দুরন্ত: রঞ্জি ট্রফির সেমিফাইনালে উঠে উল্লাস বাংলার ক্রিকেটারদের। সোমবার কটকে। নিজস্ব চিত্র
পঞ্চম দিন সকালে খারাপ আলোর জন্য ম্যাচ বন্ধ হওয়ার সময় এক গাল হাসি নিয়ে ড্রেসিংরুমে ফিরছিলেন বাংলার ক্রিকেটারেরা। আন্দাজ করতে পেরেছিলেন, ম্যাচ হয়তো তখনই শেষ। ৪৫৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে তখন ওড়িশার স্কোর ৩৯-০। ঝোড়ো ব্যাটিং করলেও পঞ্চম দিনের পিচে এই রান করার কোনও সম্ভাবনাই ছিল না।
দুপুর ১টা বেজে ২৫ মিনিটে আম্পায়ারেরা দু’দলের অধিনায়ককে মাঠে ডেকে হাত মিলিয়ে দেন। প্রথম ইনিংসে এগিয়ে থাকার সুবাদে দু’বছর পরে রঞ্জি ট্রফির সেমিফাইনালের টিকিটও পাকা হয়ে যায় বাংলার।
জম্মু ও কাশ্মীর বনাম কর্নাটক ম্যাচ তখনও চলছিল। ম্যাচ বন্ধ থাকার সময়, বাংলার ড্রেসিংরুমের প্রত্যেকে নজর রাখছিলেন সে ম্যাচের স্কোরবোর্ডের দিকে। বিকেলের মধ্যেই নিশ্চিত হয়ে যায়, ২৯ ফেব্রুয়ারি ইডেনে কর্নাটকের বিরুদ্ধেই খেলতে হবে বাংলাকে। একই সময় আরও একটি খবর আসে বাংলা শিবিরে। কোয়ার্টার ফাইনালে না খেললেও ইডেনে আসছেন কে এল রাহুল। প্রশ্নপত্র কতটা কঠিন হতে পারে, তা ম্যাচের পাঁচ দিন আগেই জেনে গেল বাংলা শিবির।
শুধু রাহুলের জন্যই পরিকল্পনা সাজিয়ে বাকিদের হাল্কা ভাবে নিলে ভুল করবে বাংলা। করুণ নায়ার, মণীশ পাণ্ডেরা কতটা ভয়ঙ্কর তা জানে ক্রিকেটবিশ্ব। টেস্টে ট্রিপল সেঞ্চুরির নায়ক যদিও এই মরসুমে ফর্মে নেই। কিন্তু মণীশ দুরন্ত ছন্দে। এখানেই শেষ নয়। রয়েছেন বিধ্বংসী ওপেনার দেবদূত পাড়িক্কাল। তাঁকে সঙ্গ দেবেন আর সামর্থ। মিডল অর্ডারে অলরাউন্ডার শ্রেয়স গোপাল নিমেষে পার্থক্য গড়ে দিতে পারেন। বোলিং বিভাগ আরও ভয়ঙ্কর। নাইট পেসার প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম ইনিংসে চার উইকেট পেয়ে বিপক্ষকে কঠিন পরীক্ষার মুখে ফেলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে সাত উইকেট নেন অফস্পিনার কৃষ্ণাপ্পা গৌতম। তাঁদের সঙ্গেই দেখা যাবে অভিমন্যু মিঠুনকে। কাকে ছেড়ে কার জন্য ছক তৈরি করবে বাংলা?
কোচ অরুণ লালের ধারণা একেবারে পরিষ্কার। টিম বাসে ওঠার আগে বলছিলেন, ‘‘বিপক্ষের শক্তি দেখে খেললে কোনও বড় ম্যাচ জেতা যায় না। ওদের রাহুল খেলুক। ইডেনের গতিময় পিচে আমার কাছেও আকাশ ও ঈশান আছে। ওদের মণীশ পাণ্ডে, করুণ নায়ার থাকুক। আমাদের শাহবাজ, অনুষ্টুপরা কম কী? সেমিফাইনালেই প্রমাণ হবে কারা বড় দল।’’ এই বাংলা কাউকে ভয় পায় না। কেরলে গিয়ে কেরলকে হারিয়েছে। রাজস্থানকে হারিয়েছে তাদের ঘরের মাঠে। পঞ্জাব পরাজিত পাটিয়ালায়। যতই কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হোক, কেউ না কেউ ঠিক দায়িত্ব নিচ্ছেন। কর্নাটকের বিরুদ্ধে নতুন কেউ হয়তো স্বপ্নপূরণের দায়িত্ব নেবেন। অরুণের কথায়, ‘‘ঘরের মাঠে সেমিফাইনাল খেলার সুযোগ আর কবে পাব জানি না। প্রত্যেকে এই সুযোগ উপভোগ করবে। জানি, দলের মধ্যে রঞ্জি ট্রফি জেতার খিদে কতটা তৈরি হয়েছে। যত বাধাই আসুক, থামব না।’’
প্রাক্তন অধিনায়ক মনোজ তিওয়ারিও আত্মবিশ্বাসী। বলে গেলেন, ‘‘এই ম্যাচটিই হবে ফাইনাল। এখানে জিতলে আর ধরে রাখা যাবে না আমাদের।’’
শেষ কবে বাংলাকে এতটা আত্মবিশ্বাসী দেখা গিয়েছে জানা নেই। ইডেনে স্বপ্নপূরণের লড়াইয়ে আরও এক ধাপ এগিয়ে যেতে মানসিক ভাবে তারা প্রস্তুত।