জার্সি নম্বরই চিনিয়ে দেয় রোনাল্ডো, মেসিদের।
লিয়োনেল মেসি মানেই ১০ নম্বর জার্সি। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো মানেই ৭। এলএম১০, সিআর৭ নামে পরিচিত হয়েছেন তাঁরা। কিন্তু একটা সময় পর্যন্ত ফুটবলারদের জার্সিতে কোনও নম্বরই থাকত না। কী ভাবে এই নম্বরের আবির্ভাব?
১৯ শতকে ইংল্যান্ডে ক্লাব ফুটবল জনপ্রিয়তা পায়। সেই সময় জার্সিতে কোনও নম্বর থাকত না। মাঠে কোন পজিশনে একজন ফুটবল খেলছেন সেই দিয়েই চিহ্নিত করা হত তাঁকে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দলগুলি ২-৩-৫ ফর্মেশনে খেলত। দু’জন ফুলব্যাক, তিন জন হাফব্যাক এবং পাঁচ জন ফরওয়ার্ড। সেই সময় ফুটবলে পরিবর্ত খেলোয়াড় নামানোর নিয়ম ছিল না।
১৯২৮ সালে অগস্ট মাসে প্রথম ফুটবলারদের জার্সিতে নম্বর দেখা যায়। আর্সেনাল এবং চেলসির ফুটবলারদের জার্সিতে প্রথম নম্বর দেখা গিয়েছিল। ১৯৩৭ সাল অবধি ইংল্যান্ডের জাতীয় দলের জার্সিতেও কোনও নম্বর ছিল না। সেই ম্যাচে ওসলোকে ৬-০ গোলে হারিয়েছিল ইংল্যান্ড।
১৯৩৯ সালে ফুটবল লিগ ম্যানেজমেন্ট কমিটি ঠিক করে প্রতিটি ক্লাবের ১১জন ফুটবলারের জার্সিতে নম্বর থাকবে। ১৯৬৫ সাল অবধি পরিবর্ত নামানোর নিয়ম আসেনি বলে ১ থেকে ১১ অবধিই নম্বর থাকত ফুটবলারদের। এর পর একজন ফুটবল পরিবর্ত হিসেবে নামানোর নিয়ম হলে তাঁকে ১২ নম্বর জার্সি দেওয়া হয়। দ্বিতীয় পরিবর্ত নামানোর নিয়ম আসে ১৯৮৭ সালে। তাঁর জার্সি নম্বর হয় ১৪ । ১৩ সংখ্যাটিকে অপয়া ধরা হত।
প্রথম একাদশের খেলোয়াড়দের মধ্যে গোলরক্ষক পরতেন ১ নম্বর জার্সি। রাইট ব্যাক ২ নম্বর, লেফট ব্যাক ৩ নম্বর। এমন ভাবে পর পর নম্বর দেওয়া হত ২-৩-৫ ফর্মেশনে থাকা দলকে। লেফট উইঙ্গারের জার্সি নম্বর হত ১১।
৪-৪-২ ফর্মেশনে খেলা শুরু হতে যদিও এই ভাবে জার্সি নম্বর করা মুশকিল হয়। সব দেশের পরিকল্পনাও সমান নয়, তাই জার্সি নম্বর দিয়ে ফুটবলারের পজিশন বোঝা আরও কঠিন হয়ে যায়। এই ঘটনার সব চেয়ে বড় উদাহরণ ১৯৫৩ সালে হাঙ্গেরি বনাম ইংল্যান্ড ম্যাচ। সেই ম্যাচে হাঙ্গেরি রক্ষণ ভাগের ফুটবলারদের ২ থেকে ৪ নম্বর জার্সি পরে নামায়। মিডফিল্ডে ছিল পাঁচ জন ফুটবলার। বুঝতে অসুবিধায় পড়ে ইংল্যান্ড। ৬ গোল খায় তারা জার্সি নম্বর বুঝতে না পেরে।
১৯৭৮ সালের বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা দল তাদের ফুটবলারদের জার্সি নম্বর করেছিল ইংরেজি বর্ণমালা অনুযায়ী। মিডফিল্ডে খেলা আলান্সো নরবেরতো পরেছিল ১ নম্বর জার্সি। সাধারণত যে জার্সি নম্বর দেখা যেত গোলরক্ষকদের গায়ে।
১৯৯৩ সালে জার্সি নম্বরের পুরনো নিয়ম বদলে দেয় ইংল্যান্ড। নতুন নিয়মে দলের প্রতিটি ফুটবলারের জার্সি নম্বর নথিভুক্ত করা হয়। সেই নম্বর পরেই পুরো মরসুম খেলতে হবে ফুটবলারকে। এর ফলে জার্সি নম্বর দিয়েই সেই ফুটবলারকে চিনতে শুরু করে বিশ্ব।