সফল: বিশ্বকাপে দুরন্ত ফর্মে শামি। নিলেন পাঁচ উইকেট। রয়টার্স
৩৩৮ রান তাড়া করতে নেমেছিল ভারত। শুরু থেকেই ছয় রান প্রতি ওভারের চেয়ে বেশি রান প্রয়োজন ছিল। অথচ প্রথম দশ ওভারে ভারতের ব্যাটিং দেখে অবাকই হলাম। মাত্র ২৮ রান করল। হারাল একটি উইকেট। শুধু তা-ই নয়, ২০ ওভারে ভারতের স্কোর ৮৩-১। ইনিংসে মাত্র একটি ছয়। তাও আবার শেষ ওভারে।
ওয়ান ডে-তে বড় রান তাড়া করতে গেলে পাওয়ারপ্লে-র সদ্ব্যবহার করতেই হয়। শুরু থেকে বিপক্ষের উপর চাপ সৃষ্টি করতে না পারলে তারাই চেপে বসে। এ দিন এজবাস্টনেও সেটাই হল। রোহিত শর্মা সেঞ্চুরি করলেও শুরুতে একেবারেই ওকে ছন্দে দেখা যায়নি। গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে ফিরে গেল বিরাট। এই রকম পরিস্থিতিতে ওর উইকেটে থাকা দরকার ছিল। ৬৬ রান করার পরে গুড লেংথ বল কাট করতে গিয়ে ফিরল। চাপে পড়ে গেল ভারতও।
ঋষভ পন্থ ও হার্দিক পাণ্ড্য তবুও খানিকটা চেষ্টা করেছিল স্কোরবোর্ড সচল রাখার। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমে ২৯ বলে ৩২ রানের ইনিংস খেলে গিয়েছে পন্থ। যা একেবারেই খারাপ না। ও আর হার্দিকই প্রতিআক্রমণ করা শুরু করে। এক সময়ে খুচরো রান নিয়ে হার্দিককে স্ট্রাইক দিচ্ছিল পন্থ। আরও কয়েকটি ওভার এটা চালিয়ে যাওয়া উচিত ছিল। কিন্তু ওর অন্যতম প্রিয় শট খেলতে গিয়েই আউট হয়েছে পন্থ। আইপিএলেও বেশ কয়েক বার ফাইন লেগের উপর দিয়ে বল বাউন্ডারিতে পাঠিয়েছে ও। কিন্তু ক্রিস ওকসের অসাধারণ ক্যাচেই ফিরতে হয় পন্থকে।
হার্দিকের ব্যাটিংয়ে আমি খুশি। কোহালি যে দায়িত্ব দিয়েছিল, তা পূরণ করার চেষ্টা করেছে। ৩৩ বলে ৪৫ রান করা মানে বল নষ্ট হতে দেয়নি। সেই সঙ্গে সচল রেখেছে স্কোরবোর্ড। ইংল্যান্ড অধিনায়ক অইন মর্গ্যানের দুর্দান্ত পরিকল্পনার জন্যই ফিরে যেতে হয় ভারতীয় অলরাউন্ডারকে। লং-অন ও লং-অফ অঞ্চলে ফিল্ডার রেখে ক্রমাগত সামনের পায়ে খেলিয়ে গেল হার্দিককে। ফলে বাউন্ডারি পেতে হলে হয়তো ফিল্ডারের মাথার উপর দিয়ে বল গ্যালারিতে পাঠাতে হবে। নয়তো সিঙ্গল খেলে স্ট্রাইক রোটেট করতে হবে। স্টাম্পের সোজাসুজি বল লেগের দিকে টানতে গেলে হয় উপরে উঠে যাবে, না হলে বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ আউট হবে। হার্দিক সেই ফাঁদেই পা দিল। প্লাঙ্কেটের স্লোয়ার লেগস্টাম্পের দিকে টানতে গিয়ে মিসটাইম করে। লং-অনে সহজ ক্যাচ নেয় পরিবর্ত জেমস ভিন্স।
৪৫তম ওভারে হার্দিক আউট হওয়ার পরে ম্যাচ জেতানোর দায়িত্ব এসে পড়ে ফিনিশার ধোনির কাঁধে। কিন্তু ও কী পরিকল্পনা নিয়ে খেলল বোঝা গেল না। ৪১তম ওভার থেকে হার্দিকের সঙ্গে ব্যাট করছিল। চার ওভার ক্রিজে থাকার পরে থিতু হয়ে যাওয়া উচিত ছিল। অথচ শেষ পাঁচ ওভারে যখন ৭১ রান প্রয়োজন, তখন অতিরিক্ত খুচরো রান না নিয়ে আক্রমণ করার দরকার ছিল ধোনির। তা হলে শুরুতে উইকেট হাতে রাখার মানেটা কী হল? ম্যাচ শেষে দেখা যাচ্ছে বিপক্ষের থেকে ৩১ রানে আমরা পিছিয়ে, হাতে তখনও পাঁচ উইকেট। প্রশ্ন উঠতেই পারে, তা হলে পাঁচটি উইকেটের সদ্ব্যবহার আমরা কী করতে পারলাম!
মানছি ভারতের সামনে সেমিফাইনালের রাস্তা প্রায় নিশ্চিত। কিন্তু শেষ চারে অস্ট্রেলিয়া অথবা নিউজ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে এই পরিস্থিতিতে পড়লে কী করবে? মিচেল স্টার্ক, প্যাট কামিন্সরা ডেথ ওভারে অসাধারণ। ট্রেন্ট বোল্টও খারাপ বল করছে না। ওদের তুলনায় ইংল্যান্ডের বোলিং কিছুটা দুর্বল।
ব্যাটিং মন জিততে না পারলেও যশপ্রীত বুমরা ও মহম্মদ শামির প্রশংসা করতেই হচ্ছে। সকালে একটি আলোচনায় বলেছিলাম, আমার ম্যাচ চেঞ্জার ভারতের দুই পেসার। মহম্মদ শামি ও যশপ্রীত বুমরা। ইংল্যান্ডের ঝোড়ো ব্যাটিংয়ের বিরুদ্ধে ওরাই কিন্তু রুখে দাঁড়াল। এজবাস্টনেই ওয়ান ডে-র প্রথম পাঁচ উইকেট পেল শামি। শেষ পাঁচ ওভারে মাত্র ২৬ রান দিয়ে এক দিকের চাপ কমাল বুমরা।
শামি-বুমরার এই জুটির সঙ্গে ইংল্যান্ডের ফ্রেডি ট্রুম্যান ও ব্রায়ান স্টাথামের প্রচুর মিল খুঁজে পেলাম। ব্রায়ান স্টাথাম এত সুন্দর বল করতেন যে, ওঁকে আটকাতে গিয়ে ফ্রেডি ট্রুম্যানকে অনেক বেশি উইকেট দিয়ে দিত প্রতিপক্ষ। এ দিনও একই ঘটনা ঘটে। শেষ পাঁচ ওভারে বুমরা যে ইয়র্কার দিয়েছে সেখান থেকে খুব বেশি হলে এক রান বার করা সম্ভব। ব্যাটের এ দিক ও দিক লেগে বাউন্ডারি হলে আলাদা কথা।
বুমরার রান আটকানোর এই কৌশলের জন্যই অন্য প্রান্তে শামির বিরুদ্ধে আক্রমণ করতে হয়েছে স্টোকস, বাটলারদের। তাই হয়তো শামির নামের পাশে আজ পাঁচ উইকেট জ্বলজ্বল করছে।