দিয়েছিলেন রুট। কিন্তু দুই ভারতীয় ভয় পাওয়া তো দূর, ইংরেজ বোলারদের ঘাড়ে চেপে বসেন। ম্যাচের ফল তো সবাই জানা।