বিশ্বকাপের উত্তেজনা এখন তুঙ্গে ওঠেনি। কিন্তু ভ্রু কোঁচকানো নজর এখন ২২ গজের পিচে। দর্শকরা যেখানে একের পর এক রানের পাহাড় হওয়ার অপেক্ষায়, সেখানে তিন ভাগের এক ভাগ ম্যাচে ১৫০ রানের গণ্ডিও পেরোতে পারেনি প্রথমে ব্যাট করা টিম। চলুন নজর দেওয়া যাক পিচ নিয়ে ওঠা সন্দেহগুলোর দিকে।
২০০-২৫০ রান করতেও কাল ঘাম ছুটছে। এই বিশ্বকাপে যেখানে রানের বন্যা হওয়ার আশা ছিল, সেখানে ব্যাটসম্যানদের রীতিমতো চাপে থাকতে হচ্ছে বড় রানের জন্য। পাকিস্তান প্রথম ম্যাচে দাঁড়াতে পারেনি। ১০৫ রানে অলআউট হয়। শ্রীলঙ্কা কার্ডিফে ১৩৬ রানে শেষ।
আইসিসি এখনও পর্যন্ত পিচ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ দেখছে না। তাদের দিক থেকে ব্যাখ্যা— বোলাররা দুর্দান্ত বল করছে। ব্যাটসম্যানেরাও প্রথম দিকে ঝুঁকি কম নিচ্ছেন। যত টুর্নামেন্ট এগোবে, তত নাকি তাঁদের আত্মবিশ্বাস বাড়বে। সব দোষ পিচের উপর দেওয়া উচিত নয়।
বিশ্বকাপের আগে বাজনা বাজছিল, এ বার নাকি এত হাই স্কোরিং খেলা হবে যে, টার্গেট ৫০০ রানও অতিক্রম করে যেতে পারে। সে সবের তো বালাই নেই, উল্টে দক্ষ স্ট্রোক প্লেয়ারেরা পর্যন্ত ইংল্যান্ডের পিচে দ্রুত রান করতে গিয়ে ঠোক্কর খাচ্ছেন।
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১০টি ম্যাচ হয়ে গিয়েছে। তার মধ্যে ৩টে ম্যাচের ৫টা ইনিংসে ৩০০-র বেশি রান উঠেছে। এর মধ্যে আবার ইংল্যান্ডই করেছে দুটো। বাকি তিনটে বাংলাদেশ, দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তান। ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের পর পিচ নিয়ে প্রশ্ন আরও জোরালো হয়। দল বুঝে পিচ হচ্ছে না তো? উঠেছে প্রশ্ন।
মহেন্দ্র সিংহ ধোনি ও রোহিত শর্মা— দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের পরে দু’জনেই সতীর্থদের বলেন, বিশ্বকাপে এমন অদ্ভুত উইকেট হবে তাঁরা দুঃস্বপ্নেও ভাবেননি। এমনকি বিরাটের স্ট্রাইক রেট দেখেও পিচ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন অনেকেই।
নিন্দুকেরা নজর রেখেছে ইংল্যান্ডের পরের ম্যাচের দিকে। যেখানে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কার্ডিফে নামছে তারা। এই কার্ডিফেই গত মঙ্গলবার শ্রীলঙ্কা তোলে ২০১। জবাবে আফগানিস্তান গুটিয়ে যায় ১৫২ রানে। এ বার ইংল্যান্ডের ম্যাচে কী হবে? মন্থর উইকেট থাকবে? নাকি আগের দু’টো ম্যাচের মতোই বড় রান তুলবেন মর্গানরা?
আইসিসির পিচ কমিটির প্রধান অ্যান্ডি অ্যাটকিনসন কোথায় গেলেন? অনেকেরই এই প্রশ্ন। বড় আইসিসি ইভেন্টে অ্যাটকিনসনের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। সে ভাবে নাকি তাঁর উপস্থিতি চোখেই পড়ছে না এই বিশ্বকাপে। তা হলে আইসিসির তরফে বিশ্বকাপে পিচের তদারকি করছেন কে?
ট্রেন্ট ব্রিজে পাকিস্তান হারিয়ে দিয়েছিল ইংল্যান্ডকে। সেই ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে পাকিস্তান তোলে ৩৪৮ রান। জবাবে ইংল্যান্ডের ইনিংস শেষ হয় ৩৩৪ রানে। এর পরই পাকিস্তান অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ বলেন, ‘‘ওরা ব্যাটিং উইকেট বানিয়েছিল। ভেবেছিল, বড় রান তুলে আমাদের হারাবে। কিন্তু সেই পরিকল্পনা ব্যুমেরাং হয়েছে।’’
রোহিতের ওয়ান ডে ক্রিকেটে দু’-দু’টো ডাবল সেঞ্চুরি আছে। তবুও দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচে রোহিতের শতরানকে তাঁর জীবনে সেরা শতরান বলেছেন অধিনায়ক বিরাট। এই বলার পিছনে কি অন্য ইঙ্গিত ছিল? অনেকের বিশ্লেষণ, ভারত অধিনায়ক না বলেও বুঝিয়ে দিতে চেয়েছেন, এত কঠিন উইকেটে ম্যাচ জেতানো সেঞ্চুরিটা এল বলেই এটা রোহিতের সেরা।
ব্যাটিং সহায়ক পিচ না হলে, বড় রান না উঠলে, দর্শকরা হতাশ হতে শুরু করবে সন্দেহ নেই। এরকমই চলতে থাকলে, জনপ্রিয়তার দিক থেকে এই বিশ্বকাপ কতটা সফল হবে তা নিয়েই থাকছে প্রশ্ন।