নিন্দুকদের জবাব দিয়ে চ্যাম্পিয়নের মত ফিরে এসেছেন অশ্বিন। ছবি - টুইটার
দলের হেড কোচ রবি শাস্ত্রী ওঁকে শুধু অ্যাশ নামে ডাকেন না। ড্রেসিংরুমে ওঁকে আরও দুটো নামে ডাকা হয়ে থাকে। ‘অ্যাস্ট্রোনট’ ও ‘সায়েন্টিস্ট’। এই দুটো নামও শাস্ত্রীরই দেওয়া। কয়েক বছর ধরে বিরাট কোহালির সীমিত ওভারের দলে তিনি ব্রাত্য। এমনকি বিদেশের মাঠেও তাঁর ভূমিকা নিয়ে উঠে যেত প্রশ্ন। তবে এহেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন কিন্তু তিন মাসে অনেকটা বদলে গিয়েছেন। তাঁর কাছে যেন সময়টা স্বপ্নের মত গিয়েছে।
তবে লকডাউনও তাঁকে ক্রিকেট শিক্ষার্থী হিসেবে আরও উন্নত করেছিল। সেটাও মনে করেন তিনি। প্রতিপক্ষ দলের ব্যাটসম্যানদের জব্দ করার জন্য তিনি ঘণ্টার পর ঘণ্টা ল্যাপটপের সামনে বসে থাকেন। যদিও টেস্টে দ্রুততম ৪০১ উইকেট নেওয়ার পরেও অশ্বিনের দাবি তিনি নাকি ‘দুর্ঘটনাক্রমে’ ক্রিকেটার হয়েছেন। বিসিসিআইয়ের ওয়েব সাইটে দলের ফিল্ডিং কোচ আর শ্রীধররের সঙ্গে মনের কথা খুলে বললেন অশ্বিন।
আর শ্রীধর: অ্যাশ তোমার সময়টা দারুণ যাচ্ছে। টেস্টে ৪০০ উইকেট থেকে শুরু করে ‘টেস্ট ক্রিকেটার অদ দ্যা ইয়ার’ পুরস্কার জিতলে। তোমার প্রথম অনুভূতি কেমন?
রবিচন্দ্রন অশ্বিন: আমার ঝুলিতে ৪০০ টেস্ট উইকেট! এটা ভাবলেই মাথা পুরো শূন্য হয়ে যায়। তাছাড়া আমরা প্রথম ইনিংসে মাত্র ১৪৫ রানে গুটিয়ে যাই। হাতে মাত্র ৩০ রানের লিড থাকার জন্যও বেশ চাপে ছিলাম। তবে ৪০০ উইকেট দখল করার পর স্টেডিয়ামের বড় পর্দায় যখন আমার মুখ ভেসে উঠল, যখন সতীর্থরা আমাকে জড়িয়ে ধরল, তখন মনে দারুণ আনন্দ ভরে ওঠে। আসলে গত তিন মাস আমার কাছে স্বপ্নের মত কেটেছে।
শ্রীধর: টেস্ট ক্রিকেটে এত সাফল্য পাওয়ার পরেও তুমি সাধারণ মানুষের মত থাকো। এটা কীভাবে সম্ভব?
