আশাবাদী: দলের তরুণ ফুটবলারদের উপর আস্থা ইগরের। ফাইল চিত্র
ওমানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ফিফা ফ্রেন্ডলিতে নাটকীয় প্রত্যাবর্তন ঘটিয়ে ড্র করেছিল ভারতীয় দল। কিন্তু সংযুক্ত আরব আমিরশাহির বিরুদ্ধে পরের ম্যাচেই ০-৬ লজ্জার হারের পরে কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি ইগর স্তিমাচ। অবশেষে বৃহস্পতিবার আনন্দবাজারের সামনে অকপট ভারতীয় দলের কোচ।
২০১৯ সালে এএফসি এশিয়ান কাপে আমিরশাহির বিরুদ্ধে ০-২ হেরেছিল ভারত। এ বার ফল ০-৬। বিপর্যয়ের কারণ কী? জাতীয় কোচের ব্যাখ্যা, ‘‘দু’টি ফলের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ আলাদা। আমার মতে, দু’টি ম্যাচের তুলনা করা একেবারেই উচিত নয়।’’ কেন? ইগরের কথায়, ‘‘২০১৯ সালে এএফসি এশিয়ান কাপের গ্রুপ পর্বে মুখোমুখি হয়েছিল ভারত-আমিরশাহি। দু’টি দলই দীর্ঘ প্রস্তুতি নিয়ে সেরা ও অভিজ্ঞ ফুটবলারদের নিয়ে ম্যাচ খেলেছিল। ২০২১ সালের এই দ্বৈরথ ছিল ফ্রেন্ডলিতে।’’ ভারতীয় দলের কোচ যোগ করেন, ‘‘এই ম্যাচে আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল, জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া নতুন ফুটবলারদের পরীক্ষা করা। কারণ, আমিরশাহির আক্রমণভাগ সেরা। ওদের ফুটবলারেরা দীর্ঘ দিন ধরে একসঙ্গে খেলছে।’’ এখানেই শেষ নয়। তিনি আরও বলেন, ‘‘ওমানের বিরুদ্ধে খেলাটা একটু সহজ ছিল, কারণ আমাদের মতো ওদের দেশেও প্রতিযোগিতামূলক ফুটবল শেষ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আমিরশাহিতে জোরকদমে প্রতিযোগিতা চলছে। ফলে ওদের ছন্দ তুঙ্গে ছিল।’’
ওমানের বিরুদ্ধে প্রথম ফ্রেন্ডলিতে দশ জন ফুটবলারের ভারতীয় দলে অভিষেক হয়েছিল। আমিরশাহির বিরুদ্ধে প্রথম একাদশে আট ফুটবলার পরিবর্তন করেছিলেন ইগর। ম্যাচের আগেই খোলাখুলি জানিয়েছিলেন, প্রতিপক্ষ যতই শক্তিশালী হোক, তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যাবেন। কিন্তু ০-৬ হারের পর থেকেই জাতীয় কোচের পরিকল্পনা নিয়ে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন। হতাশ ইগর বলছেন, ‘‘অনেকেই এখন চেষ্টা করছেন নেতিবাচক পরিস্থিতি সৃষ্টি করার। যা খুবই বিস্ময়কর।’’ এর পরেই ওমান এবং আমিরশাহির মতো দলের বিরুদ্ধে খেলার সিদ্ধান্ত কেন নিয়েছিলেন তার যুক্তি দিলেন ১৯৯৮ সালে ফ্রান্স বিশ্বকাপে তৃতীয় স্থান অর্জনকারী ক্রোয়েশিয়া রক্ষণের অন্যতম ভরসা ইগর। বললেন, ‘‘এই মুহূর্তে আমাদের ছেলেরা ওমান এবং আমিরশাহির মতো শক্তিশালী দু’টি দলের বিরুদ্ধে খেলার জন্য কতটা তৈরি রয়েছে, তা দেখা জরুরি ছিল।’’
ভারতীয় ফুটবলের দুই কিংবদন্তি ভাইচুং ভুটিয়া ও আই এম বিজয়ন অবশ্য ইগরের পাশেই দাঁড়িয়েছেন। তাঁরা খোলাখুলি জানিয়েছিলেন, ঠিক পথেই এগোচ্ছেন জাতীয় কোচ। ফ্রেন্ডলি ম্যাচই ফুটবলারদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার সেরা মঞ্চ। ইগর বলছেন, ‘‘এই দু’টি ম্যাচে আমি যদি সব ফুটবলারকে খেলার সুযোগ না দিতাম, তা হলে সেটা ভুল হত।’’ তিনি আরও বললেন, ‘‘আমাদের দল একঝাঁক প্রতিশ্রুতিমান তরুণ ফুটবলারদের নিয়ে গড়া হয়েছে। ওদের সময় দিতে হবে তৈরি হওয়ার, অভিজ্ঞতা অর্জনের। হারটাও কিন্তু আমাদের এগিয়ে চলার পথের একটা অংশ।’’ ভারতীয় দলের কোচের মতে এই হার থেকেই শিক্ষা নেবেন ফুটবলারেরা। বললেন, ‘‘আমি বিশ্বাস করি, সেরা ফুটবলারদের নিয়েই দল গড়া হয়েছে। হার যন্ত্রণার হলেও ওদের অভিজ্ঞতা অর্জনে সাহায্য করবে। শিখতে
সাহায্য করবে।’’
আগামী জুনে বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বে কাতার, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের মুখোমুখি হবেন সুনীল ছেত্রী, সন্দেশ জিঙ্ঘানরা। ভারতীয় দল কি পারবে সমর্থকদের জয়ের স্বপ্ন পূরণ করতে? আশাবাদী ইগর বললেন, ‘‘স্বপ্ন দেখার অধিকার ও বিশ্বাস কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। তবে মাসখানেক বিরতির পরে আট দিনে তিনটি ম্যাচ খেলা সত্যিই খুব কঠিন। কিন্তু আমাদের তৈরি হতে হবে।’’ এর পরেই তিনি যোগ করেন, ‘‘সময়ই যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর দেবে। প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আমরা সেরাটাই দেব যাতে বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বের তিনটি ম্যাচের পরে সমর্থকেরা খুশি হতে পারেন। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও পরিশ্রমই সাফল্য এনে দেয়।’’