ফাইল চিত্র।
নয় বছর হয়ে গেল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন। কিন্তু ভারতীয় ক্রিকেটে রাহুল দ্রাবিড়ের তাৎপর্য এক বিন্দুও কমেনি। উল্টে সেটা যে বাড়ন্ত, প্রমাণ হয়ে গেল অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে।
২০১৬ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত ভারত ‘এ’ এবং অনূর্ধ্ব ১৯ দল যখন যেখানে খেলতে গিয়েছে, সবার সবথেকে বেশি উৎসাহ, আগ্রহ চোখে পড়েছে এই দুই দলের কোচের জন্য। আর যাঁদের নিয়ে রাহুল দ্রাবিড়ের সংসার ছিল, সেই শুভমন গিল, ওয়াশিংটন সুন্দর, মহম্মদ সিরাজ, হনুমা বিহারী, মায়াঙ্ক আগারওয়ালরাও প্রতি মুহূর্তে উৎসাহিত হয়েছেন, অনুপ্রাণিত হয়েছেন, শিখেছেন। দ্রাবিড়ের প্রশিক্ষণে ভারত ছোটদের বিশ্বকাপে দু’বার ফাইনালে উঠেছে। এর মধ্যে ২০১৬ সালে রানার্স এবং ২০১৮ সালে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ দল।
কিন্তু বিশ্বকাপ ট্রফিটা নয়, ভারতীয় ক্রিকেটে ক্রিকেটার পরবর্তী দ্রাবিড়ের সবথেকে বড় অবদান শুভমন, সুন্দররা। দ্রাবিড়ের হাতে পড়েই এঁরা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শুরুটা করতে পেরেছেন একেবারে তৈরি হয়ে। দ্রাবিড়ের কোচিংয়েই নিয়ম করে ভারত ‘এ’ দলকে ক্রিকেটার যোগান দিয়ে গিয়েছে অনূর্ধ্ব-১৯ দল। আর ভারতের সিনিয়র দলকে সিরাজ, বিহারীদের যোগান দিয়ে গিয়েছে ভারত ‘এ’ দল। রাহুল দ্রাবিড় ইউনিভার্সিটি থেকে যাঁরা স্নাতক হয়ে ভারতের সিনিয়র দলে ঢুকেছেন, তাঁদের গাব্বায় স্টার্ক, কামিন্সদের গতির সামনেও এখন আর বেমানান লাগে না।
শুধু উঠতি ক্রিকেটাররাই নন, দ্রাবিড়ের পাঠশালায় উপকৃত হয়েছেন দল থেকে বাদ পড়া ক্রিকেটাররাও। যেমন লোকেশ রাহুল। ২০১৮-১৯ মরসুমটা খুব খারাপ গিয়েছিল রাহুলের। তার ওপর টেলিভিশন চ্যানেলে অশালীন মন্তব্য করে হার্দিক পাণ্ড্যর সঙ্গে তাঁকেও নির্বাসিত হতে হয়েছিল। রাহুলের শাস্তি উঠে যাওয়ার পর তাঁকে ভারত ‘এ’ দলে নেন দ্রাবিড়। সফররত ইংল্যান্ড লায়ন্সের বিরুদ্ধে রাহুল ভাল খেলেন। সেটাই তাঁকে ভারতের বিশ্বকাপ দলে সুযোগ করে দেয়। আর বিশ্বকাপে ৯টি ম্যাচে ৩৬১ রান করেন তিনি। মোট রানে ভারতীয়দের মধ্যে রোহিত শর্মা আর বিরাট কোহালির ঠিক পরেই জায়গা করে নেন। বিশ্বকাপের পর সিনিয়র রাহুল সম্পর্কে জুনিয়র রাহুল বলেন, ‘‘রাহুল দ্রাবিড়ের সঙ্গে ‘এ’ দলে থেকে অনেক কিছু শিখেছি। আজ যেখানে দাঁড়িয়ে, দ্রাবিড় না থাকলে সেখানে পৌঁছতে পারতাম না।’’
এখন এই দুই দলের দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে দ্রাবিড় বেঙ্গালুরুতে ন্যাশনাল ক্রিকেট অ্যাকাডেমির ডিরেক্টর। তবু তাঁকে স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে, যখন মনে করবেন, ‘এ’ দল এবং ছোটদের নিয়ে আবার কাজ করতে পারবেন। এখন যিনি ভারত ‘এ’ দলের কোচ, সেই সীতাংশু কোটাক দায়িত্ব নেওয়ার সময়ে বলেছিলেন, ‘‘উনি তো কোথাও যাননি। এনসিএ-তে বসে ভারতীয় ক্রিকেটের রোডম্যাপ তৈরি করছেন। উনি জেতা-হারা নিয়ে চিন্তা করেন না। ওঁর আসল লক্ষ্য প্লেয়ারদের সামগ্রিক উন্নতি। দলের প্রত্যেকে যাতে সুযোগ পায়, সেটা দেখেন উনি। আমাদের বারবার বলেন, সিনিয়র দলের কেউ হঠাৎ চোট পেয়ে গেলে দেখো যেন ওদের ভুগতে না হয়।’’
একের পর এক চোটের জন্য রিজার্ভ বেঞ্চ নিয়ে খেলতে হলেও দ্রাবিড় মন্ত্রে দীক্ষিত ভারতীয় ক্রিকেটকে ভুগতে হয়নি। নিজেদের ডেরায় ভুগেছে অস্ট্রেলিয়া।