অশ্বিন: সত্যি বলতে আমি ছোটবেলা থেকেই নিখাদ ক্রিকেট অনুরাগী। স্বপ্নেও ভাবিনি যে দেশের হয়ে খেলতে পারব। আমি তো ‘দুর্ঘটনাক্রমে’ ক্রিকেটার হয়েছি! এখনও দলের বাইরে থাকলে দিন-রাত ক্রিকেট নিয়েই চিন্তা-ভাবনা করি। ক্রিকেটই আমার ধ্যান-জ্ঞান। আমি ছেলেবেলার সেই স্বপ্ন নিয়ে এখনও বাঁচি। তাই দেশের জার্সি গায়ে চাপিয়ে মাঠে নামলে এখনও সবকিছু অবিশ্বাস্য বলে মনে হয়। দেশের হয়ে খেলতে নেমে দলকে জেতাতে পারলে নিজেকে ধন্য বলে মনে হয়। আসলে কোভিডের সময়টা আমাকে ক্রিকেটের আরও কাছে নিয়ে এসেছিল। যদিও আইপিএল শেষ হওয়ার পর অস্ট্রেলিয়া গিয়ে টেস্ট খেলব স্বপ্নেও ভাবিনি। তবে রবীন্দ্র জাডেজা চোট পাওয়ার পর সুযোগ আসে। আসলে আমি ক্রিকেটকে খুব ভালবাসি। তাই এই মহান খেলা আমাকে কিছু ফিরিয়ে দিচ্ছে।
শ্রীধর: যেকোনও ম্যাচের আগে তুমি খুবই ‘হোম ওয়ার্ক’ করো। ড্রেসিংরুমে বিপক্ষ দল নিয়ে আলোচনা হলে তোমার কাছে প্রতিপক্ষের সব ব্যাটসম্যানদের শক্তি ও দুর্বলতা ডায়েরিতে লেখা থাকে। মাঠের বাইরে তুমি ক্রিকেটকে কত সময় দাও?
অশ্বিন: এই বিষয়ে মুখ খুলতে হলে আমার অনেক গোপন তথ্য সামনে চলে আসবে! অ্যাডিলেডে প্রথম টেস্ট শুরু হওয়ার আগে লাগাতার ৮ ঘণ্টা ল্যাপটপের সামনে বসে অজিদের ব্যাটিং দেখছিলাম। ওদের ভুলভ্রান্তি বোঝার চেষ্টা করছিলাম। তবে এটা প্রথমবার নয়। এর আগেও আমি কান্ড ঘটিয়েছি। তবে ক্রিকেটকে আরও বোঝার ব্যাপারটা কিন্তু লকডাউনে বেড়ে যায়। ইন্সটাগ্রাম ও ইউ টিউবে একাধিক অনুষ্ঠান আয়োজন করার পাশাপাশি প্রচুর পুরানো দিনের খেলা দেখতাম। সেখানে ১৯৯৯ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে চিপকে সচিনের শতরানের ইনিংস থেকে শুরু করে ভিভিএস লক্ষণের ২৮১ সবকিছু ছিল। আর অতীতের সেই খেলা দেখা পর থেকে আগ্রহ আরও বেড়ে যায়। এরপর থেকে বিপক্ষ দলের ব্যাটসম্যানদের অনুশীলনের ভিডিয়ো দেখতে শুরু করি। ফলে এই মুহূর্তে আমার আত্মবিশ্বাস একেবারে তুঙ্গে। কোন ব্যাটসম্যান কীভাবে আমার বিরুদ্ধে শট খেলবে এবং তাদের কোন জায়গায় বল করতে হবে সবকিছু আমার নখদর্পণে।
শ্রীধর: ম্যাচের শেষে স্টাম্প সংগ্রহ করার নেশাও ইদানীং বেড়ে গিয়েছে। তুমি তো এবার মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকেও ছাড়িয়ে যাবে!
অশ্বিন: তুমি ভুল বলছো। মাহি ভাইয়ের কাছে আমার চেয়ে অনেক বেশি স্টাম্প রাখা আছে। কেরিয়ারের শুরুর দিকে এগুলো নিয়ে এত ভাবতাম না। কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে এই ব্যাপারেও যত্নবান হয়েছি। আসলে ঘরে ফিরে এগুলোতে চোখ গেলে মুহূর্তগুলো আবার ভেসে উঠবে। সুখের স্মৃতি তো, তাই খুব যত্ন করে গুছিয়ে রাখছি। ব্রিসবেন টেস্টের স্টাম্প নিজের কাছে না রাখলেও সিডনি ও শেষ দুই টেস্টের স্টাম্প নিজের কাছে রেখে দিয়েছি। তবে সবমিলিয়ে কত স্টাম্প আমার কাছে আছে এখনই বলা সম্ভব নয়।
শ্রীধর: সবার তরফ থেকে তোমাকে অনেক অনেক অভিনন্দন।
অশ্বিন: আমিও শেষ টেস্ট জেতার জন্য মুখিয়ে আছি।