চারমূর্তি: কমেন্ট্রি বক্সে তারার মেলা। সহবাগ, সচিন, সৌরভ ও লক্ষ্মণ। রবিবার বার্মিংহামে ভারত-ইংল্যান্ড ম্যাচে। টুইটার
ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে মহম্মদ শামি পাঁচ উইকেট পেলেও যশপ্রীত বুমরার বোলিংয়ে মুগ্ধ সচিন তেন্ডুলকর। উইকেট নেওয়ার কাজটি শামি করলেও রান আটকানোর কাজ করে গিয়েছেন বুমরা। রবিবার এজবাস্টনে ভারতীয় বোলারেরা যখন রীতিমতো রান আটকাতে ব্যর্থ, সেখানে দশ ওভারে বুমরা দেন ৪৪ রান। সঙ্গে একটি উইকেট। তবুও বুমরা, শামিদের বিরুদ্ধে ৫০ ওভারে ৩৩৭ রান করে ইংল্যান্ড।
সচিন বলেন, ‘‘শেষ পাঁচ ওভার বুমরা যে বল করেছে তা অনবদ্য। ইয়র্কারগুলো একেবারে পায়ের গোড়ায় দিয়েছে। ব্যাটসম্যান নড়াচড়া করার সময় পায়নি। ডেথ ওভারে কী ভাবে বল করতে হয় তার আদর্শ উদাহরণ দিয়ে গেল বুমরা।’’
সচিনের সঙ্গেই ছিলেন ভিভিএস লক্ষ্মণ। তিনিও মুগ্ধ বুমরার বোলিংয়ে। কিন্তু ভারতীয় স্পিনারদের পারফরম্যান্সে হতাশ। কুলদীপ যাদব ও যুজবেন্দ্র চহাল দু’জনে মিলে ১৬০ রান দেন। যা বড় স্কোরের দিকে ঠেলে দেয় ইংল্যান্ডকে। লক্ষ্মণের ব্যাখ্যা, ‘‘এ ধরনের পিচে বল ঘোরে না। অতিরিক্ত ফ্লাইট দেওয়ার কোনও মানে নেই। সাধারণত উইকেটের সোজাসুজি বল করা উচিত ছিল। কিন্তু রিস্টস্পিনারদের পক্ষে তা খুব একটা সহজ নয়।’’
‘কুল-চা’ জুটির বোলিং নিয়ে সচিনও খুশি নন। বলছিলেন, ‘‘ওদের বলে গতি খুব কম ছিল। যার সুবিধা নেয় স্টোকস। সুইচ হিট মারার জন্য প্রচুর সময় লাগে। স্টোকস সেটা মারতে পেরেছে। ফ্লাইট দিলেও আরেকটু গতির সঙ্গে বল করতে পারত।’’
তবে শামিকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত লক্ষ্মণ। টানা তিন ম্যাচে ১৩ উইকেট। বিশ্বকাপে প্রথম পাঁচ উইকেট শামির। কিন্তু কেন তিনি উইকেট পাচ্ছেন? লক্ষ্মণের বিশ্লেষণ, ‘‘আগে প্রচুর শর্ট বল করত ও। এখন একেবারেই তা বন্ধ করে দিয়েছে। ইংল্যান্ডের পরিবেশে বেশির ভাগ বল উপরের দিকে রাখতে হয়। শামি সেটা রাখছে। তাই ওর ঝুলিতে এত উইকেট।’’
সচিন অবশ্য বলেন, ‘‘উইকেট পেলেও রান আটকানোর কৌশল রপ্ত করতে হবে শামিকে। বিশ্বকাপ যত এগোচ্ছে, প্রতিযোগিতা ততই কঠিন হয়ে উঠছে।’’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘বুমরা যে জায়গায় ইয়র্কার রাখছে, শামি কিন্তু পারছে না। ফুলটস হয়ে যাচ্ছে। ডেথ ওভারে বল করতে এলে ঠিক জায়গায় ইয়র্কার দেওয়া কিন্ত আবিশ্যিক। না হলে যে কোনও অধিনায়ক চাপে পড়ে যেতে পারে।’’
কিন্তু শামির উইকেট নেওয়ার জন্যই যে মাঝের ওভারগুলোয় রান কম হয়েছে, তা মেনে নিলেন কিংবদন্তি। বলে গেলেন, ‘‘একটা সময় দেখছিলাম ৩৩ থেকে ৪০ ওভারে মাত্র ১৬ রান হয়েছে। পুরোটাই শামির উইকেট নেওয়ার জন্য।’’
বুমবুমে মুগ্ধ লিনেকার: ইংল্যান্ড স্কোরবোর্ডে তিনশোর ওপর রান তুলে দিলেও যশপ্রীত বুমরাকে দেখে বিস্মিত ক্রিকেট-বিশ্ব। শুধু ক্রিকেট-বিশ্বই নয়, ইংল্যান্ডের প্রাক্তন ফুটবলার গ্যারি লিনেকারও মজে গিয়েছেন বুমরার ডেথ বোলিং দেখে। শেষ পাঁচ ওভারে ‘বুম বুম’ বুমরা দিয়েছেন মাত্র ২৬। একটার পর একটা ইয়র্কার ঠিক নিশানায় এসে পড়েছে। যা দেখার পরে লিনেকার টুইট করেন, ‘‘আহ! কী দারুণ বুমরা।’’ ধারাভাষ্য দিতে দিতে ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক নাসের হুসেন মন্তব্য করেছিলেন, ‘‘যেন একটার পর একটা মিসাইল গিয়ে আছড়ে পড়ছে নিখুঁত লক্ষ্যে। অবিশ্বাস্য
বোলিং বুমরার।’’
বুমরা যে রকম একটা দিক থেকে রান আটকে গিয়েছেন, উল্টো দিক থেকে রান দিলেও উইকেট তুলেছেন মহম্মদ শামি। তাঁর ঝুলিতে গিয়েছে পাঁচ উইকেট। শামির বোলিংয়ের প্রশংসাও শোনা গিয়েছে প্রাক্তন ক্রিকেটারদের মুখে। মাইকেল আথারটন যেমন বলছিলেন, ‘‘শামির সিম পজিশনটা একেবারে নিখুঁত। বল সোজা সিমে পড়ছে। যে কারণে বলটা মুভ করছে। পাশাপাশি শামির গতিও খুব ভাল। তাই ব্যাটসম্যানরা সব সময় শট খেলার সময় পাচ্ছে না।’’ বিশ্বকাপে তিন ম্যাচ খেলে শামি তুলে নিয়েছেন ১৩ উইকেট। যার পরে ভারতের প্রাক্তন ওপেনার আকাশ চোপড়া বলছিলেন, ‘‘ভারতের প্রথম একাদশে অবশ্যই শামির থাকা উচিত। বুমরার সঙ্গী শামিই
হওয়া উচিত।’’