সম্মান: ম্যাচের সেরার পদক গলায় অধিনায়ক রাহানে। ছবি পিটিআই।
প্রত্যাঘাত বোধহয় একেই বলে!
ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৮ উইকেটে টিম পেনদের কাছে হারতে হয়েছিল বিরাট কোহালিদের। দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৬ রানে অলআউট হয়ে যাওয়ার লজ্জা ভারতীয়দের তাড়া করেছিল।
সেই পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে মেলবোর্নের দ্বিতীয় টেস্টে অস্ট্রেলিয়াকে সেই ৮ উইকেটে হারিয়েই মধুর বদলা নিল ভারতীয় দল। যার ফলে, দ্বিতীয় টেস্টে বিরাটের অনুপস্থিতিতে ভারতের ভারপ্রাপ্ত নেতা অজিঙ্ক রাহানে এবং তাঁর ছেলেদের নিয়ে চলছে প্রশংসার বন্যা। যে দলে সচিন তেন্ডুলকর, বিরাট কোহালিদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন ‘বিগ বি’ অমিতাভ বচ্চনও। প্রথম টেস্টে হারের পরে পিতৃত্বের ছুটি নিয়ে ভারতে এসেছেন অধিনায়ক কোহালি। তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘অবিশ্বাস্য জয়! গোটা দলকেই কৃতিত্ব দিতে হবে। অজিঙ্কের নেতৃত্বে হারের ঝাপটা সামলে ফের জয়ে ফিরল দল। এখান থেকেই আরও উপরে নিয়ে যেতে হবে দলের পারফরম্যান্স।’’ মেলবোর্ন টেস্ট জিতে ভারত সিরিজ ১-১ করতেই অমিতাভের টুইট, ‘‘ইয়াহহ! দ্বিতীয় টেস্টে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে দিল ভারত। বলেছিলাম না…অঘটনের বদলা প্রত্যাবর্তন। করে দেখাল…ওদের ঘরের ভিতর ঢুকে…অভিনন্দন ভারত।’’
ভারত অধিনায়ক অজিঙ্ক রাহানে অবশ্য এই দুর্দান্ত জয়ের দিনের দুই অভিষেককারী শুভমন গিল এবং মহম্মদ সিরাজের প্রশংসা করছেন। অ্যাডিলেডে হারের দশদিনের মধ্যে এই প্রত্যাবর্তনের টেস্টে শুভমন প্রথম ইনিংসে ৪৫ রানের পরে দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৫ রানে অপরাজিত থাকেন। অন্য দিকে, মহম্মদ সিরাজ দ্বিতীয় ইনিংসে তিন উইকেট-সহ ম্যাচে পাঁচ উইকেট নিয়েছেন। ম্যাচের পরে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানেই রাহানে বলেন, ‘‘ছেলেদের জন্য গর্বিত। বিশেষ কৃতিত্ব দিতে হবে প্রথম টেস্ট খেলতে নামা শুভমন এবং মহম্মদ সিরাজকে। অ্যাডিলেডে হারের ধাক্কা সামলে যে ভাবে লড়াই করল ওরা, তাতে কুর্নিশ জানাতেই হচ্ছে।’’ যোগ করেন, ‘‘এই দৃঢ় লড়াকু মনোভাবটা দরকার ছিল। দ্বিতীয় ইনিংসে চোটের জন্য উমেশকে না পাওয়ায় চিন্তা বেড়েছিল।’’ ভারতীয় অধিনায়ক আরও বলেন, ‘‘এই টেস্টে শট নির্বাচনের ক্ষেত্রেও পরিশীলিত মনোভাবের পরিচয় দিয়েছে শুভমন। আর সিরাজ শৃঙ্খলা মেনে বল করে গিয়েছে। এটা প্রথম টেস্টেই করা খুব কঠিন কাজ।ওদের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ভাল খেলার অভিজ্ঞতা কাজে দিয়েছে।’’ দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য আর অশ্বিনও বলেন, ‘‘দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে শান্ত মাথায় পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হয়। গোটা দলটাই দুর্দান্ত খেলে জয় ছিনিয়ে আনল। বিশেষ করে মহম্মদ সিরাজ ও শুভমন গিলের কথা উল্লেখ করতে হবে।’’ যার উত্তরে শুভমন টুইট করেন, ‘‘প্রতিকূলতা পেরিয়ে এলাম। ধন্যবাদ সমর্থকদের।’’
রাহানেকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ম্যাচের আগে ড্রেসিংরুমে কী আলোচনা হয়েছিল? তিনি বলেন, ‘‘জেতার লড়াকু মনোভাবটা ধরে রাখতে বলা হয়েছিল। কারণ, অ্যাডিলেডে এক ঘণ্টার বিপর্যয়ে হারতে হয়েছিল।’’ভারপ্রাপ্ত অধিনায়কের কথায়, ‘‘চোট পেলেও দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠছে উমেশ। তৃতীয় টেস্টে রোহিত শর্মা ফিরছে। সোমবার রাতেই কথা হয়েছে ওর সঙ্গে। মাঠে নামার জন্য ছটফট করছে রোহিতও।’’
সচিন তেন্ডুলকরের টুইট, ‘‘বিরাট, রোহিত, ইশান্ত, শামি ছাড়া টেস্ট জয়, দুর্দান্ত প্রাপ্তি। অভিনন্দন টিম ইন্ডিয়াকে।’’ মাইকেল ভনও বলছেন, ‘‘প্রতিকূল পরিস্থিতিতে জয় ছিনিয়ে আনা সব সময়েই বিশেষ কৃতিত্বের।’’ প্রাক্তন অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার টম মুডিও লেখেন, ‘‘প্রথম টেস্টে বিধ্বস্ত হওয়ার পরে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিংকে চূর্ণ করল ভারত।’’ প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার ভি ভি এস লক্ষ্মণ বলেছেন, ‘‘এই জয় প্রচুর ইতিবাচক বিষয় সামনে আনল। রাহানের নেতৃত্ব, বিধ্বংসী বোলারদের পাশাপাশি, দুই অভিষেককারী ক্রিকেটারেরও দাপটও উপভোগ করলাম।’’ সঞ্জয় মঞ্জরেকর লেখেন, ‘‘১৯৭৪ সালে ৪২ রানে অলআউটের পরের টেস্টেই ইনিংস ও ৭৮ রানে হেরেছিল ভারত। হারের পরে এল ঐতিহাসিক জয়।’’ বীরেন্দ্র সহবাগের প্রতিক্রিয়া, ‘‘মেলবোর্নে দারুণ জয়। রাহানের সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া, বোলারদের দাপটের সঙ্গে নজর কাড়ল শান্ত মাথার শুভমন গিল।’’
তবে এই জয়ের মাঝেও ভারতীয় দলকে সতর্ক করেছেন বিষাণ সিংহ বেদী। তাঁর কথায়, ‘‘৩৬ অলআউট হওয়া যেমন কাঙ্খিত নয়। তেমনই ৮ উইকেটে জয় ভয়ের সংবাদ নয়। ভারতীয়েরা এই দু’টোই ভুলে যাক। একটা দুঃস্বপ্ন হলে, অপরটি আনন্দে গা ভাসিয়ে দেওয়ার পরিসর যেন না তৈরি করে।’’