ঋদ্ধিমান সাহা এবং ঋষভ পন্থ।
উইকেটকিপার হিসেবে ঋদ্ধিমান সাহার টেস্ট কেরিয়ার কি প্রশ্নের মুখে পড়ে গেল? ঋষভ পন্থের দাপুটে ইনিংসের সৌজন্যে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ জিতল ভারত। এর মধ্যে আবার গাব্বার বাইশগজে দীর্ঘ ৩২ বছর পরে ঐতিহাসিক জয়। তাই নতুন বছরে টিম ইন্ডিয়া ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ খেলতে নামার আগে ঋদ্ধি বনাম পন্থ ইস্যু নিয়ে আলোচনা হওয়া স্বাভাবিক।
সদ্য সমাপ্ত টেস্ট সিরিজের শেষ দিকটা পন্থের জন্য ভাল গেলেও, অ্যাডিলেড ও মেলবোর্নের বক্সিং-ডে টেস্টে কিন্তু পাপালিকেই সুযোগ দিয়েছিল টিম ম্যানেজমেন্ট। ব্যাটে দাগ কাটতে না পারায় অটোমেটিক চয়েস হিসেবে দলে চলে আসেন দিল্লির বাঁহাতি পন্থ। কিপিং নিয়ে কটাক্ষ হজম করলেও, বিস্ফোরক মেজাজে ব্যাট করে নিন্দুকদের মুখ বন্ধ করেছেন ২৩ বছরের তরুণ। সিডনি টেস্টে ১১৮ বলে ৯৭ রানের পর এবার ব্রিসবেন টেস্ট। চতুর্থ টেস্টেও তাঁর ফর্ম অব্যাহত। এবার ১৮০ বলে অপরাজিত ৮৯। যদিও ভবিষ্যতে ভারতীয় টেস্ট দলে দুই তারকার সুযোগ পাওয়া নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত দেশের উইকেটকিপার মহল।
সৈয়দ কিরমানি : আমি আগেও বলেছি, আবার বলছি পন্থের ফুটওয়ার্কে ব্যাপক সমস্যা আছে। তাছাড়া ওর শরীরের নিচের অংশও বেশ ভারী। ফলে লেগ স্টাম্পে শরীর ছুঁড়ে ক্যাচ ধরতে ওর অসুবিধা হয়। জোরে বোলারদের পাশাপাশি স্পিনারদের বিরুদ্ধে কিপিং করার ক্ষেত্রেও পন্থের অনেক ভুলভ্রান্তি আছে। বলের বাউন্সের সঙ্গে ওর কোমর ও হাত ঠিকমতো কাজ করছে না। তাই ব্রিসবেন টেস্টে ব্যাট করে দলকে জেতালেও, টেস্টে ক্রিকেটে আমার কাছে সবসময় প্রথম পছন্দ ঋদ্ধি। এটা নিয়ে আমার মনে বিন্দুমাত্র সংশয় নেই। প্রয়োজনে পন্থের এখনই ঋদ্ধির পরামর্শ নেওয়া উচিত।
দীপ দাশগুপ্ত : ঋদ্ধি বনাম পন্থ নিয়ে গোটা দুনিয়া অনেক কথা বললেও আমি সেই দলে নাম লেখাতে রাজি নই। টিম গেমের উপর ভর করে আমরা টেস্ট সিরিজ জিতেছি। প্রতিটি ক্রিকেটার এই সিরিজ জয়ে অবদান রেখেছে। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে মাসের পর মাস পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার পরেও এমন দাপুটে পারফরম্যান্স। এর আগে কোন ভারতীয় দল এত চোট-আঘাতের পরেও দাপট দেখিয়েছে বলতে পারেন। তাই ঋদ্ধি ও পন্থের ভবিষ্যত নিয়ে আলোচনা করব না। বরং এই ঐতিহাসিক টেস্ট জয়কে সেলিব্রেট করা উচিত।
সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায় : মহেন্দ্র সিংহ ধোনির আগমনের পর বিশ্ব ক্রিকেটে উইকেটকিপারের সংজ্ঞা বদলে গিয়েছে। ফারুক ইঞ্জিনিয়ার এভাবেই বিস্ফোরক মেজাজে ব্যাট করত। পন্থের দুটো ইনিংস দেখে ফারুকের ইনিংসগুলো মনে পড়ে গেল। সোজা কথা বলতে গেলে এই মুহুর্তে পন্থ কিন্তু ঋদ্ধিকে কড়া চ্যালেঞ্জ জানিয়ে দিয়েছে। টিম ম্যানেজমেন্টও সেটা জানে। আমার মতে এই মুহুর্তে পন্থ ফর্মে আছে। তাই ঘরের মাঠে ইংল্যান্ড সিরিজে ওকে সুযোগ দেওয়া যেতেই পারে। বাঙালি সেন্টিমেন্ট দেখিয়ে লাভ নেই।
কিরণ মোরে : আমাদের সময় উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যানরা প্রাধান্য পেত। তবে ইদানিং ট্রেন্ড বদলেছে। এখন ব্যাটসম্যান-উইকেটকিপার নিয়েই বেশি মাতামাতি হচ্ছে। এটা একটা স্পেশালিস্টের কাজ। সেটা অবশ্য আইপিএল জামানায় টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটকে সবাই গুলিয়ে ফেলছে। দেশের মাঠে তিন স্পিনারের বিরুদ্ধে ঋদ্ধি বেস্ট চয়েস। কারণ, ওর অভিজ্ঞতা অনেক বেশি।
শ্রীবৎস গোস্বামী : দীর্ঘদিন পাপালির সঙ্গে খেলেছি। পন্থের বিরুদ্ধেও অনেকবার খেলেছি। দুজন ক্রিকেটারের কাজ এক হলেও ভূমিকা ও মানসিকতা একেবারে আলাদা।