আস্ফালন: ম্যাঞ্চেস্টার মাতিয়ে দিয়ে গেলেন কুলদীপ। রবিবার।গেটি ইমেজেস
ম্যাঞ্চেস্টারে রবিবার বিশ্বকাপে ভারত বনাম পাকিস্তান দ্বৈরথে ৭-০ হয়েই গেল। সৌজন্যে ১১৩ বলে ১৪০ রান করা রোহিত শর্মা। আর কুলদীপ যাদব। ভারতের ৩৩৬ রান তাড়া করতে গিয়ে পাকিস্তান যখন ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে ফখর জ়মান (৭৫ বলে ৬২) ও বাবর আজ়মের (৫৭ বলে ৪৮ রান) ব্যাটে ভর করে, তখনই ওদের দু’জনকে প্যাভিলিয়নে ফিরিয়ে পাকিস্তানকে জয়ের কক্ষপথ থেকে ছিটকে দেয় কুলদীপ যাদব (২-৩২)।
অতীতে বিশ্বকাপের এই ম্যাচে ব্যাট হাতে বড় ভূমিকা নিতে দেখেছি সচিন তেন্ডুলকর, নভজ্যোৎ সিংহ সিধু, অজয় জাডেজা, বিরাট কোহালিদের। রবিবার সেই ভূমিকা নিয়েছিল রোহিত শর্মা। ওর ঝকঝকে ১৪০ রানের জন্যই শুরুতেই চালকের আসনে বসে গিয়েছিল ভারত। আর তার পরে জয়লক্ষ্মী ভারতের ঘরে নিয়ে আসে কুলদীপ যাদব। যা আরও নিশ্চিত করে হার্দিক পাণ্ড্য (২-৪০)। তাই ১১৭-১ থেকে দ্রুত ১২৯-৫ হয়ে ম্যাচ থেকেই হারিয়ে যায় পাকিস্তান। শেষমেশ ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতিতে ম্যাচ হারে ৮৯ রানে।
আমার মতে, রোহিত দুর্দান্ত ব্যাট করলেও, ম্যাচের নায়ক কুলদীপ। এ রকম চাপের মুখে দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন ঘটাল ও। এই চায়নাম্যান বোলারের বড় অস্ত্র লাইন ও লেংথে অভ্রান্ত থাকা। এ দিন সেই অস্ত্রের সঙ্গে বলে গতির তারতম্য মিশিয়েই ফিরিয়ে দেয় বাবর ও ফখরকে।
গত কয়েকদিন বৃষ্টি হয়েছে ম্যাঞ্চেস্টারে। পিচ ঢাকা ছিল। তাই স্যাঁতসেঁতে পিচে টস জিতে পাকিস্তান অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তখনই মনে হচ্ছিল পাক বোলিং পরিবেশের ফায়দা নিয়ে ভারতকে কোণঠাসা করে করতে চায়। কিন্তু বৃষ্টিস্নাত পরিবেশের সুবিধা নিতে গেলে বলে বৈচিত্র দরকার ছিল। তা কোথায়? মহম্মদ আমির ১০ ওভার বল করে ৪৭ রানে তিন উইকেট নিলেও ওকে কখনও ভয়ঙ্কর মনে হয়নি। আর হাসান আলি (১-৮৪), ওয়াহাব রিয়াজ়দের (১-৮৪) দেখে মনে হল ওদের বোলিং বিভাগ থেকে শৃঙ্খলা শব্দটাই উবে গিয়েছে।
আমিরের ও রিয়াজ়ের পরিকল্পনা ছিল বাঁ হাতে বল করতে এসে কোণাকুণি বল করে বিপাকে ফেলবে ভারতের দুই ওপেনার রোহিত শর্মা ও কে এল রাহুলকে। ওরা হয়তো ভেবেছিল মেঘলা আবহাওয়ায় বল নড়াচড়া করবে। সে ক্ষেত্রে গুড লেংথে পড়ে কিছু বল গোত্তা খেয়ে ঢুকে আসবে উইকেটের দিকে। তাতে এলবিডব্লিউয়ের সম্ভাবনা বাড়বে। না হলে বল অফস্টাম্পের একটু বাইরে রেখে সোজা বার করে নিতে হবে। সে বলে ব্যাট ছোঁয়ালেই যাতে ক্যাচ ওঠার সম্ভাবনা থাকে। এটাই ছিল একমাত্র পাক-রণনীতি।
কিন্তু আমিরদের এই পরিকল্পনা রাহুল ও রোহিত প্রথম দশ ওভারেই ভেস্তে দেয়। ওরা বাইরে যাওয়া বল ছাড়ছিল। মারার বল পেলে মেরেছে। আর খেলছিল একদম সোজা ব্যাটে। বল সে রকম নড়াচড়া করছে না দেখে ফের ভুল রাস্তায় হাঁটে পাকিস্তান। গতি নির্ভর বল করে রাহুল ও রোহিতকে ব্যাটফুটে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল প্ল্যান বি-তে। তাই প্রথম দশ ওভারে শর্ট বল বেশি দিল ওরা। কিন্তু এই সময় আমিরদের হাত থেকে ইয়র্কার বার হল না। কিন্তু রাহুল (৫৭) ও রোহিত দু’জনেই ব্যাকফুটে বেশ পোক্ত। তাই ওদের কোনও অসুবিধা হয়নি পাক বোলিংকে সামলাতে।
আর রাহুল আউট হয়ে যাওয়ার পরে রোহিত ও কোহালি (৭৭) যে ভাবে ছন্দে ব্যাট করছিল তা নষ্ট করার চেষ্টা দেখাতে পারেনি পাক অধিনায়ক। এই সময় আমিরকে আরও কয়েক ওভার বেশি বল করানো যেত। একে স্কোরবোর্ডে বিশাল রান। তার উপরে কোনও ঝাঁঝ নেই পাক বোলিংয়ে। তাই বিরাটও খোলা মনে খেলে যেতে পেরেছে।
রোহিত পাকিস্তানের এই দুর্বলতা ধরে নিয়েই নিজের চব্বিশতম শতরানটি করে গেল এ দিন। একটা সময় যখন ও রান পাচ্ছিল না তখন অনেকেই ওর সমালোচনা করেছে। কিন্তু সেই সময়ও আমি বলতাম, এই ভারতীয় দলে কোহালির পরেই সবচেয়ে দক্ষ ব্যাটসম্যান হল রোহিত। বিরাটের মতোই ও আগে থেকে বোলারের মস্তিষ্ক পড়ে ফেলতে পারে। তার উপর ওর একটা বড় গুণ হল, স্কোরবোর্ডকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। চার বা ছক্কা মারার পরের বলেই মারতে যায় না। ধৈর্য ধরে ইনিংস গড়তে পারে। সেটা করেই ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে ভারতকে চালকের আসনে বসিয়ে দিয়ে যায় মুম্বইয়ের ছেলেটা। পাকিস্তান ওকে শর্ট বল করে আউট করতে গিয়েছিল। বদলে কাট ও পুল করেই পাক বোলিংকে নির্বিষ করে দেয় রোহিত। কাট করে ও করে ৩০ রান। যার মধ্যে চারটি চার ও একটি ছক্কা। আর পুল করে রোহিত সংগ্রহ করে ২৮ রান। যার মধ্যে তিনটি চার ও দু’টি ছক্কা। পাকিস্তানের শর্ট বল রণনীতিকে ভেস্তে দিয়েছিল ‘হিটম্যান’। বিকল্প রণনীতির খোঁজ পায়নি সরফরাজ়।